বিপজ্জনক প্রবণতা

 বিপজ্জনক প্রবণতা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বন্ধুদের বাঁচাতে আর শত্রুদের ভালো করে টাইট দিতে সিবিআই , ইডির মতো সংস্থাগুলোর জবাব নেই । দেশে বর্তমানে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন সরকার যেভাবে মুড়িমুড়কির মতো তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে দিয়ে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করছে তা নিয়ে দেশজুড়ে এখন হৈচৈ কাণ্ড । সিবিআই বা ইডিকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ নতুন কিছু নয় । যুগে যুগে সব শাসকই নিজের অপকর্ম করতে এই স্বশাসিত সংস্থাগুলোর অপব্যবহার করে গেছে । ভারতের সিবিআইকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের সময়ের আগে থেকেই ।

তখন নরসিমহা রাও , জয়ললিতা , মায়াবতী , লালুপ্রসাদ যাদব কিংবা মুলায়ম সিংয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সিবিআইকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল । তবে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের সময়ে ঘটনাটি যখন একটু বেশি বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায় তখন তা নিয়ে খোদ শীর্ষ আদালতকে হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায় । ২০১৩ সালে শীর্ষ আদালত একটি মামলায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছিলেন , কোনও তদন্তকারী সংস্থাকেই অপরিসীম ক্ষমতা দেওয়া বিপজ্জনক । যদি এ রকম চলতে থাকে , তবে সে একটা সময় পাগলা ঘোড়া হয়ে যাবে । পরবর্তী সময়ে একটি মামলায় শীর্ষ আদালত , সিবিআইকে খাঁচাবন্দি তোতাপাখি বলেও কটাক্ষ করেছিল

আসলে ২ জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিই হোক , কিংবা কয়লা খাদান কেলেঙ্কারির ঘটনা — প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়া এবং তাকে প্রভাবিত করা নিয়ে বারবার অভিযোগ উঠেছে শাসকের বিরুদ্ধে । তারচেয়েও বড় ঘটনা ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনাকাণ্ডে অভিযুক্ত ইউনিয়ন কার্বাইডের ওয়ারেন অ্যাণ্ডারসনের প্রত্যর্পণের বিষয়টি নিয়েও সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও অনৈতিকতার অভিযোগ উঠেছিল । আবার গুজরাটে শোহরাব উদ্দিন ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় গুজরাটের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধেও সিবিআইকে লেলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ।

তখন কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন শাসক কংগ্রেস ও ইউপিএ জোটের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং – এর বিরুদ্ধে যে অভিযোগের আঙুল উঠতো আজ সেই অভিযোগই বেশি মাত্রায় বারবার বিদ্ধ করছে কেন্দ্রের বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদি সরকারকে । অর্থাৎ কেন্দ্রে যে যখন ক্ষমতাসীন , সে সিবিআইকে তাদের পোষা তোতার মতো ব্যবহার করে – শুধু রাজনীতির লোকেরাই নন , আর পাঁচটা সাধারণ লোকের কাছেও ব্যাপারটা এখন পরিষ্কার । যদিও শাসক বরাবরই নিজের পক্ষে এটা প্রচার করে থাকে , নির্বাচন ব্যবস্থার মতোই দেশের সিবিআই কিংবা ইডি এগুলো স্বাধীন স্বশাসিত সংস্থা । কিন্তু কাগজে কলমে স্বাধীনতা এবং আর তাকে বাস্তবের কঠিন জমিতে দাঁড় করিয়ে নিরপেক্ষতার পরীক্ষা দেওয়া – এই দুইয়ের মধ্যে যথেষ্ট ব্যবধান রয়েছে ।

বর্তমান বিজেপি সরকারের শাসনে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সমস্ত নৈতিকতা ও শিষ্টাচারের লক্ষ্মণরেখাকে অতিক্রম করেই সিবিআই এবং ইডিকে যেভাবে বাছাই করে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শিবিরকে জব্দ করার জন্য কাজে লাগানো হচ্ছে তা খুব সহসাই যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভিতটাকে না টলিয়ে দেয় সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন । সম্প্রতি দিল্লীতে আম আদমি সরকারের শিক্ষা তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়ার বাড়িতে সিবিআইর তল্লাশি অভিযানের পর রাজনৈতিক মহলে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে বড়সড় ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে । কারণ যে আবগারি নীতির অভিযোগে দিল্লীতে এই অভিযান , সেখানে সিবিআই তাদের এফআইআরে মাত্র ১ কোটি টাকার উল্লেখ করেছে । অথচ আবগারি নীতির প্রশ্নই যদি ওঠে তাহলে গুজরাটে ১০ হাজার কোটি রাজস্ব ফাঁকির বড়সড় ঘোটালা আছে । কিন্তু ওই যে বলা আছে বন্ধুদের বাঁচাতে আর শত্রুকে টাইট দিতে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার এখন জুড়ি নেই । কিন্তু প্রশ্ন হলো , এতে দেশের গণতন্ত্র , দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো দুর্বল হচ্ছে না তো?

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.