বিপজ্জনক ঝোঁক!!
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যে বাংলাদেশীদের অনুপ্রবেশ কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। সীমান্ত অনুপ্রবেশ বন্ধের জন্য প্রশাসনের তরফে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজে বৈঠক করলেও তার কোন ইতিবাচক প্রভাবই চোখে পড়ছে না। বরং প্রতিদিন এই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের ঘটনা রাজ্যে বেড়েই চলেছে।স্বাভাবিক কারণেই গোটা বিষয়টিকে বিএসএফের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।শনিবার একদিনে আগরতলা রেলস্টেশন থেকে ২৩ জন এবং এমবিবি বিমানবন্দর থেকে ৫ জন বাংলাদেশিকে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের ঘটনার আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে রাজ্যে ক্রমবর্ধমান অনুপ্রবেশের বিষয় নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং রাজ্য পুলিশ সহ দেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে এই সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের প্রচেষ্টা জোরদার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।রাজ্য প্রশাসনের মুখ্যসচিব এবং এডিজি আইন-শৃঙ্খলা সহ প্রধান নিরাপত্তা আধিকারিকদের সাথে সম্প্রতি উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠকও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।সেখানে আন্ত:সীমান্ত অনুপ্রবেশে সহায়তাকারী এবং অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছিলেন তিনি।মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, অবৈধ প্রবেশের অন্যতম কারণ হচ্ছে সীমান্তে নিরাপত্তা বাহিনীর স্বল্পতা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দেশে লোকসভা নির্বাচনজনিত কারণে এবং মণিপুরের উদ্ভুত পরিস্থিতির ফলে নিরাপত্তাজনিত স্বল্পতা দেখা দিয়েছিল।কিন্তু প্রশ্ন, নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার প্রায় ২ মাস অতিক্রান্ত হতে চললেও সীমান্ত অনুপ্রবেশ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। যদিও রাজ্য প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছিল, সীমান্তে এই সম্পর্কিত নজরদারি ও মনিটরিং উন্নত করতে এবং অনুমোদনহীন এন্ট্রি রোধ করতে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত বিভাগগুলিতে ইলেকট্রনিক নজরদারি ডিভাইস স্থাপনে সর্বতো প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিস্ময়কর ঘটনা হলো, প্রশাসনের তরফে এই উদ্বেগ প্রকাশের পরও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।এটা ঘটনা ত্রিপুরা বাংলাদেশের মধ্যে ৮৫৬ কিলোমিটারের মতো সীমান্ত রয়েছে।ত্রিপুরার মোট সীমান্ত রেখার একটা বড় অংশই যেহেতু বাংলাদেশে সঙ্গে যুক্ত।জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে বিষয়টি যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই উদ্বেগের।বাংলাদেশের সঙ্গে এই ৮৫৬ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ১৬ শতাংশের কিছু এলাকায় এখনো কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ সম্ভব হয়নি মূলত সীমান্ত সম্পর্কিত কিছু জটিলতার কারণে।আর এই কাঁটাতারবিহীন এলাকাগুলি যথেষ্ট পরিমাণে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্ত এলাকা।তার পাশাপাশি এমন কিছু এলাকাও রয়েছে যেখানে সীমান্তের ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ার মেরামত করা প্রয়োজন। উনকোটি জেলায় নদীর ভাঙনের কারণে একটা বিস্তীর্ণ এলাকায় সীমান্ত বেড়া অরক্ষিত অবস্থায় আছে।যা অনুপ্রবেশকারীদের জন্য স্বর্গরাজ্য।বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পাঁচটি রাজ্যের সীমান্ত রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম এবং ত্রিপুরা। লক্ষণীয় ঘটনা হলো, গত ৫ বছরে এই রাজ্যগুলোর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের পর ত্রিপুরা হচ্ছে দ্বিতীয় রাজ্য যেখানে সর্বাধিক সংখ্যক অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে এবং গত ১ বছরে এই সংখ্যাটা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে।অথচ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে মিজোরামের সীমান্ত থাকা সত্ত্বেও মিজোরামে গত তিন বছরে অনুপ্রবেশের কোন ঘটনা ঘটেনি।সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর স্বল্পতা এবং কিছু এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ না হওয়ায় সীমান্ত সম্পূর্ণ রূপে সিল করে দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।কারণ সীমান্তের কাছাকাছি বেশ কয়েকটি গ্রাম রয়েছে যেখানে নো ম্যানস ল্যান্ডের কারণে সীমান্ত নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। বিকল্প হিসাবে সীমান্তের কিছু এলাকাকে অবৈধ কার্যকলাপ ও অনুপ্রবেশের হটস্পট হিসেবে কিছু এলাকাকে চিহ্নিত করা সত্ত্বেও কেন ত্রিপুরা সীমান্তে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ রোধ করা যাচ্ছে না সেটাই হল বড় প্রশ্ন। এর অর্থই হলো ত্রিপুরা-বাংলাদেশ সীমান্তে পাহারার ব্যবস্থা ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থায় যে এখনো বিস্তর ফাঁক রয়েছে যা অনুপ্রবেশ এবং আন্ত:সীমান্ত অপরাধ যেমন গবাদি পশু পাচার এবং মানব ও মাদক পাচারকে সহজতর করছে- তা প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে খতিয়ে দেখতে হবে।অন্যথায় ত্রিপুরাকে করিডর করে ওপারের অনুপ্রবেশ গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে দেশের স্বার্বভৌমত্ব অখণ্ডতা ও নিরাপত্তার জন্য অশনিসংকেত হয়ে দেখা দিতে পারে।