বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়ছে রাজ্যে: মুখ্যমন্ত্রী।।

 বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়ছে রাজ্যে: মুখ্যমন্ত্রী।।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-শিল্প সম্ভাবনাকে সামনে রেখে রাজ্যে অনুষ্ঠিত দুদিনব্যাপী ‘ডেস্টিনেশন ত্রিপুরা’ বিজনেস কনক্লেভ ২০২৫ সম্পন্ন হলো শনিবার। শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত এই দুদিনব্যাপী কনক্লেভে রাজ্য সরকারের সাথে মোট সাতাশিজন উদ্যোগপতি বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করে মৌ স্বাক্ষর করে। বিনিয়োগের পরিমাণ হবে প্রায় ৩৭০০ কোটি টাকা।
শুক্রবার প্রথমদিনের আলোচনাপর্ব এবং টেকনিক্যাল সেশনের পর শনিবার অনুষ্ঠিত হলো শিল্পোদ্যোগীদের জন্য মূলপর্বের অনুষ্ঠান। শহর আগরতলার বেসরকারী হোটেলে আয়োজিত এই পর্বের সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরেই দেশ তথা বিদেশ থেকে রাজ্যে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। রাজ্য সরকারও সেই অনুযায়ী তাদের এ রাজ্যে বিনিয়োগের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদোগ নিয়ে যাচ্ছে। অবশেষে শনিবার যখন প্রায় সাতাশিজন বিনিয়োগকারী রাজ্য সরকারের সাথে মৌ স্বাক্ষর করেন ঠিক তখনই মুখ্যমন্ত্রী বললেন, সফলতা এসেছে এই উদ্যোগের। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩,৭০০ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা এ দিন বলেন, শান্তি সম্প্রীতি যেখানে বজায়ি থাকবে সেখানেই বিনিয়োগে উৎসাহ দেখান বিনিয়োগকারীরা রাজ্যে শান্তিশৃঙ্খলার পরিবেশ বজায় রয়েছে
বলেই তারা এগিয়ে আসছেন বলে মনে করেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বজায়ের দিক থেকে দেশের মোট আটাশটি রাজ্যের মধ্যে নিচের দিক থেকে তৃতীয়স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। তার কথায়, শিল্পক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য ‘ডেস্টিনেশন ত্রিপুরা’ বিজনেস কনক্লেভ ২০২৫ রাজ্য সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ। এই উদ্যোগে সাড়া দিয়ে যারাই এগিয়ে আসছেন তাদের সকলকেই এদিন শুভেচ্ছা এবং সাধুবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবকটি রাজ্যের উন্নয়নে বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নিজেই উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিকে অষ্টলক্ষ্মী হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। এই অষ্টলক্ষ্মীর উন্নয়নে তিনি অ্যাক্ট ইস্ট পলিসিও চালু করেছেন। এই পলিসি চালুর পর থেকে একের পর এক এগিয়ে চলেছে উত্তর-পূর্ব ভারতের সবকটি রাজ্য।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশে এখন পর্যটন শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। রাজ্য সরকার রাজ্যে ইকো-টুরিজমকে উন্নয়ন করার লক্ষ্যে নানা উদ্যোগও গ্রহণ করেছে। পর্যটন শিল্পের প্রসারে তিনি হোটেল স্থাপনে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে বলেও জানান। এছাড়াও রাজ্যে আগর শিল্পের প্রসারে আগর পলিসি চালু করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এদিক থেকে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিনিয়োগকারীরা রাজ্যে আগর শিল্পে বিনিয়োগ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নসূচকে ত্রিপুরা এখন অনেকদূর এগিয়ে রয়েছে। রাজ্যের গড় মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ৭২৩ টাকা। যা ২০১২ সালের তুলনায় দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। এছাড়াও রাজ্যের জিডিপি এখন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৮.৯ শতাংশ। যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যে প্রাকৃতিক গ্যাসের অফুরন্ত সম্ভার রয়েছে। এটি বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। তার কথায়, ত্রিপুরাকে হীরা মডেল দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার সৌজন্যেই জাতীয় সড়কগুলির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, আগরতলার মহারাজা বীর বিক্রম (এমবিবি) বিমানবন্দর এখন উত্তর-পূর্বের অন্যতম সুন্দর বিমানবন্দর এবং এটি দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর হিসাবে পরিণত হয়ে উঠেছে। আগামীদিনে সাব্রুমে মৈত্রী সেতু চালু হয়ে গেলে এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হিসাবেও কাজ করবে বলে তিনি জানান।
আরও বললেন, ইতিমধ্যেই সেখানে স্পেশাল ইকোনমিক জোন (এসইজেড) নির্মিত হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী এতে আগ্রহও দেখিয়েছেন বিনিয়োগে। তিনি শিল্প সম্ভাবনাময় রাজ্যে রাবার, বাঁশ, আগর, প্রাকৃতিক গ্যাস, কৃষিভিত্তিক শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, পর্যটন, হস্ত ও কারু শিল্প ক্ষেত্রগুলির প্রসঙ্গও তুলে ধরলেন বিনিয়োগকারীদের সামনে।
শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা এদিন বলেন, রাজ্যে শিল্প স্থাপনে এই কনক্লেভ ইতিবাচক বার্তা বয়ে আনবে। রাজ্য সরকার রাজ্যে শিল্পক্ষেত্রে উন্নয়নের মাধ্যমে আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গঠনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। মুখ্যসচিব জেকে সিনহা বলেন, ত্রিপুরা ছোট রাজ্য হলেও শিল্প স্থাপনে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এখানে। রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন সহ শিল্প স্থাপনের অনুকূল পরিবেশও রয়েছে বলে তিনি জানান।
স্বাগত ভাষণে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে বলেন, গত কয়েক বছরে রাজ্যে বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর আয়োজিত কনক্লেভে বিনিয়োগকারীরা রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সাথে মোট সাতাশিটি মৌ স্বাক্ষর করেছে বলে তিনি জানান। মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা এ দিন ‘ল্যান্ড ব্যাঙ্ক সিস্টেম’ এবং ‘ইনসেনটিভ ক্যালকুলেটর’ নামে দুটি পোর্টালের সূচনা করেন।
অনুষ্ঠানে এর আগেই বিনিয়োগকারীদের মধ্য থেকে তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে গিয়ে সর্বসিদ্ধি এগ্রোটেক প্রাইভেট লিমিটেডের পক্ষে অধিকর্তা উত্তম কুমার সাহা বলেন, রাজ্যের ভালো রাস্তা, জল, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা, বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র এবং অন্য সুযোগ সুবিধাগুলি দারুণভাবে উপকৃত করছে আমাদের। বোধজংনগরে আমাদের প্রকল্প নির্মাণের সময় আমরা টিআইডিসি, দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড, কারখানা ও বয়লার পরিদর্শক, খাদ্য বিভাগ, কর কমিশনার এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও প্রচুর পরিমাণে সহায়তা পেয়েছি বলে তিনি জানান। মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, আমাদের কোম্পানি নতুন করে আরকে নগরে মোট পঞ্চাশ একর জমির উপর লজিস্টিক ও কর্পোরেট পার্ক স্থাপন করতে চলেছে। এ জন্য তাদের বিনিয়োগ দুশো কোটি টাকারও বেশি হবে বলে তিনি জানান। এমন আরও জনাকয়েক বিনিয়োগকারী এ দিন তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন অনুষ্ঠানে। অন্যান্যদের মধ্যে এদিন মুখ্য বন সংরক্ষক আরকে সমল, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক (ইন্টেলিজেন্স) অনুরাগ ধ্যানকর, ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান নবাদল বণিকও উপস্থিত ছিলেন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.