বিধানসভায় অসংসদীয় শব্দ ব্যবহার,পুরো সেশন থেকে সাসপেণ্ড সুদীপ, পাশে থাকলো না কেউ।

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি || ত্রয়োদশ বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের প্রথমদিন নানা কারণেই ঘটনাবহুল হয়ে রইলো । পবিত্র বিধানসভায় সুদীপ রায় বর্মণের মতো একজন বরিষ্ঠ বিধায়ককে অভব্য আচরণ, অসংসদীয় ও অশোভনীয় শব্দবাক্য ব্যবহারের জন্য বাজেট অধিবেশনের পুরো সেশন থেকে সাসপেণ্ড হতে হয়েছে। অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন অধিবেশনের দ্বিতীয় বেলা ৫.১০ মিনিটে বিধায়ক শ্রীবর্মণকে হাউস থেকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেন। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, যাদবলাল নাথ ইস্যুতে বিরোধীরা সকলে একজোট হয়ে লড়াই করলেও দ্বিতীয়বার সুদীপবাবুর সঙ্গ দেননি কেউই।এমনকি তার দলের দুই বিধায়ক বীরজিৎ সিন্হা, গোপাল রায় – এই দুজনও সুদীপবাবুর পক্ষে একটি টু-শব্দ করেননি। শব্দ করেননি জিতেন্দ্র চৌধুরী থেকে শুরু করে সিপিএমের অন্য বিধায়করা এবং বিরোধী দল তিপ্রা মথার বিধায়করাও। মোদ্দাকথা, সুদীপ বর্মণের পক্ষে একজনও দাঁড়াননি।শুক্রবার বিধানসভায় সিপিএম বিধায়ক সুদীপ সরকার একটি জনস্বার্থ বিষয়ক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবটি ছিলো ‘রাজ্যের সার্বিক বিকাশের স্বার্থে, এডিসির হাতে অধিক ক্ষমতা ও অর্থ প্রদানের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত The Constitution (125th Am- mendment) Bill 2019 অবিলম্বে সংসদে পাস করার জন্য ত্রিপুরা বিধানসভা, কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছে’।এই প্রস্তাবের সমর্থনে আলোচনায় অংশ নিয়ে সুদীপবাবু বলেন, রাজ্যের জনজাতিদের বিকাশের জন্য যদি কেউ কিছু করে থাকে সেটা হচ্ছে কংগ্রেস। এই বলে সুদীপবাবু প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। ততক্ষণ পর্যন্ত সভা শান্তই ছিলো। কিন্তু পরবর্তীকালে সুদীপবাবু এডিসি সংক্রান্ত একটি আইনের উল্লেখ করে বক্তব্য রাখছিলেন। এরই মধ্যে ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করে বলেন, হাউসকে — বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। সুশান্তবাবুর প্রতিবাদের পর সুদীপবাবু অধ্যক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, স্যার একটি গল্প বলি। তিনি বলেন, বাড়িতে কুকুর থাকলে মালিক ডেকে, মালিক থাকলেও অন্য কেউ বাড়িতে গেলে কুকুর ঘেউ ঘেউ করে। এমনই চলছে বিধানসভায়। সকাল থেকে যেভাবে ঘেউ ঘেউ শুনছি তাতে আমার ওই গল্পের কথা মনে পড়ছে।সুদীপবাবুর এই কটুক্তির পর তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে ট্রেজারি বেঞ্চ। সুশান্ত এবং সুদীপবাবু এমনভাবে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে যান, যা এককথায় নজিরবিহীন। দুই জনের মধ্যে প্রায় দশ মিনিট ইংরেজিতে তুমুল উচ্চস্বরে বাক্যবিনিময় চলতে থাকে। তাতে শামিল হন মুখ্য সচেতক কল্যাণী রায়, রতনলাল নাথ, সুধাংশু দাস, প্রাণজিৎ সিংহরায় থেকে আরও অনেকে। প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়েন সুদীপবাবু। একদিকে গোটা ট্রেজারি বেঞ্চ, অন্যদিকে সুদীপ বাবু একা। কল্যাণী রায়কে বারবার উচ্চস্বরে বলতে শোনা যায়, বিরোধী দলনেতা আপনি কী সমর্থন করেন এই বক্তব্য? সুদীপবাবুর এই বক্তব্যের জন্য আপনারাও সমান দায়ী। ততক্ষণে সভায় তুমুল হৈচৈ চলছে। ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরা সুদীপবাবুকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করার এবং নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানাতে থাকে। অধ্যক্ষ সুদীপবাবুকে নিন্দা জানিয়ে তার সমস্ত অসংসদীয় বক্তব্য বিধানসভায় কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তাতেও ক্ষান্ত হননি সুশান্ত, সুধাংশু, কল্যাণী রায়রা। রতনলাল নাথ সুদীপবাবুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘হায়রে সুদীপ তোমার জন্য চিন্তা হয়। কোথায় নিয়ে যাচ্ছ নিজেকে। রাজ্যের মানুষ তোমাকে ক্ষমা করবে না। ক্ষমা তোমাকে চাইতেই হবে।এরপর অধ্যক্ষ বলেন, সুদীপবাবু আপনি আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করুন এবং নি:শর্ত ক্ষমা চান। নতুবা আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো। কিন্তু সুদীপবাবু তার অবস্থানে অন থাকেন। এভাবে বিতর্ক চলতেই থাকে। শেষে মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা দাঁড়িয়ে বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণের এই অশোভনীয় আচরণ এবং অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করার জন্য তীব্র নিন্দা জানান এবং শ্রীবর্মণকে বিধানসভার পুরো সেশনের জন্য সাসপেণ্ড করার প্রস্তাব করেন। অধ্যক্ষ সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে সুদীপ বর্মণকে পুরো সেশনের জন্য বহিষ্কার করেন। এরপর সুদীপবাবু তীব্র অসন্তোষ নিয়ে সভা থেকে বেরিয়ে যান। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, এই পুরো ঘটনায় সিপিএম, মথা কেউই তার সঙ্গ দেয়নি। এমনকি তার নিজ দলের বিধায়করাও সঙ্গ দেয়নি। শুধু তাই নয়, বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের প্রথমদিন যেভাবে পবিত্র বিধানসভায় অসংসদীয় শব্দ ব্যবহার হয়েছে, যেভাবে গালিগালাজ থেকে ব্যক্তি আক্রমণ হয়েছে তা এককথায় নজিরবিহীন। জনগণের ভোটের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের এই ধরনের আচরণ কতটা সংসদীয় তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে।

Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

18 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

18 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago