বিপন্নতার শীর্ষবিন্দু

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বায়ুদূষণ থেকে শব্দদূষণ, জলদূষণ থেকে মৃত্তিকাদূষণ-সব কিছুর জেরেই আজ বদলে যাচ্ছে জলবায়ু।এই জলবায়ু বদলে যাওয়া মানেই হলো গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি।যার জের ধরে গোটা বিশ্বেই মার্চ থেকে জুন মাস দহনজ্বালায় জেরবার মানুষ। তাপ বৃদ্ধির বিরুপ প্রভাব পড়ছে আমাদের প্রকৃতিতে, জীব ও উদ্ভিদ জগতে এবং মানুষের জীবনে।কিন্তু কেন বাড়ছে তাপমাত্রা এবং তাই তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব ও পক্রিয়াটা কেমন হবে বিশ্বে- এটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচনা ও উৎকণ্ঠার বিষয়।আমরা যারা সাধারণ মানুষ, গরমের দাপটে অস্থির, তাদের মতোই বিজ্ঞানীরাও কিন্তু তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে চিন্তিত।প্রাথমিক গবেষণায় বলা হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা প্রতি বছর তার আগের বছরের রেকর্ডকে ভেঙ্গে দিচ্ছে।গত কয়েক বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে ছিল বিশ্বে উষ্ণতম বছর। অথচ চলতি ২০২৪- সালেই এটা স্পষ্ট হতে চলেছে ২০২৩- কে ছাড়িয়ে যাবে ২০২৪ এর উষ্ণতা।১৮৮০ সালে তাপমাত্রা সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কারের পর দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছর অল্প মাত্রায় হলেও তাপ বাড়ছে।তবে ২০০০ সালের পর প্রতিবছর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে উদ্বেগজনক প্রবণতা বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।সেই সাথে আরেকটি উদ্বেগের দিক হলো ১৯৯২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত সমূদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩ ইঞ্চি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।তাই বলা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে শুধু প্রকৃতির হাত নেই।আছে মনুষ্যনির্মিত বিপর্যয়ও।এই যে তীব্র তাপপ্রবাহ, রোদে জ্বালাপোড়া,শরীরের অস্বস্তি এ সবই হচ্ছে মানুষের তৈরি পরিণামের ফল।মানুষের হাত ধরে প্রকৃতিকে অবক্ষয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চারটি পর্যায়ে।প্রথমগত হচ্ছে, জমিতে রাসায়নিক সারের অত্যধিক প্রয়োগের মাত্রা প্রতি বছরই বাড়ছে। সারের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে কীটনাশক পদার্থ।এই কীটনাশকের জেরে প্রচুর প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছে।যা স্বাভাবিক জৈব বৈচিত্র্য ধরে রাখতো।এই দূষণের ফলে জমি স্বাভাবিক উর্বরতা হারিয়েছে।গত সত্তর বছরে জৈব বৈচিত্র্য ৬৫ শতাংশ কমেছে।
আর মানুষের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ।বায়ুমণ্ডলের অবস্থাও বিগত ৫০ বছরে মানুষ প্রাণঘাতী করে তুলেছে। দূষণের মাত্রা এই পরিমাণে বেড়েছে যে দুরারোগ্য জটিল মারণব্যাধি বিপর্যয়কে আরো কয়েকগুণ এগিয়ে দিয়েছে। দূষণ ছড়াচ্ছে, নদী, সমূদ্র এবং অনান্য জলভাণ্ডারগুলোতে। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, জলদূষণ ও মাটিদূষণের কারণে মানুষ এখন রোগের পাহাড়ে বাস করছে।শিল্প বিপ্লবের পর পৃথিবীর চেহারাটা বদলে গেলেও গত ৫০ বছরে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে শিল্প কারখানার নির্গত বিষাক্ত ধোয়া, ডিজেল গাড়ির বর্জ্য বাতাসকে দূষিত করছে। ধূমপান প্রবণতার জেরে বেড়েছে ফুসফুসের ক্যান্সার। রাসায়নিক প্রয়োগে উৎপাদিত খাদ্য, সবজি, শরীরে বিষক্রিয়া ছড়াচ্ছে।
খাবারের সঙ্গে পুষ্টির পরিবর্তে শরীরে ঢুকছে টক্সিক পদার্থ। শব্দদূষণ বাড়াচ্ছে রক্তচাপ, হৃদরোগ ও মানসিক ব্যাধি। টিম ফলগার নামে এক বিজ্ঞানী সম্প্রতি একটি জার্নালে মন্তব্য করেছেন, আমাদের ধারণার চেয়েও অধিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা।বিশ্বজুড়ে এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে আন্টার্কটিকা ও গ্রীনল্যাণ্ডের মতো শীতল অঞ্চলের বরফ দ্রুততার সাথে গলছে। একদিকে সমূদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, অন্যদিকে বরফ গলে যাওয়ার চাপ পৃথিবীর উপর পড়ছে। এই দ্বৈত সমস্যা মোকাবেলা করা মানুষ ও প্রকৃতি উভয়ের পক্ষেই কঠিন। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে তা মোকাবেলা করা মানুষের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। তাপবৃদ্ধির ভয়ানক প্রতিক্রিয়ায় উৎপাদন ও খাদ্য মজুত কমে যাবে। অনেক অঞ্চল নতুন করে মরুভূমিতে পরিণত হবে। আবার জমাট করে বরফ গলতে থেকে অনেক সমতল ভূমি, উপকূল, দ্বীপ সমুদ্রে তলিয়ে যাবে।এই অবস্থায় মানুষের জীবনযাপন হয়ে পড়বে চরম দুর্বিষহ।এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ হয়তো নেই, কিন্তু এর গতিতে সামান্য শ্লথ করা যাবে। অবাধে গাছপালা কাটা, নদী খাল ভরাট, জল অপচয় এই সমস্ত বন্ধ করতে হবে। বায়ু ও পরিবেশ দূষণকে রুখতে না পারলে পৃথিবী আরও অগ্নিগর্ভ ও উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। এর রোষ মানুষকেই এবং তার জীব জগতকেই বইতে হবে। এর থেকে উত্তরণের কোন পথ নেই। অতএব বিপর্যয় দরজায় কড়া নাড়ছে। সাবধান হতেই হবে সবাইকে।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

হৃদরোগে হঠাৎ মৃত্যু: কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমান যুগে হৃদরোগ জনিত সমস্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক ও জীবনঘাতী…

3 hours ago

প্রশ্নের মুখে বৈধ সীমান্ত বাণিজ্য, আমদানির তুলনায় রপ্তানি নামমাত্র, পরিস্থিতি চিন্তাজনক!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বর্তমানে রাজ্যেনয়টি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন রয়েছে।কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই নয়টি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনকে…

3 hours ago

আঠাশের বিধানসভা নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ থাকার বার্তা প্রদ্যোতের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-২০২৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনেও আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারলেই, আমাদের…

3 hours ago

হার্ভেকে নকআউট করে তপনের সেমিতে সংহতি!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-তপন স্মৃতি নকআউট ক্রিকেটের দ্বিতীয় দল হিসাবে সেমিফাইনালে হার্ভেকে নকআউট করে তপনের সেমিতে সংহতি!!খেলার…

4 hours ago

সতর্কতাই বাঞ্ছনীয়!!

নজিরবিহীন গরমের মুখোমুখি রাজ্য। মার্চ মাসের শেষ দিকে গরমের এই প্রকোপ এককথায় নজিরবিহীন।এজন্য আবহাওয়া দপ্তরকে…

4 hours ago

খুশির ঈদ উদযাপন

অনলাইন প্রতিনিধি :-"ঈদুল ফিতর" যার অর্থ হলউপবাস ভাঙার আনন্দ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দুটো ধর্মীয় উৎসবের…

1 day ago