বিদ্বেষ বিষ নাশো

 বিদ্বেষ বিষ নাশো
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

সব মানুষ এক হয়ে গেলে বন্ধন ভেঙে আলাদা করা কঠিন।ভারতের মতোএত বিশাল বৈচিএময় দেশে বিভিন্ন সময়েই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় মানুষকে।তবুও বৈচিএের মধ্যে ঐক্য এটাই ভারতের প্রানের স্পন্দন।জাতি,ধর্ম,ভাষা, সংস্কৃতি,পোশাক, বর্ণ এত বৈচিত্র হয়তো দুনিয়াজোড়া কোথাও নেই।তাই এদেশে সহনশীলতা যেমন বেশি, তেমনি পার্থক্য ও স্বতন্ত্রতাও বেশি।তবুও এদেশে উৎসবের সময়, উদ্যাপনের সময় যেমন একে অপরকে বুকে টেনে নেয়। তেমনি অশ্রুঝরা দুঃখের মুহূর্তগুলোতেও প্রতিবেশীকে একা ফেলে নিজেকে রক্ষা করার চিন্তা করে না।গত পাঁচদিন ধরে উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রতিবেশী ছোট্ট রাজ্য মণিপুরে যে হিংসার আগুনে- অগণিত প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে অগণিত মানুষ ছিন্নমূল হয়ে গেছেন হিংসার আগুনে- সেই পরিস্থিতির যেন আর অবনতি না হয়,হিংসা যেন সহসাই মুখ থুবড়ে পড়ে এই মুহূর্তেই এটাই গোটা দেশবাসীর মনের আর্জি।যদিও গত পাঁচদিন ধরে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠার মুহূর্তগুলো কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে মণিপুর। রাজধানী ইম্ফল সহ বেশ কিছু স্থানে দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে।ভয় সরিয়ে একটু একটু করে রাস্তায় বেরুচ্ছেন মানুষ। কিন্তু জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও উপাসনাস্থলে যে অশান্তির বিষ ছড়ানো হয়েছে তা যাতে আর পার্শ্ববর্তী কোথাও বিস্তার লাভ না করে সেটা নিশ্চিত করাই সরকারের প্রাথমিক কর্তব্য।একটা কথা এখানে খুব পরিষ্কার, মানব সভ্যতার ইতিহাসে অস্তিত্ব বা পরিচয়ের সঙ্কট যখন তীব্র আকার নেয় এবং এই সঙ্কটকে সমাধানের পরিবর্তে আরও বেশি করে অবহেলা তৈরি হয়,তখনই কোনও বিরোধের জন্ম নেয়।এটা যুগ যুগ ধরে ইতিহাসের শাশ্বত সত্য।মনিপুরের ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হয়নি।বলা হচ্ছে,গত বুধবার মণিপুর অল ট্রাইবেল স্টুডেন্টস ইউনিয়নের একটি মিছিলকে ঘিরেই হিংসার সূচনা। আসলে মণিপুরের পাহাড়ি এলাকাগুলোতে একটি নির্দিষ্ট জাতি গোষ্ঠীর পরিচিতিকে ঘিরে উদ্ভূত বিতর্কের জেরেই এই অস্থিরতা। জনসংখ্যার নিরিখে মেইতেই সম্প্রদায় মণিপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ গোষ্ঠী।এই মেইতেই গোষ্ঠীকে এসটি হিসাবে স্বীকৃতি দাবিতে তারা আন্দোলন করছিল দীর্ঘদিন ধরে।যদিও মণিপুরের অন্যান্য সব সম্প্রদায় মেইতেইদের এসটি স্বীকৃতি দাবির তীব্র বিরোধী। সম্প্রতি হাইকোর্ট মেইতেইদের দাবি বিচার বিশ্লেষণ করা সম্পর্কে রাজ্য সরকারের পর্যবেক্ষণ ও অবস্থান জানতে চেয়েছিল।আর এখান থেকেই শুরু হয় সমস্যা। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, মেইতেইর বলছেন তারা রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় হওয়া সত্ত্বেও তারা দিনের পর দিন অস্তিত্বের সঙ্কটে।কারণ তাদের জনসংখ্যা কমছে।আর এজন্য তাদের সমস্ত ক্ষোভ কুকিদের উপর।কিন্তু যে প্রশ্নটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, রাজ্যে একটি সরকার ক্ষমতাসীন থাকা সত্ত্বেও কী করে পরিস্থিতি মুহূর্তে হিংসার আগুনে পর্যবসিত হোল।এখানে সরকারের তৎপরতার সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণের অভাবের যেমন অভিযোগ উঠেছে,তেমনি গত মার্চ মাসে মণিপুরে মাদকের বিরুদ্ধে সরকারী অভিযানের নামে বেছে বেছে কুকিদের গ্রামে গিয়ে তল্লাশি,হানাদারি এবং উচ্ছেদের মতো ঘটনা ঘটেছে। আর এটাই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে হিংসা আর বিদ্বেষের মাত্রাকে আরও উত্তপ্ত করেছে বলে অভিযোগ।অভিযোগ যে একেবারে সাদামাটা সেরকম নয়।খোদ শাসকদলের একাংশ উপজাতি বিধায়কও জঙ্গল সুরক্ষার নামে বিদ্বেষমূলকভাবে একটি গোষ্ঠীকে পাহাড় থেকে উচ্ছেদ করেছে বলে সরকারের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে।এই অভিযোগের তির যে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর দিকে সেটাও কারও কাছে অজ্ঞাত নয়।বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই শাসকদল অভ্যন্তরে দলীয় নেতৃত্ব পরিবর্তনের বিষয় নিয়েও অসন্তোষের আগুন ছিল। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা গ্রহণের পরিবর্তে সরকার এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট জাতি গোষ্ঠীর পক্ষ নেওয়ায় পরিস্থিতি হিতে বিপরীত হয়েছে- একথা অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই। একদিকে জাতি সংঘাত, তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে স্থানীয় আবেগ। কিন্তু এই জটিল সঙ্কটের মধ্যে দাঁড়িয়ে সরকারের যেখানে কর্তব্য ছিল বিতর্কে না জড়িয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখা৷তা না করে অশান্তির আগুনে সরকারের কিছু অসতর্ক পদক্ষেপ গোটা পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলেছে।এখন সরকার সুশাসনের কোন্ মলম দিয়ে সঙ্কট থেকে পরিত্রাণের রাস্তা খোঁজেন সেটাই বড় প্রশ্ন ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.