বিভাজনের বিরুদ্ধে পথে কংগ্রেস

 বিভাজনের বিরুদ্ধে পথে কংগ্রেস
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রাস্তায় নামলেন রাহুল গান্ধী । বহু বছর পর কংগ্রেসের একটি কর্মসূচি ঘিরে দলের অন্দরে উন্মাদনা তুঙ্গে । কর্মসূচির নাম ভারত জুড়ো যাত্রা । দক্ষিণ ভারতের কন্যাকুমারী থেকে বুধবার শুরু হলো এই যাত্রা । সমাপ্ত হবে কাশ্মীরে । এই গোটা সফর কংগ্রেস নেতারা সম্পন্ন করবেন পদযাত্রার মাধ্যমে । স্বয়ং রাহুল গান্ধী গোটা রাস্তাই হাঁটবেন । প্রতিদিন রাতে যেখানে দিনের যাত্রা সমাপ্ত হবে , সেখানে কন্টেনারে রাত কাটানো হবে । ভারতের মানুষের সঙ্গে সংযোগ সূত্র গড়ে তোলা এবং মোদি সরকার তথা বিজেপির বিভাজন ও বিদ্বেষের রাজনীতির বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বিপরীত এক স্বাজাত্যপ্রিয়তা গড়ে তোলাই এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন রাহুল গান্ধী । কন্যাকুমারীর যাত্রা শুরুর মঞ্চে যাওয়ার আগে রাহুল যান চেন্নাইয়ের কাছে শ্রীপেরামবুদুরে ।

পিতা রাজীব গান্ধীর স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে প্রার্থনা করেন তিনি । বলেন , আমার বাবা আমাকে ঘৃণার বিরুদ্ধে ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করার শিক্ষা দিয়েছেন । আমি তাই বিশ্বাস করি আজ বিজেপি যতই ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত ঘৃণা ছড়াক দেশে এবং ধর্ম ভাষার ভিত্তিতে বিভাজনের রাজনীতির বিষ বপন করুক , একদিন অবশ্যই জাতি ধর্ম ভাষা নির্বিশেষে মানবিকতা এবং ভারতীয় নাগরিক হিসেবে একতার সৌহার্দ্যই জয়ী হবে । এই অন্ধকার কেটে যাবে বলেই আমার নিশ্চিত বিশ্বাস। এরপর রাহুল হাজির হন কন্যাকুমারীর মঞ্চে । সেখানে এদিন রাজস্থানের অশোক গেহলট থেকে শুরু করে ছত্তিশগড়ের ভূপেশ বাগেল, কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রীরা হাজির ছিলেন । একই সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেসের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা ও পদাধিকারীরা । বস্তুত বহুদিন পর একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি কংগ্রেসের মধ্যে এতটাই আলোড়ন তুলেছে যে , কংগ্রেসের নেতাদের মধ্যে থাকা দূরত্ব ও বিরোধাভাসও দূরে সরে গিয়েছে অন্তত দৃশ্যগতভাবে ।

এর মধ্যেই অশোক গেহলট এদিন ইঙ্গিতপূর্ণ একটি মন্তব্য করেছেন । তিনি বলেন , কংগ্রেসের তাবৎ নেতা ও কর্মীই চাইছেন যাতে রাহুল গান্ধীই আবার সভাপতি হন । অশোক গেহলটের বক্তব্য , এই ভারত জুড়ো যাত্রার উন্মাদনা থেকেই স্পষ্ট যে , কংগ্রেসের ঐক্য এবং সাংগঠনিক শক্তি ধরে রাখার অন্যতম শর্তই হলো গান্ধী পরিবারের নেতৃত্ব । এদিকে ভারত জুড়ো যাত্রার সূচনায় বিজেপি কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না । আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন , হাস্যকর একটি কর্মসূচি । ভারত তো বিচ্ছিন্ন নয় । ভারতকে জোড়ার কী আছে ? বরং রাহুল গান্ধী যদি মনে করেন জওহরলাল নেহরুর কংগ্রেস দেশভাগ করে ভুল করেছে তাহলে তিনি এখন পাকিস্তান , বাংলাদেশকে করে আবার অখণ্ড ভারত কথা ভাবতে পারেন ।

ঘটনাচক্রে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বাংলাদেশ নিয়ে এমন এক সময়ে বিতর্কিত মন্তব্য করলেন , যখন ভারত সফর করছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । আর তাতেই হিমন্তের বেফাঁস মন্তব্য নিয়ে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ প্রত্যাঘাত করে বলেছেন , আসামের মুখ্যমন্ত্রীর আচার আচরণ এরকমই ছেলেমানুষীতে পূর্ণ । তার মন্তব্যে কোনও গভীরতা নেই । তার প্রভূদের খুশি করতেই তিনি এসব কথা বলেন । এদিকে , ভারত জুড়ো যাত্রাকে ‘ ল্যাণ্ড মার্ক ’ কর্মসূচি বলে আখ্যায়িত করলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ।

তিনি বলেছেন , ৩৫০০ কিমির পদযাত্রা দলকে উজ্জীবিত করতে সহায়তা করবে । শারীরিক অসুস্থতার জন্য র‍্যালিতে অংশ নিতে পারেননি বলেও তিনি এদিন লিখিত বার্তায় অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন । তিনি দলীয় সতীর্থদের কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য অভিনন্দনও জানিয়েছেন ।

কন্যাকুমারীর পদযাত্রায় সোনিয়ার বার্তা পড়ে শোনানো হয় । প্রবীণ কংগ্রেস নেতা এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম ভারত জুড়ো যাত্রাকে দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতার যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করেছেন । বিভাজনের শক্তি পরাস্ত না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চলবে বলেও তিনি এদিন উল্লেখ করেছেন ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.