বিমান যাত্রীর সঙ্গে ইণ্ডিগোর কর্মীর অভব্য আচরণ, মামলা

 বিমান যাত্রীর সঙ্গে ইণ্ডিগোর কর্মীর অভব্য আচরণ, মামলা
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ইণ্ডিগোর বিরুদ্ধে আবারও বিমান যাত্রীকে হেনস্তা, মানসিক যন্ত্রণা দেওয়া, প্রচণ্ডভাবে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। এবারও আগরতলা এমবিবি বিমানবন্দরে ইণ্ডিগোর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে। ইণ্ডিগোর কতিপয় কর্মীর অভব্য আচরণের বিরুদ্ধে ক্যান্সারে আক্রান্ত ক্ষুব্ধ এক মহিলা রোগী পুলিশে মামলাও করেছেন। জানা গেছে, বুধবার আগরতলা থেকে ইণ্ডিগোর বেলা ১টা ২০ মিনিটে ৬ই- ৬৫১৯ নম্বর বিমানে কলকাতায় যাচ্ছিলেন সঙ্ঘমিতা সেনচৌধুরী (৩০) নামের যাত্রী। কলকাতায় পৌঁছে কলকাতা থেকে ইণ্ডিগোর অপর বিমানে চেন্নাই যাওয়ার জন্য আগরতলা এমবিবি বিমানবন্দরে এসে রিপোর্ট করেন। ইণ্ডিগোর বিমানে ১৫ কিলো পর্যন্ত ফ্রি একটি লাগেজ নেওয়া যায় ও হাতে করে বিমানে ৭ কিলো পর্যন্ত ফ্রি একটি লাগেজ নেওয়া যায়। বিশেষ প্রায়োরিটি হিসাবে সঙ্গে ল্যাপটপ থাকলে বিমানে ল্যাপটপও হাতে করে নেওয়া যায়। হাতে করে লেপটপ নিতে কোনও বাধা নেই। সঙ্ঘমিতা সেনচৌধুরী এইসব নিয়ম মেনে লাগেজ ও ল্যাপটপ নিয়ে বিমানবন্দরে আসেন। রিপোর্টিং কাউন্টারে প্রথমে তাকে বোর্ডিং কার্ডও দেওয়া হয় বিমানে যাওয়ার জন্য। কিন্তু পরক্ষণেই ইণ্ডিগোর গ্রাউন্ড স্টাফ নবীন থাপা নামের কর্মী এসে সঙ্ঘমিতার সঙ্গে অযথা অভব্যতা শুরু করেন। ইণ্ডিগোর ওই কর্মী আপত্তি জানান, হেও লাগেজ ও লেপটপ দুটিই হাতে করে বিমানে নিতে পারবেন না। তখন সঙ্ঘমিতা ইণ্ডিগোর ওই কর্মীকে স্পষ্টতই জানিয়ে দেন ইণ্ডিগোর কাস্টমার কেয়ারের সঙ্গে কথা বলেই তাদের পরামর্শ মতো লাগেজ ও ল্যাপটপ নিয়ে বিমানে যেতে আসেন। কিন্তু ইণ্ডিগোর নবীন থাপা নামের ওই কর্মী সঙ্ঘমিতার কোনও কথাই মানতে রাজি নয়। তার হাতে যে লাগেজটি রয়েছে সেটি নথিভুক্ত লাগেজ হিসাবে ওজন করে পুরো টাকা মিটিয়ে দিয়ে নিতে হবে বলে ইণ্ডিগোর কর্মী জানিয়ে দেন। শুধু লেপটপ ছাড়া আর কোনও লাগেজ বিমানে হাতে করে নেওয়া যাবে না বলেও নবীন থাপা স্পষ্টত হুমকির সুরে জানিয়ে দেন বলে যাত্রী সঙ্ঘমিতার অভিযোগ। শুধু ইণ্ডিগোর কর্মীর অভব্যতা হয়রানির এখানেই শেষ নেই। বিমান যাত্রী সঙ্ঘমিতা সেনচৌধুরীর হাত থেকে জোর করে বোর্ডিং কার্ডটিও নিয়ে যান যাতে বিমানে না যেতে পারেন। তারপরই সঙ্ঘমিতা ইণ্ডিগোর সেই কর্মীকে অত্যন্ত ভদ্রভাবে জানান তিনি একজন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী। থাইরয়েড ক্যান্সারে ভুগছেন। দু’মাস আগে কলকাতার টাটা মেমোরিয়াল ক্যান্সার হাসপাতালে অপারেশনও হয়েছে তার। এখন চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে তার রেডিও আইডিন থেরাপি চলছে। তাই রেডিও আইডিন থেরাপি নিতে চেন্নাই যাচ্ছেন। সঙ্গে থাকা ক্যান্সার চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্রও ইণ্ডিগোর সেই কর্মীকে দেখাতে চাইলে কোনও কাগজপত্র দেখতে রাজি নয় ইণ্ডিগোর কর্মী। উল্টো ইণ্ডিগোর কর্মী জঘন্য ভাষায় বলে দেন তাকে দেখলে ক্যান্সার আক্রান্ত মনে হয় না। সম্পূর্ণ ফিট ও ফাইন দেখাচ্ছে বলে অভব্যতা করেন বলেও সঙ্ঘমিতার অভিযোগ। সঙ্ঘমিতা একাই বিমানে যাওয়ার জন্য আসেন। ইণ্ডিগোর ওই কর্মী যখন সঙ্ঘমিতাকে প্রচণ্ডভাবে মানসিক যন্ত্রণা, হয়রানি ও হেস্তনেস্ত করছেন তখন সব ঘটনা দেখছেন ইণ্ডিগোর আরও দু-তিন কর্মীও। তারা তাদের কর্মীকে মহিলা বিমান যাত্রীর সঙ্গে এই ধরনের জঘন্য আচরণের জন্য সরিয়ে আনেননি বরং বিমানবন্দরে ইণ্ডিগোর সিনিয়র এক কর্মীও নবীন থাপাকে অভব্যতায় সাহায্য করেন বলেও অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত সঙ্ঘমিতার কাছ থেকে হাতের লাগেজের জন্য ওজন করে ৩৮৫০ টাকা নেয় ইণ্ডিগো। যদিও তার লাগেজের ওজন ৭ কিলো থেকে কম ছিল বলে সঙ্ঘমিতা জানান। তার পর ক্ষুব্ধ সঙ্ঘমিতা এই বিমানে কলকাতা পৌঁছে বিমানবন্দর থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে লিখিতভাবে নবীন থাপার নাম দিয়ে তাকে মানসিক যন্ত্রণা দেওয়া, হয়রানি, তার সঙ্গে অভব্যতা, হুমকি দেওয়া সবকিছু জানিয়ে এফআইআর করেন। কলকাতা বিমানবন্দরে ইণ্ডিগোর কাস্টমার কেয়ারের কাছে পুরো বিষয়টি জানান এই মহিলা যাত্রী। অভিযোগ জানিয়ে এসে চেন্নাইর বিমানের জন্য কলকাতা বিমানবন্দরে যখন এসে বসেন সঙ্ঘমিতা তখন ইণ্ডিগো থেকে পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে তাকে অনুরোধ করেন কাস্টমার কেয়ারে আসার জন্য। কাস্টমার কেয়ার থেকে তাকে বলা হয় একটি হ্যাণ্ড লাগেজ ও ল্যাপটপ বিমানে নেওয়া যায়। তাতে ১০ কিলো পর্যন্ত ফ্রি রয়েছে। অথচ তার হ্যাণ্ড লাগেজটির ওজন ৭ কিলোর নিচে ছিলো। ল্যাপটপ ও লাগেজ মিলে ১০ কিলোর অনেক নিচে রয়েছে। কলকাতা বিমানবন্দরে ইণ্ডিগোর কর্তৃপক্ষের তরফে আগরতলা বিমানবন্দরের ইণ্ডিগোর কর্মীর এই নোংরা আচরণ ও হয়রানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমাও চান । ইণ্ডিগোর নবীন থাপার বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও তারা জানান। বৃহস্পতিবার দুপুরে চেন্নাইয়ে সঙ্ঘমিতাকে কাস্টমার কেয়ার থেকে ফোন করে জানানো হয় লাগেজের জন্য নেওয়া ৩৮৫০ টাকা ইণ্ডিগোর তরফে ফেরত দেওয়া হবে। সঙ্ঘমিতার বাড়ি আগরতলার পুরানো জেলআশ্রম রোডে। তার পিতা অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী সুশান্ত সেনচৌধুরী জানান, তার মেয়ের সঙ্গে ইণ্ডিগোর এই জঘন্য আচরণ চরম অমানবিক। ইণ্ডিগো যাত্রী পরিষেবায় বিমান যাত্রীর সঙ্গে ভদ্র, সভ্য ও মানবিক আচরণ করার জন্য তিনি দাবি জানান।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.