এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)
দৈনিক সংবাদ অনলাইনঃ ভারতের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম পুড়ছে তীব্র দাবদাহে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে গরম কমার কোনও আশ্বাস নেই। এদিকে আগামী ৪৮ ঘন্টায় গোটা ভারতে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের উপর এই তাপপ্রবাহ চলবে আগামী চারদিন এবং পাঞ্জাব,হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, দিল্লি এবং উত্তরপ্রদেশের দক্ষিণ অংশে আগামী দু'দিন ধরে চলবে তাপপ্রবাহ। দেশে এখন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রাজস্থানের চুরু নামক এলাকায়। মঙ্গলবার সেখানকার তাপমাত্রা ৫০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের থেকে ৯ ডিগ্রি বেশি। রাজস্থানে তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ মানুষ তাদের স্বাভাবিক কাজ করতে পারছেন না।
এছাড়া হিমাচল প্রদেশের উনার নামক স্থানের তাপমাত্রা ৪৪.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বিলাসপুর ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মান্ডির তাপমাত্রা ৪০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই মরসুমে ঠান্ডার রাজধানী জন্মুতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র দাবদাহ চলছে পশ্চিমবঙ্গেও ৷ কড়া রোদ এবং আর্দ্রতার কারণে এ রাজ্যের মানুষও গরমে অতিষ্ঠ। সকাল ১০টায় কলকাতার তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ইউরোপের ইতিহাসে অতি উষ্ণ আটটি গ্রীষ্মের পাঁচটিই রেকর্ড করা হয়েছে গত ১০ বছরে। গত পাঁচ বছরে সাইবেরিয়ার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড ভেঙেছে দু'বার। পৃথিবীর শীতলতম মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকায় সর্বোচ্চ ১৮.৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারীতে। আফ্রিকার বহু দেশে খরা আর ধুলিঝড় বেড়েছে কয়েক গুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ২০১০ সাল থেকে ২০২১ পর্যন্ত দাবদাহে বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত মানুচষর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি।
কয়েক দশক ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধির যে সতর্কবাণী বিশেষজ্ঞরা দিয়ে আসছিলেন, তারই বাস্তবতা এই অব্যাহত দাবদাহ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, চলতি শতকে পৃথিবীর এই উশষ্ণায়ন বাড়তে থাকবে প্রতি বছরই।
মানুষের দৈনন্দিন কার্যকলাপের ফলে মাত্রাতিরিক্ত কার্বন সহ অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃস্বরণের ফলে দীর্ঘমেয়াদে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা “গ্লোবাল ওয়ার্মিং'। উন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হলেও, গ্রিনহাউস গ্যাসগুলোর অর্ধেক নির্গত হয় এই দেশগুলো থেকেই। এই ধারা অপরিবর্তিত থাকলে, অর্থাৎ বিজনেস এজ ইউজুয়াল চলতে থাকলে ২০৫০ সালের পর পৃথিবীর তাপমাত্রা দুই থেকে সাড়ে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাবে।
বিশ্বের উষ্ণায়ন দীর্ঘমেয়াদে জলবায়ু আর্থাৎ কোনও স্থানের ৩০ বছরের বেশি সময়ের আবহাওয়া তথা বায়ু, তাপ, বৃষ্টিপাত প্রভৃতির গড় পরিবর্তনকেই সুচক হিসাব গ্রাহ্য করেন আবহাওয়াবিদরা। তাদের মতে, দাবদাহ হল স্বল্পমেয়াদে আবহাওয়ার তীব্রতা । সাধারণভাবে কোনও এলাকার তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে সেটি পরপর পাঁচ দিন চলমান থাকলে তাকে দাবদাহ বা তাপদাহ বলা হয়।
তবে উষ্ণতার অনুভূতি যেহেতু তাপমাত্রা ছাড়াও আর্দ্রতা এবং অন্যান্য অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করে, তাই বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বা ওয়ার্ল্ড মেট্রোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের দেওয়া এই সংজ্ঞাকে বিভিন্ন দেশ নিজ নাগরিকদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার সামর্থা এবং বিপদজনক মাত্রার বিবেচনায় দাবদাহের 'থেসহোল্ড বা সর্বোচ্চ মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়েছে। প্রশ্ন হতেই পারে, বছরে পাঁচ-সাত দিন একটু বেশি গরম থাকবে, তাতে সমস্যা কোথায়? রেড ক্রিসেন্টের গবেষণা থেকে তাপদাহের কিছু স্বাস্থ্যগত প্রভাব জানা যায়। সার্বিকভাবে পরিবেশের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে মানব শরীর নিজেকে ঠান্ডা রাখার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। তাই এর বেশি তাপমাত্রা স্বাস্থ্যবান লোকের জন্য
বিপজ্জনক। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ ইনস্টিটিউটের গবেষণায় জানানো হয়েছে, দাবদাহের সময় অন্তত বিশ শতাংশ মৃত্যু বেড়ে যায়। বাড়ে ডায়রিয়াসহ নানাবিধ রোগের প্রকোপ।
দাবদাহের কৃষি উৎপাদন কমে যাওয়ার বা নষ্ট হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। পাঁচ-সাত দিন মেয়াদি একটা বন্যা যে ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রভাব ফেলে, প্রায় একই ধরনের প্রভাব ফেলে দাবদাহে।
-----------সন্দীপ বসু।