বিপদসীমা মধ্যপ্রাচ্য।।

 বিপদসীমা মধ্যপ্রাচ্য।।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

মধ্যপ্রাচ্যে আরও একটি বড়সড় যুদ্ধের কালো মেঘ গত কিছুদিন ধরে একটু একটু করে এই অঞ্চলের আকাশে উঁকি দিচ্ছে।প্রায় পক্ষকাল আগে সিরিয়ার রাজধানী দামাস্কাকে ইরানের কনস্যুলেটে আকস্মিক হামলার পেছনে ইজরায়েলের ছায়া দেখতে পাচ্ছে ইরান। তারপর থেকে তেহেরান ইজরায়েলে পাল্টা হামলা চালানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।রমজানের কারণে এতদিন দেশটির ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লা আলি খোমেইনি ইজরায়েলকে যোগ্য শিক্ষা দেওয়ার হুঙ্কার দিলেওগত আটচল্লিশ ঘন্টায় পরিস্থিতি যে দিকে এগুচ্ছে তাতে ইরান যে ক্রমশই বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে চলেছে তা মোটামুটি স্পষ্ট।আর এই শঙ্কা যে অমূলক নয়, হোয়াইট হাউসের একটি বক্তব্য তাকে নিশ্চিত করেছে।মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি মনে করেন ইজরায়েলে হামলা চালাতে ইরান খুব বেশি দেরি করবে না। তবে এ ধরনের পদক্ষেপ না নিতে ইরানকে সতর্ক করে বাইডেন সাংবাদিকদের সাথে শুধু একটি শব্দবদ্ধ ব্যবহার করেছেন।ইরানের প্রতি বার্তা দিতে গিয়ে বাইডেন দু’অক্ষরের যে শব্দটি ব্যবহার করেছেন তা হল ‘ডোন্ট’।এর মানে দাড়ায়, হামলা একদম নয়।
দামাস্কাসে হামলার ঘটনায় ইরান দূতাবাসে কর্মরত তাদের শীর্ষ কমাণ্ডার সহ ৭ জন কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন।এই হামলার জন্য ইজরায়েল দায় স্বীকার করেনি।কিন্তু আয়াতুল্লা আলি খামেইনি, ইজরায়েলকে তার পাপে যোগ্য শাস্তি দেওয়া হবে।এরই মধ্যে তেল অবিভে ইরানি হামলার আশঙ্কায় ভারত-ফ্রান্স,পোলান্ড, রাশিয়া, জার্মানি তাদের নাগরিকদের এই দুই দেশ ভ্রমণের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে।তবে বাইডেন যখন জানান,বেশি সময় না নিয়ে শিগগিরই ইরান হামলা চালাবে।তবে তিনি তার কাছে থাকা সুরক্ষিত তথ্যগুলো কিছুই প্রকাশ করবেন না বলে জানান।এই ঘোষণার পরই সম্ভাব্য ইরাণি হামলা থেকে ইজরায়েলকে সুরক্ষা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের রণতরীগুলো নিজেদের অবস্থান নিতে শুরু করেছে।এই প্রেক্ষাপট থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার,ইরান প্রতিশোধ নিতে মরিয়া।এ প্রসঙ্গে খোমেইনির সর্বশেষ বক্তব্য আমরা অবশ্যই তাদের অপকর্মের পরিতাপ করিয়ে ছাড়বো।ইরানের রাষ্ট্রপতিও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন,এই জঘন্য অপরাধের জবাব না দিয়ে থাকা হবে না। সব মিলিয়ে ইরানের কনস্যুলেট ভবনে আগ্রাসন নিয়ে দেশটির শীর্ষকর্তাদের হুমকি আর আস্ফালন যে সংঘাতের চরম সীমানার দিতে এগিয়ে চলেছে তা প্রায় নিশ্চিত।তবে ইজরায়েলের সঙ্গে ইরান পূর্ণমাত্রায় কতটা যুদ্ধে জড়াতে চায় এ নিয়ে সংশয় রয়ে গেছে।কারণ তাতে মার্কিনিদের সঙ্গে ইরানের সরাসরি যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হবে যা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। আবার এটাও ঘটনাচইরানের রাষ্ট্রনেতাদের এই প্রতিশোধ নেওয়ার বাগাড়ম্বর যদি বাস্তবে প্রতিফলিত না হয়, তবে তাদের ভাবমূর্তিতে সেটা আঁচ ফেলবে।আরেকটা নেতিবাচক দিক হল, তেহেরানের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে তেল আবিভ গাজা যুদ্ধকে আন্তর্জাতিক রুপ দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। এতে এই ধরনের লড়াইএ ইজরায়েলের হাতে খেলা চলে যেতে পারে যা কৌশলগতভাবে ইরানের জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি ডেকে আনবে।শুধু তাই নয়, ইরানের সঙ্গে সংঘাত বাধিয়ে ইজরাইল চাইছে গাজায় যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল তা থেকে সকলের দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়া।তাতে অবস্থানগতভাবে ইরান কিছুটা হলেও বেকায়দায় চলে যেতে পারে।আবার এটাও ঘটনা, বিগত কিছু বছর ধরেই আর্থিক সংকটের মধ্যে চলছে ইরান।একটা দীর্ঘ প্রলম্বিত বড়সড় যুদ্ধের ব্যয় বহন করার জন্য শক্ত মজবুত অর্থনীতির প্রয়োজন।ইরানের মুদ্রাস্ফীতি বর্তমানে চল্লিশ শতাংশ,মুদ্রার বিনিময় হারেও পতন দেখা গেছে। একটি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া যতটা সহজ, সেই যুদ্ধ থেকে বেরিয়ে আসা ঠিক ততটাই কঠিন। ইতিপূর্বে এর দৃষ্টান্ত হল আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন।সর্বশেষে নজিরও রয়েছে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের ঘটনা থেকে। এই অবস্থায় ছায়াযুদ্ধের আকারেই ইরান আপাতত মধ্যপ্রাচ্যে প্রক্সি ওয়ার চালিয়ে গেলেও নিকট ভবিষ্যতে ছায়াযুদ্ধের পরিবর্তে সরাসরি যুদ্ধতেই প্রতিশোধকে পূর্ণ রূপ দিতে নামবে সংশ্লিষ্ট বিবদমান রাষ্ট্রগুলো- প্রাথমিকভাবে এর ইঙ্গিত মিলছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.