বিদ্যুৎ নিগমে জ্বলছে লালবাতি জুন মাসে বিল জমা মাত্র ৪০%!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-আগামীদিনে রাজ্যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ, অক্ষুণ্ণ থাকবে কিনা? এই নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠে গেছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ নিগমের বিশ্বস্ত সূত্র থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা জানলে শুধু চোখই কপালে উঠবে না, বিদ্যুৎ নিগম এখনও বেঁচে আছে কি করে, সেটাই এখন সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।সূত্রের দাবি রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমে বহু আগেই লালবাতি জ্বলে গিয়েছে। একমাত্র রাজ্য সরকারের সাহায্য ও সহযোগিতার কারণে এখনও বিদ্যুৎ নিগম আইসিইউ-তে কোনওরকম শ্বাসপ্রশ্বাস নিচ্ছে।এর পেছনে প্রধান এবং একমাত্র কারণ হচ্ছে ভোক্তাদের বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের পাহাড়।আর এই পাহাড় এতটাই বিশাল আকার ধারণ করেছে যে, নিগম এই পাহাড় কেটে সমান করা তো দূরের কথা, কোনও কুল কিনারাই পাচ্ছে না। এককথায় পরিস্থিতি ভয়ানক।
নিগমের বিশ্বস্ত সূত্র থেকে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে রাজ্যে মাত্র গড়ে ৪০ শতাংশ ভোক্তা বিদ্যুৎ বিল প্রদান করছে।৬০ শতাংশ ভোক্তা বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও,তারা বিদ্যুৎ বিল দেয় না।শহর থেকে গ্রাম, সমতল থেকে পাহাড়, সর্বত্র একই ছবি। বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে অর্থাৎ লাইন কেটে দিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না। লাইন কেটে দেওয়ার পর কিছু ভোক্তা বকেয়া বিলের একটা অংশ পরিশোধ করলেও, ক’দিন বাদে আবার পূর্বের অবস্থানে ফিরে যায়। বাকিরা হুকলাইন লাগিয়ে বিদ্যুৎ চুরি করে চলেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুৎ নিগমের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। রাজ্য সরকার পাশে না থাকলে নিগমের ঝাঁপ কবেই বন্ধ হয়ে যেতো। আর এর জন্য সমস্যায় পড়েছে বৈধ ভোক্তারা। যে ৪০ শতাংশ ভোক্তা প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিল সময়মতো পরিশোধ করছে, তাদের উপরে এর প্রভাব পড়ছে।সবথেকে ভয়ানক অবস্থা হচ্ছে, বিদ্যুৎ ব্যবহার করার পরও যারা বিল দেয় না, বিদ্যুৎ না থাকলে তারাই সবথেকে বেশি ক্ষুব্ধ হয়। বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ অফিসে ভাঙচুর করে। এমনকি বিদ্যুৎ কর্মীরা পর্যন্ত নিগৃহীত হয়।
চলতি বছরের গত জুন মাসের সর্বশেষ যে বিদ্যুৎ বিলের তথ্য পাওয়া গেছে তাতে দেখা যাচ্ছে, সারা রাজ্যে মাত্র গড়ে ৩৯.৮৭ শতাংশ ভোক্তা বিদ্যুৎ বিল জমা দিয়েছে।৬০ শতাংশের উপরে ভোক্তা জুন মাসে বিদ্যুৎ বিল জমা দেয়নি।জুন মাসেই বিদ্যুৎ নিগম ৮১,২০৮ জন ভোক্তার বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করেছে।সংযোগ ছিন্ন করার পর মাত্র ৭৯৬ জন ভোক্তা বকেয়া বিল জমা দিয়েছে।বিল জমা দেওয়ার হার মাত্র ০.৯৮ শতাংশ।তার মানে এক শতাংশও নয়। রাজ্যের ৮টি জেলায় বিদ্যুৎ নিগমের ৬৭টি ডিভিশন রয়েছে। এই ৬৭টি ডিভিশনে অ্যাক্টিভ বিদ্যুৎ সংযোগ অর্থাৎ ভোক্তা রয়েছে মোট ৬ লক্ষ ১২৪ জন। এই সংখ্যা সারা রাজ্যে সরকারী এবং আধা সরকারী অফিস ও প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে।এই ৬ লক্ষ ১২৪ জন ভোক্তার মধ্যে গত জুন মাসে সময়মতো বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেছেন মাত্র ২ লক্ষ ৩৯ হাজার ২৮৯ জন ভোক্তা। মোট ভোক্তার মাত্র ৩৯.৮৭ শতাংশ।জুলাই মাস শেষ হয়ে আগষ্ট মাস চলে আসছে, এখনও ৩ লক্ষ ৬০ হাজার ৮৩৫ জন ভোক্তা বিদ্যুৎ বিল জমা দেয়নি।
তার আগে বিদ্যুৎ বিল না দেওয়ার কারণে সারা রাজ্যে ৮১,২০৮ জন ভোক্তার বিদ্যুৎ সংযোগ সাময়িক ছিন্ন করে দেওয়া হয়।লাইন কেটে দেওয়ার পর মাত্র ৭৯৬ জন ভোক্তা বিল জমা দিয়েছে। ৮০,৪১২ জন ভোক্তার এখনও কোনও হেলদোল নেই।এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ৮০,৪১২ জন ভোক্তা কি গত দুই মাস ধরে অন্ধকারে আছে?উত্তর মোটেও না।এরা অবৈধ উপায়ে চুরি করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে।এটা শুধু একমাসের তথ্য।খবর নিয়ে জানা গেছে, এই অবস্থা প্রতিমাসেই চলছে।শুধু জুন মাসেই যে ভয়াবহ অবস্থার তথ্য উঠে এসেছে, তা রাজ্য বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ পরিষেবার জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। রাজ্যের আট জেলায় প্রতিটি বিদ্যুৎ ডিভিশন এবং সাব ডিভিশনগুলিতে কতজন ভোক্তা জুন মাসে বিল দেয়নি, তার পুরো তথ্য আমাদের কাছে এসেছে।পরবর্তী প্রতিবেদনে তা তুলে ধরবো। জানা গেছে, ভয়ানক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে নিগম বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।