বিমানে অক্সিজেনের সংকট মিটতেই রোগী নিতে ভিড়।

 বিমানে অক্সিজেনের সংকট মিটতেই রোগী নিতে ভিড়।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রাজ্যে উন্নত চিকিৎসার অভাবে এয়ার ইণ্ডিয়ার বিমানে গুরুতর অসুস্থ রোগী স্ট্রেচারে করে কলকাতা নিতে অক্সিজেনের যে সংকট দেখা দিয়েছিল তা মিটে যেতেই এখন প্রতিদিনই রোগী নেওয়া হচ্ছে বিমানে। ইণ্ডিগোর বিমানেও রোগী যাচ্ছে। তবে গুরুতর অসুস্থ রোগী, হোক স্ট্রেচার বা হুইল চেয়ার, যাদের বিমানে নিতে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অক্সিজেনের সাপোর্ট প্রয়োজন সেসব রোগী মূলত এয়ার ইণ্ডিয়ার বিমানেই নেওয়া হয়। গুরুতর অসুস্থ অক্সিজেনের সাপোর্ট দিয়ে রোগী ইণ্ডিগোর বিমানে নিতে নানা জটিল নিয়ম ও শর্ত পূরণ করে ইণ্ডিগোর বিমানে নেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠে রোগীর আত্মীয়স্বজনের কাছে। তাই এয়ার ইণ্ডিয়া গুরুতর অসুস্থ রোগী নিতে পৃথকভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সাহায্য নিচ্ছে। কয়েকদিন আগে এয়ার ইন্ডিয়ার অক্সিজেনের সিলিণ্ডার সংকট দেখা দেয়। সেই কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য আগরতলা থেকে কলকাতা রোগী নিতে অক্সিজেনের সংকটের কারণে নেওয়া যায়নি। একটানা আটদিন এয়ার ইণ্ডিয়া অক্সিজেনের সাপোর্ট দিয়ে গুরুতর অসুস্থ রোগী নিতে পারেনি। সেই কারণে চিকিৎসকের পরামর্শ সত্ত্বেও বহি:রাজ্যে নিতে আগরতলার চার বড় হাসপাতাল জিবি, আইজিএম, টিএমসি এবং আইএলএসে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা না থাকায় অনেক রোগী আটকে গিয়েছিল। যাদের অর্থের জোর আছে, সেসব পরিবার কলকাতা ও বহি:রাজ্য থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স বিপুল টাকা দিয়ে ভাড়া করে আনিয়ে।।।।।।।। কলকাতায় রোগী নিয়ে যান। তারপর এখন এয়ার ইণ্ডিয়ার বিমানে অক্সিজেনের সাপোর্টে রোগী নিতে অক্সিজেনের সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করায় প্রতিদিনই উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগী বিমানে লাইন পড়ে থাকে বলে বিমানবন্দর সূত্রে জানিয়েছে। সোমবারও কৌশিক রায় (22) নামের গুরুতর অসুস্থ এক রোগীকে স্টোরে অক্সিজেনের সাপোর্ট দিয়ে কলকাতায় নেওয়া হয়েছে। কৌশিক রায় দুর্ঘটনার মাথার গুরু আঘাত পেয়েছিলেন। জিবি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এদিকে রাজ্যে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবার অভাবে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিমানে কলকাতার স্ট্রেচারে রোগী নিতে শুধু রোগীর ভাড়াই পড়ছে ১,৩৫,৫০০ টাকার মতো। অক্সিজেনের দিতে হয় আলাদা। রোগীর বিশেষ মাস্ক বাবদও খরচ দিতে হয় আলাদাভাবে ৮০০০ টাকা। বিমানে রোগী দেখভালে একজন চিকিৎসক যেতে হয়। সেই চিকিৎসকের আসা যাওয়ার বিমান ভাড়া ও পারিশ্রমিক দিতে হয় ে পরিবারকে। চিকিৎসক যদি রোগী হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়ে সেইদিনই আগরতলায় ফিরতে না পারেন তাতে চিকিৎসকের থাকা খাওয়ার হোটেল খরচও দিতে হয় রোগীর পরিবারকে। শুধু তাই নয়, রোগীর সঙ্গে কলকাতার রোগী দেখভালে রোগীর পরিবারের তরফে অন্তত পক্ষে দু’জন বা তিনজন যেতে হয়। স্ট্রেচারে রোগীর বিমান ভাড়া ১,৩৫,৫০০ টাকার পর অক্সিজেনের খরচ, চিকিৎসকের বিমান ভাড়া ও রোগীর আত্মীয় দু-তিনজনের বিমান ভাড়া মিলিয়ে আগরতলা থেকে শুধু স্ট্রেচারে একজন রোগী কলকাতায় নিতে দুই লক্ষ টাকার কাছাকাছি, কোনও সময় ভাড়া বেশি থাকলে দুই লক্ষ টাকা, সোয়া দুই লক্ষ টাকা এমনকী প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা লেগে যায়। তারপর কলকাতার গুরুতর অসুস্থ যেই রোগীর বেসরকারী হাসপাতালের চিকিৎসার বাচতো আবার বিপুল টাকা পড়ছে। ফলে রাজ্য থেকে কলকাতা বা বহিরাজ্যে বিমানে রোগী নিতে যেমন ভাড়া পড়ছে বিপুল টাকা, তেমনি সেখানে গিয়ে বেসরকারী সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসার বিপুল খরচ মেটাতে গিয়ে রোগীর অসহা পরিবারের কী দশা হয় তা সহজেই অনুমেয়। সোমবার আগরতলা থেকে অসুস্থ সঞ্জয় বণিক (২৭)-কে বিমানে বসিয়ে চেন্নাই নেওয়া হয়েছে উন্নত চিকিৎসার জন্য। তাতেও বিপুল টাকা দিতে হয়েছে শুধু ইণ্ডিগোর বিমানে ভাড়া বাবদ। রোগীর সঙ্গে আত্মীয়স্বজন মিলে আরও তিনজন গেছেন। তবে রোগীর চিকিৎসক নিতে হয়নি । অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়েনি। শুধু প্রতিদিন কলকাতা, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ ইত্যাদি জায়গায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বিমানে একজন বা দু’জন রোগী নয়, বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে বিভিন্ন বিমানে শতাধিক রোগীকে উন্নত চিকিৎসা করানোর জন্য পরিবার ও আত্মীয়স্বজনেরা নিয়ে যাচ্ছেন। আগরতলা তথা রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে এখনও বাস্তবে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা না থাকায় অসহায় সাধারণ ও গরিব মানুষ ধারদেনা করে, জায়গা সম্পত্তি বিক্রি করে রোগীকে বাঁচাতে সুস্থ করে আনতে বহি:রাজ্যে ছুটে যাচ্ছেন। কলকাতা থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া দিয়ে নিয়ে আসতে ন্যূনতম চার লক্ষ টাকা থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও রাজ্যের প্রধান সরকারী হাসপাতাল জিবিতে বাস্তবভিত্তিক সুপার স্পেশালিটি চিকিৎসা পরিষেবা গড়ে উঠেনি। আইজিএম, টিএমসি হাসপাতালেও নেই উন্নতমানের চিকিৎসা ব্যবস্থা বলে রোগীর আত্মীয়স্বজন সবসময় অভিযোগ করছে। বেসরকারী আইএলএস হাসপাতালেও নেই উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা বলে রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.