বিপজ্জনক ব্যাধি!!

 বিপজ্জনক ব্যাধি!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- বাংলা ভাষায় একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ প্রবচনের সঙ্গে আমরা মোটামুটি সকলেই পরিচিত। প্রবাদটি হলো বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া। এই কথাটির অর্থ হচ্ছে বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে, মহা আড়ম্বর সমারোহ করে, কোন কাজ শুরু করা হলেও, এই কাজের পরিণতি বা ফল যা পাওয়া যায় তার পরিণতি অতিসামান্য বা নেহাত তুচ্ছ। অনেকটা তা শূন্যে গদা ঘোরানোর মতো। আমাদের রাজ্যেও খাদ্য দপ্তর বকলমে প্রশাসনের হয়েছে ঠিক এই দশা। কিছুদিন বাদে বাদেই এই রাজ্যে খোলাবাজারে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রের দাম লাগামহীন হয়ে যায়। নিত্যপণ্যের জিনিসপত্র থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজি, আলু, পেঁয়াজ এমনকী কাঁচামরিচের দামও হয়ে যায় আকাশছোঁয়া। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি সহ সব ধরনের উপকরণেই দেদার মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আর এসবের জন্য খুচরো ব্যবসায়ীরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের দোষারোপ করেন। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা উৎসমূল্যে পণ্যসামগ্রী মূল্যবৃদ্ধির দোহাই টানেন। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে এই দোষারোপের পালা নতুন কিছু নয়। বাজারে সবজি, ভোজ্যতেল, আলু পেঁয়াজ সহ নিত্যপণ্যের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে ক্রেতা সাধারণ যখন চরম বিপাকে পড়েন, তখন খবরের কাগজের সংবাদ ছাপা হলে ঘুম ভাঙে প্রশাসনের।
শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। এনফোর্সমেন্ট টিমকে বাজারে নামতে বলা হয়। কখনো কখনো আবার মাথাভারী প্রশাসন এনফোর্সমেন্ট টিমের সাথে মহকুমা প্রশাসনের ডিসিএম, খাদ্য দপ্তরের অফিসার, ইন্সপেক্টর, খাদ্য সুরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তা, লিগ্যাল মেট্রোলজির কর্মকর্তা সহ হরেক নাম হরেক রংয়ের পোশাকি বাবুদের জুড়ে দেন। এনফোর্সমেন্ট টিমের কলেবর বৃদ্ধি করে গোটা বিষয়টিকে জমকালো চেহারা দিয়ে একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব তৈরি করা হয়। মশা মারতে কামান দাগানোর মতোই প্রশাসনের এই কর্মকাণ্ডে, হাতে গোনা বড়জোর তিন-চার দিন চলার পর তা কবে, কখন, কেন কীভানে বন্ধ হয়ে যায় সেই খবর কেউ জানেন না। মাথাভারী প্রশাসন এ রাজ্যে যে কোনো কাজের সময়েই একই ঘটনা নিরন্তর ঘটিয়ে থাকে। ফলে এই মারাত্মক ব্যাধির কোন স্থায়ী উপশম হয় না। বরং এই ধরনের মারাত্মক ব্যাধ বাড়তে থাকে এবং সাধারণ মানুষকেই এর কুফল ভো করতে হয়। মনে রাখতে হবে যেকোন রোগের উপশমের দুটি উপায় আছে। এক হল, আগে থেকে প্রতিষেধকমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ। আর দ্বিতীয় পন্থা হল রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাধি আছে যেগুলোর আগে থেকে প্রতিষেধকমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। যেমন কলেরা কিংবা গুটিবসন্তে আগে থেকেই প্রতিষেধক গ্রহণ করা না হলে শত শত চিকিৎসন মোক্তার, হেকিম, ডাক্তার, কবিরাজ লাগিয়েও কোন ফল পাওয়া যায় না। পুরো গ্রাম কি গ্রাম সাফ হয়ে যায়-কাজের কাজ কিছুই করা যা না। দুর্নীতি, অনিয়ম, কালোবাজারি, মানুষের পকেট কাটা, নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা এই সব কিছুর পেছনে অবশ্যই কোন না কোন কারণ থাকে। লজিক বা যুক্তি ছাড়া কোন কার্যই কখনোই হয় না। অথচ মুখে মুখে নীতিবাজ সরকার এবং তার মাথাভারী প্রশাসন ‘এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা’র গালভরা স্লোগান শুনিয়ে চললেও বিগত ছয় বছরে বর্তমান সরকারের শাসনে কোন ক্ষেত্রেই জনগণের প্রত্যাশার মাপকাঠিকে তারা ছুঁতে পারেনি। প্রশ্ন হলো, একটি জননির্বাচিত সরকারের কাছে তার নাগরিকদের চাহিদা ও প্রত্যাশা থাকবে-এটা স্বাভাবিক ঘটনা। অথচ জননির্বাচিত সরকার যদি নাগরিকের চাহিদা-প্রত্যাশা পূরণ করা দূরে থাক, ন্যূনতম পরিষেবাটুকু দিতে ব্যর্থ হয়। সামান্য শাক-সবজি-চাল-ডাল-তেলের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়, ন্যূনতম নাগরিক পুর পরিষেবা প্রদানে অক্ষম হয় তাহলে সেই সরকারকে অতীত ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভবিষ্যৎ পরিণামের জন্যও তৈরি থাকার বার্তা শুনিয়ে রাখতে হবে। বিগত পক্ষকাল ধরে রাজ্যের খোলাবাজারে নিত্য পণ্য সহ শাকসবজির নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে খাদ্য দপ্তর তথাকথিত এনফোর্সমেন্ট শাখাকে অভিযানে নামালেও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কোন সদর্থক প্রভাব পড়েনি। ভোজ্যতেল সহ বিভিন্ন পণ্যের কিলো প্রতি মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেলেও খাদ্য দপ্তর লোক দেখানো অভিযানে নিজের দায়িত্ব পালন করে চলেছে। প্রশ্ন হলো শূন্যে গদা ঘোরানোর এই প্রহসন আর কতকাল চলবে?

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.