বিদ্যুৎ যন্ত্রনা

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা আবারও আচমকা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক রাজ্যজুড়ে তাপমাত্রার অস্বাভাবিক পরিবর্তন তথা গরমের কারণেই রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা হঠাৎই বেড়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। গত বছর এমন দিনে গরমের সময় রাজ্যে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ৩১০ থেকে ৩১৫মেগাওয়াট। কিন্তু এবছর আচমকাই সেটা একলাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪০ মেগাওয়াট। মাত্র এক বছরের মধ্যে ত্রিপুরার মতো রাজ্যে হঠাৎ করে বিদ্যুতের চাহিদা ২৫-৩০ মেগাওয়াট বেড়ে যাওয়ার ঘটনা কোনভাবেই হেলাফেলার বিষয় নয়। রাজ্যজুড়ে প্রবল তাপপ্রবাহের জেরে এই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে বলা যায়। আবার চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের জোগান স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সমস্যাও দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। শুধু রাজধানী শহর আগরতলা নয়। শহরতলি থেকে শুরু করে রাজ্যের আটটি জেলাতেই বিদ্যুৎজনিত বিভ্রাটের কারণে জনগণের দুর্ভোগ বেড়েছে লাগামছাড়া। বলা হচ্ছে, প্রবল গরমের জেরে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পাখার ব্যবহারের পাশাপাশি বাতানুকূল যন্ত্রের ব্যবহারের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াতেই বিদ্যুতের চাহিদা একলাফে অনেকটা বেড়ে গিয়ে ট্রান্সফর্মার বিকল হয়েও সমস্যা আরও গভীরতর আকার নিচ্ছে। রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম রাজ্যে আচমকা বিদ্যুতের এর চাহিদা বেড়ে যাওয়া নিয়ে যতই ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্যরকম কথা বলছে। এখন না হয় তীব্র গরমের জ্বালায়, হঠাৎ করে বাড়িঘরে এসি, এয়ারকুলার সংযোগের কারণে এবং বৈদ্যুতিক শাখা বেশি পরিমাণে দিনের অধিকাংশ সময় কাজে লাগানো হচ্ছে বলে বিদ্যুতের চাহিদা অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। কিন্তু এর আগেও বছরের বাদবাকি দিনগুলোতে ‘নিরবচ্ছিন্ন’ বিদ্যুৎ পরিষেবা জারী রাখা এবং নিগমের তরফে সর্বক্ষণের বিদ্যুৎ জোগান নিয়মিত রাখা কি সব সময় সম্ভব হয়েছে?


এপ্রিল থেকে জুলাই, বছরের এই সময়টুকুতে সব সময়েই গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমের কারণে বিদ্যুতের চাহিদা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেকটা বেড়ে যায়। এই বছর প্রখর তাপমাত্রার কারণে মার্চ মাস থেকেই গরমের অনুভূতি অনেকটা আগেই অনুভূত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সমস্যা একদিনে হঠাৎ তৈরি হয়নি। সমস্যা যেমন গ্রাহকদের তরফে তৈরি হয়েছে। তেমনি দীর্ঘদিন ধরে সমস্যার পাহাড়ের উপর বসে থাকলেও নিগম তা নিরসনে যথার্থ সদর্থক পদক্ষেপ সঠিক সময়ে নেয়নি। এটা ঘটনা যে, গরমে এবার এসির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এয়ার কুলারের ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু নিয়ম মেনে অনেকেই এসির সংযোগ নিচ্ছেন না। ফলে নিগমের অজান্তেই বেড়ে যাচ্ছে লোড। এর জেরে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। কোথাও ট্রান্সফর্মার বিকল হচ্ছে। কিংবা বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা অতিরিক্ত লোভের কারণে মুখ থুবড়ে পড়ছে। এটা যদি ঘটনা হয়, পাশাপাশি এটাও সত্য যে, নিগমের ইঞ্জিনীয়ারা আননোন লোড সম্পর্কে যে যুক্তি দেখাচ্ছেন সেটাও হচ্ছে এক ধরনের দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা। লোড বুঝতে সি না পারাটা, আসলে নিজেদের অনেক ব্যর্থতা চাপা দেওয়ার কৌশল। নিগমের কাছে গ্রাহকরা তাদের বিদ্যুৎ ব্যবহারের যতটা হিসাব দেখান, তার চেয়ে অনেক ক্ষেত্রে বেশি বিদ্যুৎ তারা ব্যবহার করেন। এতে করে ট্রান্সফর্মার বসে যায়। এক্ষেত্রে নিগমের ফিল্ড স্টাফদের নজরদারি, কিংবা ট্রান্সফর্মারে মিটার বসিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সহজেই তারা এলাকা ভিত্তিতে চিহ্নিত করতে পারেন। আর তাছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর উপরও নজরদারি রাখা সম্ভব। সেচ বা কৃষি ক্ষেত্রে কতটা পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রয়োজন, সেই বিষয়টি যেহেতু দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে কাজে লাগানো হয়। সেক্ষেত্রে ক্ষুদ্র শিল্প ইউনিটগুলোকেও বিদ্যুৎ ব্যবহারের সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হলে পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ ব্যবহারের অস্বাভাবিক চাহিদা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। তেমনি সংস্কারের নামে বেহিসাবি ক্রয় এবং অপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মজুত বাড়িয়ে বছর বছর বাজেটের অর্থ নষ্ট করা হলেও বিদ্যুৎনির্ভর আবশ্যিক সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে সমস্যা দিন দিন বাড়ছে এবং গরমের সময়ে ভোক্তাদের দুর্ভোগ যখন চরমে উঠে তখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপকৌশল নেওয়া হয়। তাই ভবিষ্যতের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এখনই আগাম প্রস্তুতি দরকার।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

অর্থনীতির হাল-হকিকত

২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের প্রথম সাত মাসে প্রত্যক্ষ বিদেশি পুঁজি (ফরেন ডাইরেক্ট ইনথবর্ষের প্রথ বা এফডিআই) যা…

2 hours ago

রোমান লিপিকে স্বীকৃতির দাবিতে টি,এস,এফ এর বিক্ষোভ!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-দীর্ঘদিন ধরে টি,এস,এফ দাবি করে আসছে রোমান লিপি কে স্বীকৃতি দেওয়ার।বর্তমানে যে প্রশ্নপত্র…

2 hours ago

কেন্দ্রীয় রিপোর্টে প্রকাশ্যে এলো ত্রিপুরার শিক্ষার বেআব্রু চেহারা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-কেন্দ্রীয়শিক্ষা মন্ত্রকের সর্বশেষ রিপোর্ট এও ফুটে উঠলো ত্রিপুরার স্কুল শিক্ষা ব্যবস্থার বে-আব্রু চেহারা।…

2 hours ago

ত্রিপুরাকে শ্রেষ্ঠ রাজ্য বানাচ্ছে বিজেপি সরকার: সুশান্ত!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-প্রধানমন্ত্রীনরেন্দ্র মোদি সবকা সাথ সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াসের স্লোগান দিয়েছেন। আর…

2 hours ago

নি:শব্দে এগোচ্ছে চিন!!

প্রতিবেশী বাংলাদেশে গত ছয়মাস ধরে চলতে থাকা অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একেবারে নিঃশব্দে এগিয়ে…

1 day ago

নেতা-মন্ত্রীদের বারবার ঘোষণা সত্ত্বেও গ্রুপ ডি নিয়োগ হচ্ছে না!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-প্রতিশ্রুতি দিয়ে রক্ষা করছে না সরকার। জেআরবিটির মাধ্যমে গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ নিয়ে টালবাহানা…

1 day ago