বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে আমূল সংস্কারে কেন্দ্রীয় সাহায্য চাইলেন রতন!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্যুৎ মন্ত্রীদের সম্মেলনে রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর আমূল সংস্কার এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী রতন লাল নাথ।সম্মেলনে উপস্থিত কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রীর রতন লাল নাথ জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ২০২২ সাল পর্যন্ত গেইল থেকে যে গ্যাস কেনা হতো তা ছিল ডলার ২.৯০ পার এমএমবিটিইউ। যার মধ্যে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য ৪০ শতাংশ সাবসিডি পাওয়া যেত।ফলে গ্যাসের মূল্য পড়তো ডলার ১.৭৪ পার এমএমবিটিইউ। কিন্তু ২০২২ সাল থেকে তা বেড়ে গিয়ে ৬.১০ পার এমএমবিটিইউ হয়ে যায়। বর্তমানে এই গ্যাসের দাম ডলার ৬.৫০ পার এমএমবিটিইউ হয়ে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের কাছে এবং কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের কাছে গ্যাসের এই দাম হ্রাস করার বিষয়টি বিবেচনায় রাখার জন্য অনুরোধ জানান মন্ত্রী।

একই সঙ্গে তিনি ত্রিপুরায় একটি স্টেট অব আর্ট ট্রেনিং সেন্টার স্থাপনের জন্য পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়াকে এনইআরপিএসআইপি প্রজেক্টে সিবিআইএস কম্পনেট বিবেচনার অনুরোধ জানালে, বৈঠকে ত্রিপুরা এবং নাগাল্যান্ডকে বিশেষ তহবিল প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিদ্যুৎ মন্ত্রী বলেন, সূর্যমণিনগরে ৪০০ কিলো ভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন সাবস্টেশন নির্মানের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তার যাবতীয় খরচ কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রককে বহন করার অনুরোধ জানান।
পাশাপাশি ২০৩০ সাল পর্যন্ত ত্রিপুরার ইন্ট্রা স্টেট ট্রান্সমিশন রিকোয়ারমেন্ট, যার খরচ প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা,তা বহন করার জন্য কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের কাছে অনুরোধ জানান রাজ্যের মন্ত্রী।


একই সঙ্গে পাওয়ার সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট ফান্ড পুনরায় উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে চালু করার জন্য রাজ্যের তরফে মন্ত্রী যে অনুরোধ উত্থাপন করেছেন, ‘সেই সম্পর্কে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।এ বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বিবেচনা করবে কেন্দ্র।
রাজ্যের লংতরাই মহকুমায় ন্যাশনাল হাইড্রো পাওয়ার কর্পোরেশনের তরফে যে পাম্প স্টোরেজ স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এ বিষয়টি উত্থাপন করে মন্ত্রী বলেছেন, এই প্রজেক্টের পিএফআর এবং ডিপিআর তৈরির কাজ চলছে।৮০০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই পাম্প স্টোরেজের কাজ দ্রুত শেষ করার বিষয়টিও কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রীর দৃষ্টিতে এনেছেন রতন লাল নাথ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রীদের এই সম্মেলনে ত্রিপুরা ছাড়াও মিজোরাম, মণিপুর, আসাম, মেঘালয় এবং নাগাল্যাণ্ডের বিদ্যুৎমন্ত্রীদের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের আধিকারিক, বিভিন্ন পিএসইউ এর আধিকারিক এবং ত্রিপুরা সহ বিভিন্ন রাজ্যের আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রী শ্রীনাথ আরও বলেন, ওএনজিসির ত্রিপুরার ক্ষেত্রগুলি থেকে গ্যাস সরবরাহের বিশাল ঘাটতি এ রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদনকে বেশ সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। গ্যাসের অপ্রতুলতায় রাজ্যের বিদ্যুৎ উৎপাদন যখন বিঘ্নিত হচ্ছে, তখন অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে খোলা বাজার থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করে রাজ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হচ্ছে।ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেড এক্ষেত্রে বিশাল ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে।পাশাপাশি রাজ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ যেভাবে বাড়ছে,তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন,এখন সাশ্রয়ী মূল্যের বিদ্যুতের হার টিকিয়ে রাখাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।অথচ রাজ্যের জনগণের কথা মাথায় রেখে এটা রাখাও জরুরি।কিন্তু এপিএম ব্যবস্থার অধীনে গ্যাসের মূল্য যেভাবে বাড়ছে, তা পুনর্বিবেচনার জন্য কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের সহযোগিতা চেয়ে এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রীর সহৃদয় দৃষ্টি প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।এরপরেও ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেড বিদ্যুৎ খাতে স্থিতিশীল উন্নয়ন এবং টেকসই পরিষেবা প্রদানে সমর্থ হবে বলে আশা প্রকাশ করে তিনি এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ‘বিদ্যুৎমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরের সার্বিক সহযোগিতা চেয়েছেন।সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রী আরও বলেন, এই মুহূর্তে ত্রিপুরায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ৩৬০ মেগাওয়াট। প্রতিদিন বাংলাদেশে ৯০ মেগাওয়াট থেকে ১৬০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ রপ্তানি হচ্ছে।এ রাজ্যের ভৌগোলিক এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করে মন্ত্রী এদিন রাজ্যের বিদ্যুৎ পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র সরকার এবং বিদেশি সংস্থার অর্থ সাহায্যের নির্ভরতার কথাও জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ত্রিপুরা বিদ্যুৎক্ষেত্রে ২২৭৫ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা পেয়েছে।বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থাপনাকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের গুণগত মান বৃদ্ধিতে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের সঙ্গে চুক্তি সাধিত হয়েছে। আরডিএস এস প্রকল্প এবং পিএম জনমন প্রকল্পে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি সহ রাজ্যের দুর্বলতর জনজাতি গোষ্ঠীগুলির মধ্যে বিদ্যুৎ প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।ইতিমধ্যেই দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনা, সৌভাগ্য এবং আইপিডিএস এর মতো জাতীয় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১০০% বিদ্যুতায়নের সফলতা অর্জিত হয়েছে।রাজ্যের বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে উত্তর-পূর্ব আঞ্চলিক পাওয়ার সিস্টেম ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করা হয়েছে। পুনর্নবীকরণ শক্তির দিকে তাকিয়ে ত্রিপুরা পিএম ডিভাইন এবং পিএম কুসুম প্রকল্পগুলোর অধীনে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মাইক্রোগ্রিড সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং সোলার স্ট্রিটলাইটিং সিস্টেম। এমনকী সরকারী ভবনগুলোর ছাদের উপরে সোলার প্যানেল বসিয়ে বিদ্যুৎ
সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের গোটা বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় এক আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসার কথা জানিয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেছেন, এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দেশের বর্তমান বিদ্যুৎমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরের মতো জনদরদি মন্ত্রী নিশ্চিতভাবেই এ রাজ্যের মানুষের নিরন্তর বিদ্যুৎ পরিষেবা পাবার ক্ষেত্রে এক বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবেন। গুয়াহাটির অভিজাত এক হোটেলে আয়োজিত কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রীদের এই সম্মেলনে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী সহ আধিকারিকরা অংশ নিয়েছেন।এ অনুষ্ঠানে রাজ্যের বিদ্যুৎ সচিব অভিষেক সিং,ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেডের ব্যবস্থাপক অধিকর্তা বিশ্বজিৎ বসু,জিএম,টিপিটিএল শ্রী রঞ্জন দেববর্মা সমেত অন্যান্য আধিকারিকারও উপস্থিত ছিলেন।

Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

15 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

16 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago