বিপদসংকুল যাত্রা

 বিপদসংকুল যাত্রা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বিচারের বাইরে গিয়ে বিচার’ আমাদের দেশের সংবিধান কোনওভাবেই মান্যতা দেয় না। এটা পুলিশি এনকাউন্টারই হোক কিংবা সুপরিকল্পিত কোন হত্যা। যদিও আত্মরক্ষার জন্য পুলিশের গুলী চালানোর অবশ্যই অধিকার আছে।

Constitution Day 2022: Indian Constitution Day today, Know its history and  importance - Times of India


কিন্তু আত্মরক্ষার নামে পুলিশকে দিয়ে অথবা তৃতীয় কোন পক্ষকে দিয়ে অভিযুক্তকে নিকেষ করে দেওয়ার কৌশল,- সাধারণ মানুষ মান্যতা দেয় না ও কি বিশ্বাস করে না। বিচারের বাইরে গিয়ে বিচার কিংবা পরিকল্পিত কৌশলে কোন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা-এটা আসলে বিচার ব্যবস্থার উপর চরম অনাস্থার নিদর্শন। দেশের আইন কানুনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে যদি কখনও আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা পুলিশ কিংবা তৃতীয় কোন শক্তি যদি নিজেরাই বিচারক হয়ে ওঠে তবে সাধারণ মানুষ বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে, যা গণতন্ত্রের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।মনে রাখতে হবে, আধুনিক রাষ্ট্রে দেশের পরিচালিত বিচার ব্যবস্থার শহ উপর আস্থা রাখতেই হবে নাগরিককে। এটা হয়তো ঠিক, বিচার প্রক্রিয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই দীর্ঘসূত্রিতা এবং বিলম্বের কারণে বড় বড় অপরাধের বিচার বিলম্বে সংঘটিত হচ্ছে, যা প্রশাসন ও বিচার কাঠামোর উপর আস্থাকে টলিয়ে দেয়। তা সত্ত্বেও একটা কথা সবসময় বা মনে রাখতে হবে, অপরাধ দমনের পথটি নীতিসম্মত হওয়াই বাঞ্ছনীয়। অপরাধী বা অভিযুক্তকে যদি পুলিশকে দিয়ে গুলী করে ভুয়া এনকাউন্টারের মাধ্যমে হত্যা করাতে হয় তবে তা হয়তো সমাজে অপরাধীর মনে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করাতে পারে। কিন্তু এতে সমাজে কখনোই স্থায়ী শান্তি সম্ভব হয় না। ভয় দেখিয়ে বা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে শান্তিশৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা। এটি একটি প্রাচীন পদ্ধতি, যা বর্তমান সভ্য সমাজে অচল। অপরাধের যেকোন ক্ষেত্রেই সরকার অপরাধীর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবে।পুলিশ যেন কোনও ভাবেই অপরাধীদের বিষয়ে দুর্বলতা প্রদর্শন না করে।

Cartoon police kids standing near the police car | Download on Freepik


আত্মরক্ষার পরিপূর্ণ অধিকার পুলিশের থাকা সত্ত্বেও কোন অপরাধই বন্দুকের নলে সমাধান করা যায় না। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশে যোগী রাজ্যে পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন অবস্থাতেই এক গ্যাংস্টার তথা প্রাক্তন সাংসদ ও বিধায়ক আতিক আহমেদ ও তার ভাই আশরাফকে খুন করা হয় অনেকটা পরিকল্পনামাফিক। পুরো দেশজুড়েই এই ঘটনা ঘিরে উত্তাল। অভিযোগ হল সরকারী মদতে রীতিমতো পরিকল্পনা করে ঠাণ্ডা মাথায় এই দুই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে পুরোটাই সাজানো নাটক। কারণ পুলিশ শুরু থেকে শেষ অব্দি পুরোটাই নিষ্ক্রিয় ছিলো। ৬০ জন পুলিশ কর্মী দিয়ে বেষ্টিত থাকা অবস্থায় ওই দুই গ্যাংস্টার কাম নেতাকে তিনজন দুষ্কৃতী সাংবাদিক সেজে এসে গুলী করে হত্যা করে। সাংবাদিক সেজে আসা ঘাতকদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র এলো কী করে, ২ গ্যাংস্টার-গুলীতে ঝাঝরা হয়ে মাটিতে পড়ে থাকলেও কেন পাল্টা পুলিশ গুলী চালায়নি, কড়া পাহারার মধ্যে কীভাবে হামলাকারীরা পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলী চালায়- এই সবগুলি বিষয় নিশ্চয়ই পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাবে। বিশেষ করে অভিযুক্ত ২ গাংস্টার যখন নিজেদের জীবনের আশঙ্কা করে আগাম আদালতে দ্বারস্থ হয়েছিল,তখন এটা পরিষ্কার, ২ গ্যাংস্টার আগাম তাদের পরিণতির কথা জানতে পেরেছিলো। কিন্তু পুলিশ সেটা জানত না এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। মোদির পোস্টার বয় ২০১৭ সালে লখনৌর কুর্শিতে বসার পর এই পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে দুষ্কৃতকারীদের ১০,৯০০-র মতো এনকাউন্টার হয়েছে। ৬ বছরে গড়ে ১৩ দিনে ১ জন করে অভিযুক্ত প্রাণ হারিয়েছেন এনকাউন্টারে।এই পরিসংখ্যান কোনও ভাবেই একটা রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে সুস্থতার লক্ষণ নয়। মানুষের জীবন- সম্পত্তি রক্ষার জন্য, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার প্রশ্নে যদি অপরাধ নিমূর্ল করতে, শুধু এনকাউন্টারের উপর ভরসা করতে হয় একটি সরকারকে, তবে বিচার ব্যবস্থার প্রাসঙ্গিকতা ও আবশ্যিকতা কতটা ? খুন, ধর্ষণ, মাফিয়ারাজ এই কালো দুনিয়ার অপরাধের বিরুদ্ধে যোগী সরকার ২০১৭ থেকে একদিকে বুলডজার অপরদিকে এনকাউন্টার- এই দুইভাবে সাঁড়াশি আক্রমণ চালানো সত্ত্বেও উত্তরপ্রদেশে এগুলি বছর বাদেও কি অপরাধপ্রবণতা এতটুকু কমেছে। যদি না হয়ে থাকে, তাহলে বিচারের বাইরে গিয়ে বিচার কিংবা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড থেকে প্রশাসন তথা রাজনীতিবিদদের বেরিয়ে আসতেই হবে। কারণ, আইনের শাসনের জন্য বিচার বহির্ভূত হত্যা বন্ধ করার কোন বিকল্প নেই।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.