জিবি হাসপাতালে ক্যান্টিন ভাড়ার ১ কোটি টাকা কোষাগারে জমা পড়েনি!!
বিধানসভায় নজিরবিহীন বাগ্বিতণ্ডা,দিশাহীন কসমেটিক লাগানো বাজেট, বিধানসভায় জিতেন্দ্র!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সোমবার রাজ্য
বিধানসভায় আরও এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলো।বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় রাজ্য সরকারের ত্রুটি, বিচ্যুতি, ঘাটতি এবং ব্যর্থতাগুলি তুলে ধরে সমালোচনার কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর বিস্তর সুযোগ পেয়েও, সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারলেন না বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী। যতটুকু বলার ঠিক ততটুকুই বলে মেজাজ হারিয়ে রণে ভঙ্গ দিতে হলো। আর এটাকেই হাতিয়ার করে রাজনৈতিক ফায়দা তুললো শাসক দল।

সোমবারও বিধানসভার দ্বিতীয় বেলায় শাসক-বিরোধী বাক বিতণ্ডায় উত্তপ্ত হয়েছে অধিবেশন। আলোচনার সময় নির্ধারণ নিয়ে একসময় সভা উত্তপ্ত হয়ে উঠে। অধ্যক্ষ বিরোধী দলনেতাকে তাঁর আলোচনা শেষ করার জন্য বললেন, এই নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক।এই বিতর্ক এক সময় এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, পরিষদীয় মন্ত্রী রতনলাল নাথ অধ্যক্ষকে হাতজোড় করে বলেন, আজকের পুরো সময় জিতেন্দ্রবাবুকে দিয়ে দিন। আজ আমরা কেউ বক্তব্য রাখবো না। আজ পুরোটা সময় বিরোধীদের জন্য দিয়েদিন।দেখি জিতেনবাবুর কত স্টক আছে।তিনি যখন ক্লান্ত হয়ে বসে পড়বেন এবং বলবেন আমার বক্তব্য এখানে শেষ করছি।এরপর সময় থাকলে আমরা বলবো।জিতেন্দ্রবাবুরা তো সব সময় অভিযোগ করেন, বিধানসভায় তাদের বলতে দেওয়া হয় না। আজ বলুন,যতক্ষণ পরবেন, আপনার যা যা স্টকে আছে-সব বলুন। আপনাকে কেউ ডিস্টার্ব করবে না। আপনাকে আজ আমরা ছাড়বো না।
এর আগে,আলোচনা করতে গিয়ে বিরোধী নেতা বলেন,সামগ্রিক বিকাশ আমরাও চাই। কিন্তু এই বাজেটে সামগ্রিক বিকাশের কিছুই নেই। একে কসমেটিক, স্নো-পাউডার দেওয়া বাজেট বলা যায়। এই প্রসঙ্গে জিতেন্দ্রবাবু দেশের অর্থনীতির অবস্থা তুলে ধরে বলেন, মোদি সরকারের আগে দেশের জিডিপি ছিল ৬.৪ শতাংশ। এখন সেটা নেমে হয়েছে ৫.১ শতাংশ। দেশের প্রতিটি সেক্টরের আজ খারাপ অবস্থা। ২০১৪ সালের আগে ১ ডলারে ভারতীয় মুদ্রা ছিল ৫৯.৬৫ টাকা। এখন ১৬ ডলারে ৮৭.০৪ টাকা।টাকা মূল্য কমে গেছে। বিদেশি বিনিয়োগ অন্যদেশে চলে যাচ্ছে। তাহলে দেশের অর্থনীতি ভালো কোথায়? দেশে গরিবের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে ধনী আরও ধনী হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি ভালো চলছে না।স্লোগান যাই হোক না কেন, যে নীতিতে দেশ চলছে, সেই নীতিতে দেশের অর্থনীতি বিকশিত হচ্ছে না।কৃষি ও কৃষি সংক্রান্ত সেক্টরে আরও ভালো হওয়া উচিত ছিল।রেগায় বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।এতে গ্রামীণ অর্থনীতি মার খাবে। ফসল বিমা যোজনায় কৃষকদের ক্ষতিপূরণে দাবির সংখ্যা কত? এই যে আমাদের রাজ্যে বিধ্বংসী বন্যা হয়েছে, কতজন কৃষক ফসল বিমার অর্থ পেয়েছে। বাজেটে এর কিছুই উল্লেখ নেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্যের বেহাল অবস্থা। উচ্চ শিক্ষিত যুবক যুবতীরা গ্রুপ-ডি পদে চাকরির জন্য আবেদন করছে। মানব সম্পদ উন্নয়নে বাজেটে সঠিক কোনও পরিকল্পনা নেই। গত সাত বছরে কতজন কর্মচারী অবসরে গেছেন। কিন্তু নিয়োগ কোথায়। বিদ্যালয়গুলি শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। স্কুল বন্ধ হচ্ছে, শিক্ষক নিয়োগ হয় না। ২০১৮ সালে যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন, সেগুলো কবে পূরণ হবে। মানুষতো প্রত্যাশা নিয়ে বসে আছে। আপনারাইতো বলেছিলেন, ধলাইয়ের মেডিকেল কলেজ হবে, এইমস হবে। এগুলো কোথায়? বাজেটেও কিছু নেই। প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২০০ দিন কাজ ৩৪০ টাকা মজুরি করার প্রতিশ্রুতি তো আপনারাই দিয়েছিলেন। কর্মসংস্থানের বিষয়ে বাজেটে কিছুই উল্লেখ নেই। এভাবে আরও কিছুক্ষণ বক্তব্য রাখার পর অধ্যক্ষ জিতেন্দ্রবাবুকে আলোচনা শেষ করার জন্য বলেন। অধ্যক্ষের এই বক্তব্যের পরই জিতেন্দ্রবাবু তীব্র আপত্তি জানান। তিনি আরও সময় দেওয়ার জন্য বলেন। এই ভাবে বিতর্ক বাড়তে থাকে। এরপরও অধ্যক্ষ জিতেন্দ্রবাবুকে দুইবার পাঁচ মিনিট করে বলার সুযোগ দেন। জিতেন্দ্রবাবু আলোচনাও করেন। এরপরও জিতেনবাবু সময় চাইছিলেন। এই নিয়ে অধ্যক্ষের সাথে বিতর্ক বাঁধে। জিতেন্দ্রবাবু সহ সিপিএম বিধায়করা টেবিল থাপড়ে প্রতিবাদ করেন এবং ক্ষোভব্যক্ত করেন। এরপরই আসরে অবতীর্ন হন পরিষদীয় মন্ত্রী রতন লাল নাথ। তিনি জিতেন্দ্র চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, অশুভনীয় আচরণ করবেন না। এরপরই সভা উত্তপ্ত হয়ে উঠে। দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল বাক বিতন্ডা শুরু হয়ে যায়। এরপর রতন নাথ অধ্যক্ষকে হাতজোর করে বলেন, আজ জিতেন্দ্রবাবুই বলবে। আমরা আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছি কেউ বলবো না। এরপর আরও মিনিট দশেক চলে জিতেন্দ্র বাবু বক্তব্য শেষ করে দেন। জিতেন্দ্রবাবু বসতেই, ট্রেজারি বেঞ্চ থেকে মন্ত্রী রতন নাথ দাঁড়িয়ে বলেন, কি হলো আপনার স্টক শেষ। আপনি আরও বলুন। আমরা আজ আপনাকে ছাড়ছি না। রতনবাবুর এই কথায়, জিতেন্দ্রবাবু আবার দাঁড়িয়ে বলেন, হ্যাঁ বলবো-একমন্ত্রী এবং তাঁর পরিবার মাত্র দু’ বছর আগেও বিপিএল পরিবারের তালিকায় ছিল। মাত্র দুই বছরে ওই মন্ত্রীর ভাই কি করে রাজ্যের সর্বোচ্চ কর দাতা হলেন? জিতেনবাবু কোনও মন্ত্রীর নাম না বললেও, হঠাৎ মন্ত্র সুধাংশ দাস দাঁড়িয়ে কিছু বলার চেষ্টা করেন।কিন্তু পরিষদীয় মন্ত্রী রতন নাম মন্ত্রী সুধাংশু দাসকে থামিয়ে দিয়ে পাল্টা জিতেন্দ্রবাবুকে উদ্দেশ্যে করে বলেন আপনাকে কথা বলার সুযোগ দিয়েছি কি ব্যক্তি আক্রমণ করার জন্য। এই নিয়ে আরও এক প্রস্ত বিতর্ক হয়। শেষে আর বক্তব্যই রাখেননি জিতেন্দ্রবাবু।এরপ কংগ্রেস বিধায়ক গোপাল রায়, সিপিএম বিধায়ক অশোক মিত্র এবং সিপিএ বিধায়ক রামু দাস আলোচনা করেন।