বিপর্যয়’পার করে ফের স্বমহিমায় গিরের পশুরাজরা।

 বিপর্যয়’পার করে ফের স্বমহিমায় গিরের পশুরাজরা।

KONICA MINOLTA DIGITAL CAMERA

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জাখাউ বন্দরে আছড়ে পড়ে বিপর্যয়। রাত ১২টায় কচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের সম্পূর্ণ ল্যান্ডফল হয়েছিল। এ সময় ঘণ্টায় ১১৫ থেকে ১২৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইছিল। অনেক শহরে ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। ঝড়ের আঘাতে মান্ডভি এলাকা সম্পূর্ণ বিদ্যুৎ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ঝোড়ো হাওয়ার কারণে বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গেছে। জাখাউ মান্ডভি রোডেও অনেক গাছ ভেঙে পড়েছে। ঝড়ের পর গুজরাতের ভাবনগরে গরু বাঁচাতে গিয়ে বাবা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হিসাবে এই দু’টি মৃত্যুর ঘটনা ছাড়া আর একটিও মৃত্যুর খবর নেই। আর তার থেকেও বড়ু বিষয় ‘জিরো ক্যাজুয়েলটি’ বা মৃত্যুহীনের রিপোর্ট এসেছে গুজরাতের বন দফতর থেকে। ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার আগেই প্রায় ১ লক্ষ মনুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে শুধু মানুষই নয়, গিরের সিংহদের সুরক্ষাতেও কোন খামতি রাখা হয়নি। সিংহ সহ সমস্ত বন্যপ্রাণীর যাতে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড়ে কোনভাবেই ক্ষতি না হয়েছিল সেদিকেও বিশেষ নজর রাখা হয়েছিল। গুজরাত সরকার ‘জিরো ক্যাজুয়েলটি’ নীতি নিয়েছিল অন্তত দু’সপ্তাহ আগেই। আর তার জেরে সত্যি আটকে দেওয়া গেছে পশুপাখিদের জীবনহানির ঘটনা। গির অভয়ারণ্য, কচ্ছের নারায়ণ সরোবর অভয়ারণ্য এবং বরোদার মাতা মাধ গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় অত্যন্ত সুকৌশলে উদ্ধারকারী দল মোতায়েন র করা হয়েছিল। বিশেষভাবে নজর দেওয়া হয়েছিল বিপন্ন প্রজাতির এশিয়াটিক সিংহদের উপর। তাদের জন্য ৯টি বিভাগের অধীনে ১৮৪টি উদ্ধারকারী দল তৈরি রাখা হয়েছিল এবং ৫৮টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছিল। গির অরণ্য এবং উপকূলবর্তী এলাকায় ৪০টি সিংহের গতিবিধির উপর নজর রাখার জন্য একটি প্রথক মনিটরিং দল গঠন করা হয়েছিল। ওই দলের লক্ষ্য ছিল ঝড়ের আঘাতে কোন সিংহ যদি আহত হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সে খবর কন্ট্রোল রুমে পাঠাতে হবে। আর পশু চিকিৎসার জন্য একটি বিশেষ অ্যাম্বুলেন্স সহ চিকিৎসার দল তৈরি ছিল। তৈরি ছিল অস্ত্রোপচারের মতো জরুরীকালীন ব্যবস্থাও।প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কথা আগেভাগেই অনুমান করে উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন নজরদারি সিস্টেম তৈরি করেছিল গুজরাত সরকার। যখনই আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় দানা বাঁধ থেকে শুরু করেছিল তখনই সাত সদস্যের একটি বিশেষ টিমকে গির অরণ্যে পাঠিয়েছিল গুজরাত রাজ্য সরকারের বনদফতর। সেখানে গিয়ে তাদের মূল দায়িত্ব ছিল যে সমস্ত সিংহ দলবদ্ধ ভাবে বাস করছে সেই সমস্ত সিংহকে চিহ্নিত করে তাদের গলায় রেডিও কলার পরিয়ে দেওয়া। তারপর স্যাটেলাইট লিঙ্কের সাহায্যে তাদের গতিবিধির সমস্ত খবর পৌঁছে যেত মনিটরিং সেলের কাছে। উদ্ধারকারী দলগুলির কাজ ছিল প্রাণীদের দ্রুত উদ্ধার করা, এবং ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করা। গুজরাত রাজ্য সরকার একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বন্যপ্রাণী সম্পর্কিত জরুরী এসওএস মেসেজ পেলে যাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায় তার জন্য ১০টি এলাকাকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিল; জুনাগড় বন্যপ্রাণী, টেরিটোরিয়াল সার্কেল গির পূর্ব, গির পশ্চিম, সাসান, পোরবন্দর, সুরেন্দ্রনগর, জামনগর, ভাবনগর, মরবি এবং জুনাগড়। এই এলাকাগুলিকে একত্রিত করে যৌথভাবে ৫৮টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছিল। গির অভয়ারণ্যে যে জায়গায় সিংহদের থাকে, সেখানে সাতটি নদী ও জলাশয় থাকায় ভারি বর্ষণ ও জলপ্রবাহের জন্য যাতে প্রাণ বিপন্নের কোন পথ খোলা না থাকে সেজন্য সাতটি বনকর্মীদের দলকে একত্রিত করে ছোট্ট ছোট্ট মনিটরিং সিস্টেম খোলা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে উদ্ধার অভিযান পরিচালনার জন্য বিশেষ দলও মোতায়েন করা হয়েছিল। এছাড়া কচ্ছের অভয়ারণ্য এলাকার ফ্লেমিংগো এবং বুনো গাধাদের জন্য ১৩টি উদ্ধারকারী দল, ৬টি বিশেষ বন্যপ্রাণী দলকেও পাঠানো হয়েছিল।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.