বিদ্যুতে ছুটি বাতিল, উৎসবে অক্ষুণ্ণ থাকবে পরিষেবা : রতন।
অনলাইন প্রতিনিধি :-আসন্ন শারদোৎসবে গোটা রাজ্যে একেবারে দীপাবলি পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা বহাল থাকবে। সেই লক্ষ্যে শুক্রবার আগরতলা প্রজ্ঞা ভবনে সারা রাজ্যের বিদ্যুৎ দপ্তর ও বিদ্যুৎ নিগমের সমস্ত শীর্ষ আধিকারিক ও ইঞ্জিনীয়ারদের নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করলেন বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ।
বৈঠকে সমস্ত আধিকারিক এবং ইঞ্জিনীয়াররা উৎসবের দিনগুলিতে গোটা রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা অক্ষুণ্ণ রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেইমতো যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে বলে বৈঠকে আধিকারিকরা আশ্বস্ত করেছেন। বড় ধরনের কোনও যান্ত্রিক বিপর্যয় অথবা প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে উৎসবের এই মাসে গোটা রাজ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা। সেদিকে লক্ষ্য রেখে মহালয়া থেকে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত, বিদ্যুৎ দপ্তর ও বিদ্যুৎ নিগমের একেবারে শীর্ষস্তর থেকে সমস্ত কর্মীর ছুটি বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এই সময়ে দপ্তর ও নিগমের কর্মীরা পালা করে চব্বিশ ঘন্টা দায়িত্ব পালন করবেন। পর্যালোচনা বৈঠকে বিদ্যুৎমন্ত্রী সমস্ত কর্মীদের ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি একেবারে মিশন মোডে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। কেননা, উৎসবের এই মরশুমে সবথেকে বড় ভূমিকা থাকে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীদের। দায়িত্ব পালনে যাতে কোথাও ত্রুটি বা গাফিলতি না থাকে, এর জন্য আধিকারিকদের তীক্ষ্ণ নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
পর্যালোচনা বৈঠকশেষে সাংবাদিক সম্মেলনে বিদ্যুৎমন্ত্রী বিস্তারিত তুলে ধরে পুজো উদ্যোক্তা এবং গোটা রাজ্যবাসীর প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানান। তিনি প্রথমেই বলেন,উৎসবের প্রাক প্রস্তুতির জন্য আগামী ১০ অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় প্রয়োজনভিত্তিক পাওয়ার কাট চলবে। ১০ অক্টোবরের পর থেকে আর পাওয়ার কাট হবে না, বড় কোনও বিপর্যয় না হলে। তিনি বলেন, ২০২১ সালে পিক আওয়ারে সপ্তমীর সন্ধ্যায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৩২৬.৬০ মেগাওয়াট।এরপর ধীরে ধীরে চাহিদা কমে এসেছে।২০২২ সালে পঞ্চমীর সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ চাহিদা রেকর্ড হয়েছে ৩৩২.৭০ মেগাওয়াট। এ বছর ধারণা করা হচ্ছে চাহিদা হবে ৩৮০ মেগাওয়াট। মন্ত্রী বলেন, আমাদের হাতে এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ আছে ৩০০.৩০ মেগাওয়াট।বাকি বিদ্যুৎ আমরা নানাভাবে ব্যবস্থা করবো।বাংলাদেশের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। উৎসবের দিনগুলিতে আমরা বাংলাদেশকে কিছু বিদ্যুৎ কম সরবরাহ করবো।তাছাড়া রুখিয়ায় বন্ধ থাকা একটি ইউনিট আমরা খুব শীঘ্রই পুনরায় চালু করতে পারবো আশা করছি।এ ব্যাপারে আগামী ৫ অক্টোবর দিল্লীতে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকে বৈঠক হবে। তৃতীয় ইউনিটটি চালু হলে সেখান থেকে আমরা আরও ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাব।এছাড়াও নিপকো, কাঁঠালগুড়ি, লোকতাক, বঙ্গাইগাঁও, ওটিপিসি, পালাটানা এমন আরও কয়েকটি জায়গা থেকেও বিদ্যুৎ আনবো। মোদ্দা কথা, বিদ্যুৎ জোগানে কোনও ঘাটতি থাকবে না।মন্ত্রী বলেন, আমাদের সমস্ত সাবস্টেশন, ১১ কেভি লাইন, এলটি লাইন সব ঠিকঠাক করে নেওয়া হয়েছে। আগরতলা সেন্ট্রাল স্টোর থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর পরিমাণে ট্রান্সফর মজুত রাখা হয়েছে। মজুত রাখা হয়েছে আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও স্পেয়ার পার্টস, ক্যাবল, ট্রান্সফর ওয়েল সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। প্রয়োজনীয় লোক নিয়োগ (অস্থায়ী) এবং পর্যাপ্ত গাড়ি নিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমস্যা হলেই যেন সাথে সাথে তা মেরামত করা যায়।
সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রী রাজ্যের সমস্ত পুজো উদ্যোক্তাদের প্রতি বিনম্র আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, পুজো উদ্যোক্তারা যেন সঠিকভাবে আগে থেকেই লোড ম্যানশন করে দপ্তরকে জানিয়ে দেয়।যাতে প্রয়োজনে ট্রান্সফরমার ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায়। প্যান্ডেলগুলিতে অস্থায়ী সংযোগ যাতে সঠিকভাবে করা হয়। যতগুলি সংযোগ লাগবে ততগুলিই দেওয়া হবে। কিন্তু আবেদন যাতে সঠিকভাবে হয়।কোনও অবস্থাতেই বিদ্যুৎ চুরি যাতে না হয়।অর্থাৎ কেউ যেন হুক লাইন লাগিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে।এতে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে। একজনের জন্য অন্যদের বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। বড় বড় ক্লাবগুলি যেখানে দর্শনার্থীর ভিড় বেশি হয়, ওইসব পুজো উদ্যোক্তারা যেন বিকল্প হিসাবে জেনারেটরের ব্যবস্থা রাখে। তৎক্ষণাৎ কোনও সমস্যা হলে যাতে তা এড়ানো যায়। তাছাড়া, প্রতিমা বিসর্জনের আগে যে সড়ক ধরে বিসর্জনে যাবে তা যেন আগে থেকেই বিদ্যুৎ দপ্তরকে জানানো হয়। এই কয়েকটি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী। তিনি আশা ব্যক্ত করেন, উৎসব প্রতিবছরের মতো এ বছরও আনন্দমুখর হয়ে উঠবে।