বিরল রক্তের গ্রুপের সন্ধান গুজরাটে

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

এতদিন চিকিৎসক মহলে জানা ছিল , বিরলতম এই ব্লাড গ্রুপের রোগী বিশ্বে আছেন মাত্র ১০ জন । এবার সেই শ্রেণির রক্তের সন্ধান পাওয়া গেল গুজরাটের রাজকোটে ৬৫ বছরের এক ব্যক্তির ধমনীতে । ওই ব্যক্তি সম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত হন । সেই সময়ই তার রক্তের গ্রুপ বিন্যাস করে ডাক্তাররা দেখতে গেলে তারা স্তম্ভিত হয়ে যান । এতদিন পর্যন্ত আমরা চার ধরনের রক্তের গ্রুপ জানতাম । এতদিন গেছে গ্রুপ জানতাম । যথাক্রমে এ , বি , ও এবং এবি । রাজকোটের ওই ব্যক্তির শরীরে যে গ্রুপের রক্ত পাওয়া তা বিরল ।

ওই রক্তের গ্রুপের নাম ইএমএম নেগেটিভ । চিকিৎসকদের স্তম্ভিত হওয়ার কারণ , এই বিরল রক্তের গ্রুপ নিয়ে পৃথিবীতে এতদিন মাত্র ৯ জন মানুষ ছিলেন । রাজকোটের ওই বৃদ্ধকে নিয়ে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়াল ১০। অর্থাৎ ইনি হলেন ভারতের প্রথম এবং বিশ্বের দশম ব্যক্তি যার শিরা ধর্মনীতে বইছে ইএমএম নেগেটিভ শ্রেণির রক্ত । চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে , মানবদেহে ৪২ ধরনের ব্লাড সিস্টেম রয়েছে । যেমন এ , বি , ও , আরএইচ ডাফি ইত্যাদি । কিন্তু সাধারণত মাত্র চারটি রক্তের গ্রুপ বিবেচনা করা হয়। তবে ৪২ ধরনের পাশাপাশি আরও ৩৭৫ ধরনের অ্যান্টিজেন রয়েছে যার মধ্যে ইএমএম বেশি ।

ঘটনা হল পৃথিবীতে এমন মাত্র ১০ জন মানুষ আছেন যাদের রক্তে এএমএম উচ্চ – ফ্রিকোয়েন্সি অ্যান্টিজেন নেই , যা তাদের স্বাভাবিক মানুষের থেকে আলাদা করে তোলে । এই ধরনের বিরল রক্তের গ্রুপের লোকেরা তাদের রক্ত কাউকে দিতে পারে না বা কারও কাছ থেকে নিতে পারে না । সুরাটের সমর্পণ রক্ত দান কেন্দ্রের ডাক্তার সন্মুখ জোশী বলেছেন , ‘৬৫ বছর বয়সি রাজকোটের ওই ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন । উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজকোট আমদাবাদের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । সেখানে তার হার্ট সার্জারির জন্য রক্তের প্রয়োজন ছিল । সেই সূত্রে তার রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা করা হয় ।

প্রথম যে ল্যাবরেটরিতে তার রক্তের নমুনা নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে তার রক্তের গ্রুপ পাওয়া যায়নি । তখন নমুনাগুলি সুরাটে আমাদের রক্তদান কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল । ডাক্তার জোশী জানান , পরীক্ষার পরে দেখা যায় । ওই রক্ত কোনও গ্রুপের সঙ্গে মিলছে না । পরে বৃদ্ধের রক্তের নমুনা নিয়ে তার আত্মীয়রা আমেরিকায় যান । সেখানেই ধরা পড়ে , বিরলতম শ্রেণির রক্ত বইছে তার শরীরে । আমেরিকায় ওই ল্যাবের তরফে জানানো হয় , রাজকোটের ব্যক্তি বিশ্বে দশম যার শিরায় এই বিরল শ্রেণির রক্ত বইছে । সূত্রের খবর , ‘ ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন ’ ( আইএসবিটি ) জানায় , এই রক্তের গ্রুপ ইএমএম নেগেটিভ ।

কারণ রক্তের লোহিত কণিকায় যে অ্যান্টিজেন ইএমএম নামে থাকে , ওই ব্যক্তির রক্তে তা নেই। ইএমএম নেগেটিভের মতো বিশ্বের আরও একটি বিরলতম রক্তের গ্রুপ হল ‘ গোল্ডেন ব্লাড ‘ । এই গ্রুপের রক্ত বিশ্বের মাত্র ৪৩ জনের মধ্যে পাওয়া যায় । এই ব্লাড গ্রুপের মানুষের যদি রক্তের প্রয়োজন হয় , তাহলে তাদের প্রবল সমস্যায় পড়তে হয় । কারণ পৃথিবীতে এমন গ্রুপের রক্তদাতা খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন ।
চিকিৎসকরা জানান , যাদের আরএইচ ফ্যাক্টর শূন্য তাদের শরীরে গোল্ডেন ব্লাড দেখা দেয় । এই ধরনের রক্তে যাদের তাদের আরএইচ সিস্টেমে ৬১ টি সম্ভাব্য অ্যান্টিজেনের অভাব রয়েছে ।

এই ব্লাড গ্রুপ নিয়ে যারা বেঁচে থাকেন , তাদের জীবন ঘোরতম অনিশ্চয়তায় ভরা । গোল্ডেন ব্লাড প্রথম ধরা পড়ে ১৯৬১ সালে । ১৯০১ সালে অস্ট্রিয়ান চিকিৎসক কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার প্রথম রক্তের শ্রেণিবিভাগ শুরু করেন । ১৯০৯ সালে তিনি জানান , মানব দেহে মূলত চার প্রকারের রক্ত বইছে — এ , বি , এবি এবং ও । রক্তের উপর গবেষণার স্বীকৃতি হিসাবে কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার ১৯৩০ সালে নোবেল পুরস্কার পান । তিনি জানান , যে কোনও জীবের রক্তে সাধারণত চারটি জিনিস পাওয়া যায় । লোহিত রক্তকণিকা ( আরবিসি ) , যার কাজ সারা শরীরে অক্সিজেন সঞ্চালন করে কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দেওয়া ।

তেমনই শ্বেতকণিকা অর্থাৎ হোয়াইট ব্লাড সেল ( ডাব্লিউবিসি ) শরীরকে যে কোনও ধরনের বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করে । প্লেটলেট হল সেই কণা যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে এছাড়া রক্তে রয়েছে আরও একটি উপাদান , প্লাজমা । প্লাজমা মানে এমন তরল যা লবণ এবং এনজাইমকে যোগাযোগ করে । রক্তের অভ্যন্তরে রক্তের অ্যান্টিজেন প্রোটিন রয়েছে , যা অনেকগুলি কাজ একযোগে সম্পাদন করে ।

তারা বাইরের অনুপ্রবেশের তথ্য দেয় । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে কাজ করে। সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে । যদি অ্যান্টিজেন না থাকে তাহলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে না । রক্তের সংসারে আশ্চর্যের অভাব নেই । এ গ্রুপের লোকদের যদি বি শ্রেণির রক্ত দেওয়া হয় তাহলে ইমিউন সিস্টেম শরীরে আসা আরবিসিকে শত্রু হিসেবে আক্রমণ করে । অর্থাৎ শরীরে গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে । এর ফলে একজন ব্যক্তির মৃত্যুও ঘটতে পারে ।

Dainik Digital

Recent Posts

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

19 hours ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

19 hours ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago

রাজধানীতে চাঁদার জুলুমে অতিষ্ঠ মানুষ!!

অনলাইন প্রতিনিধি:-মুখ্যমন্ত্রীডা. মানিক সাহার নির্বাচনি এলাকার আপনজন ক্লাবের চাঁদার নামে বড় অঙ্কের তোলাবাজির অভিযোগের রেশ…

3 days ago

ইন্ডিয়ান বুকে রাজ্যের মেয়ে ঝুমা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ইচ্ছে ছিলো অনেক আগে থেকেই। অবশেষে নিজের ইচ্ছেকেই বাস্তবে পরিনত করলো ঝুমা দেবনাথ।…

3 days ago

সুশাসনে আইনশৃঙ্খলা!

রাজ্যে কি সত্যিই আইনের শাসন রয়েছে?সাধারণ মানুষ কিন্তু প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।সরকার বলছে রাজ্যে সুশাসন…

3 days ago