এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-একটি অন্যায় দিয়ে অন্য অন্যায়কে যেমন বৈধতা দেয় না,তেমনি হামাসের নৃশংসতাকে পাল্টা গাজার নৃশংসতা দিয়ে নাব্যতা আদায় করা যায় না।গত ২১ মাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যত সংখ্যক মানুষ নিহত ও আহত হয়েছেন মাত্র এক মাসে তার চেয়ে বেশি মানুষ হতাহত হয়েছেন গাজা ভূখণ্ডে।গাজা উপত্যকায় ইজরায়েলি হামলার ভয়াবহতা কতটা, সেটা উপলব্ধি করতে গেলে এর চেয়ে বড় দৃষ্টান্ত সামনে তুলে ধরার আর কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই।গত ৭ অক্টোবর প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইজরায়েলে হামলা চালানোর পর থেকে গাজায় নিরন্তর আক্রমণ জারি রেখেছে ইজরায়েল।

হামাসের হামলার পর থেকে ইজরায়েলের ক্রমবর্ধমান বিমান হামলায় এখনও পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।কিন্তু তারপরেও বিশ্বজুড়ে ইজরায়েলকে সংযত ও শান্ত হওয়ার একের পর এক আহ্বান সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এখনও বেলাগাম।পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে যে, গাজায় এই মুহূর্তে প্রায় ২০ লাখ মানুষ এক চরম মানবিক বিপর্যয়ের মুখে।দিনের পর দিন গোটা রাতভর ইজরায়েলের বিমান বাহিনীর বোমা বর্ষণ চলছে গোটা গাজা ভূখণ্ডে।বোমা বর্ষণ আর বিমান হামলা থেকে বাঁচতে অগণন নিরীহ মানুষ সবাই দক্ষিণের ভূখণ্ডের দিকে পালাতে থাকলেও গাজায় কোনও জায়গায় আর নিরাপদ নয়।সীমান্ত পার হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেওয়ার সুযোগও বন্ধ করে দিয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র সিরিয়া।খাদ্য, পানীয় জল, বিদ্যুৎ আর জ্বালানির সঙ্কটের অভাবে গাজার লক্ষ লক্ষ মানুষ এক প্রকার নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছে।শরণার্থী শিবির, হাসপাতাল, স্কুল, অ্যাম্বুলেন্স ইজারায়েলের আক্রমণ থেকে রেহাই মিলছে না কিছুই।ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গাজাকে প্রশাসনিকভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছেন।ফলে পৃথিবীর
অগণিত শান্তিকামী মানুষ এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রনেতারা গাজায় গণহত্যা বন্ধ করতে, শরণার্থীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে, যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো সত্ত্বেও নিধন যজ্ঞ চলছেই।পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে,গাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য
চিলড্রেনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন,সেখানে প্রতি ১০ মিনিটে ১ টি করে শিশু মারা যাচ্ছে।শুধু তাই নয়, যুদ্ধে যত মানুষ আহত হচ্ছেন তার তিনজনের মধ্যে একজন করে শিশু।এই নজিরবিহীন সংঘাতময়ভপরিস্থিতিকে ঘিরে ইজরায়েল বনাম প্যালেস্টাইনকে নিয়ে গোটা বিশ্ব কার্যতঃ২ শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।কেউ কেউ আবার নিরপেক্ষ অবস্থানের কথাও বলছেন।সম্প্রতি গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব পাস হয়।এই প্রস্তাবের পক্ষে ১২০ টি দেশ,এবং বিপক্ষে ১৪ টি দেশ ভোট দেয়।এছাড়া ৪৫ টি দেশ ভোটদানে বিরত থাকে। প্রস্তাবে হামাসের হাতে আটক ও বন্দি অসামরিক ব্যক্তিদের নিঃশর্ত মুক্তির কথা বলা হয়েছে।এক্ষেত্রে লক্ষ্যণীয় বিষয়টি হলেন-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই মর্মেবসতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে,যুদ্ধ বিরতি হতে হামাস পুনরায় সংঘটিত
হবে এবং ৭ই অক্টোবরের মতো হামলা চালাতে পারে সংগঠনটি।অর্থাৎ এই বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যুক্তরাষ্ট্র গাজায় এখনই কোনও যুদ্ধবিরতি চায় না।তবে গাজায় একটি মানবিক বিরতির জন্য মার্কিনীরা চেষ্টা
চালিয়ে যাচ্ছে যেটা কয়েক ঘন্টার জন্য কার্যকরী ও স্থায়ী হবে।যুদ্ধবিরতি ও মানবিক বিরতির মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো।মানবিক বিরতি অপেক্ষাকৃত কম সময়ের জন্য কার্যকরী হয়।শুধুমাত্র মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য মানবিক বিরতি আহ্বান করা হয়ে থাকে। কিন্তু মানবিক বিরতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াত স্পষ্ট জানিয়েছেন,জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত গাজায় হামলা চলবে।সব মিলয়ে ইজরায়েল হামাস যুদ্ধ কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ বুনতে চলেছে সেটাই এখন গোটা আন্তর্জাতিক মহলের সামনে প্রশ্ন।প্রশ্ন উঠেছে হামাস কী তবে যুদ্ধাপরাধী?মিশর কেন প্রতিবেশীদের প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়েছে তা নিয়েও শুরু হয়েছে জোর গুঞ্জন। ইতিমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাস এবং লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠীকে হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছে এই যুদ্ধে না ছড়ানোর জন্য।যুক্তরাষ্ট্র এটাও জানিয়েছে, যদি কেউ এতে হস্তক্ষেপ করে তাহলে শুধু ইজরায়েল নয়,তাদেরকে মার্কিন সৈন্যদেরও মোকাবিলা করতে হবে। যুদ্ধের ঝুঁকি যে বাড়ছে সেই সম্পর্কে সব পক্ষই সচেতন। তারা এও জানে।স্নায়ুযুদ্ধ থেকে যদি তা সম্মুখ সমরে পরিণত হয়, তাহলে সারা বিশ্বেই তা ছড়িয়ে পড়বে। আসলে ইজরায়েল এবার হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার করেছে এবং এমনভাবে তারা হামাসকে সমূলে উপরিয়ে ফেলতে চায়, যেমনটা ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে ঘটেছে।তবে গাজার শেষ পরিণতি যে আরও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে এবং গোটা বিশ্বকে হতচকিত করতে পারে সেই আশঙ্কা কিন্তু এখনই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

13 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

13 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago