বিরোধীদের অক্সিজেন

 বিরোধীদের অক্সিজেন
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দক্ষিণের একমাত্র রাজ্যও হাতছাড়া হয়ে গেল বিজেপির। হাতছাড়া হলো এমন একটা সময়ে,যখন আর এক বছরের মাথায় আগামী ২০২৪-এর এপ্রিল-মে মাসে দেশে লোকসভার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।যদিও লোকসভা ভোটের আগে এ বছর নভেম্বর নাগাদ রাজস্থান,তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড় এবং মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের সূচি রয়েছে।কিন্তু লোকসভার ভোটের আগে কর্ণাটকের মতো এতো বড় রাজ্যে গেরুয়ার ভরাডুবি বিজেপির পলিটিক্যাল থিঙ্ক ট্যাঙ্কদের জন্য বড়সড় ধাক্কা সেটা উপলব্ধি করতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হওয়ার প্রয়োজন নেই। এর আগে হিমাচল প্রদেশেও বিজেপির বিপর্যয় হয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই বিজেপি দলকে যতই উত্তর ভারতের রাজনৈতিক পার্টি হিসাবে বলা হোক না কেন, উত্তরে হিমাচলে পরাজয়, আর দক্ষিণে শিবরাত্রির সলতে কর্ণাটকে ক্ষমতাসীন দলের মুখ থুবড়ে পড়ার ঘটনা যে কোনওভাবেই মোদি শাহর জন্য ভালো লক্ষণ নয় সেই বিষয়টি মোটামুটি প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে।কর্ণাটকে এবার নির্বচনে মোট ১৯টি জনসভা এবং ৬টি রোড শো করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজেও মাটি কামড়ে ঘাঁটি গেড়ে পড়েছিলেন কর্ণাটকে। কিন্তু হিমাচলের মতোই কর্ণাটকেও গেরুয়া শিবিরের পরাজয় বার্তা দিয়ে দিল নরেন্দ্র মোদি এখন আর অপ্রতিরোধ্য নয়।বরং মোদিম্যাজিক ক্রমশই ভ্যানিশ হয়ে যাচ্ছে।কর্ণাটকের এই ফলাফল একটি রাজ্যের বিধানসভার দখল নেওয়ার বিষয় হলেও,কার্যত এই ফলাফল দেশের জাতীয় রাজনীতির আগামী দিনের পথচলার নির্ণায়ক হতে চলেছে এটা পদ্ম শিবিরও বেশ ভালো করে অনুধাবন করতে পারছেন।কারণ কর্ণাটকে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বিজেপি শুধু একটি রাজ্য হাতছাড়া করেনি,বরং গোটা দক্ষিণ ভারত থেকে বিজেপি কার্যত মুছে গেছে।যে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কোনঠাসা করার জন্য মোদি-শাহরা কংগ্রেস মুক্ত ভারতের ডাক দিয়েছিলেন,সেই কংগ্রেসই একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের দখলভার নিজের হাতে নিচ্ছে বিজেপিকে পরাস্ত করে।লোকসভা ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে এটা কোনওভাবেই গেরুয়া শিবিরের জন্য সুখের বার্তা নয়।এই পরাজয় মোদির ব্যক্তিগত ইমেজকে যেমন প্রশ্নের মুখে এনে দাঁড় করাবে।তেমনি দলে ও সরকারে মোদি শাহর একচ্ছত্র রাজত্বও চ্যালেঞ্জের মুখে আসতে পারে।দলে, সরকারে, সংগঠনে মোদি শাহর প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে যারা রয়েছেন,তারাও যে এই বিপর্যয়কে দুই নেতার ব্যর্থতা হিসাবে দেখবেন তা হলফ করেই বলা যায়।কিন্তু প্রশ্ন হলো,ঘরে-বাইরে এই সংকট থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য মোদ-শাহ জুটি কী পদক্ষেপ নেবেন তা নিয়েও রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। বলা হচ্ছে হিমাচলের পর কর্ণাটকের বিপর্যয় অনিবার্যভাবেই আগামী দিনের জাতীয় রাজনীতির উপর ছায়া ফেলতে চলেছে তা আঁচ করে বিকল্প পরিকল্পনা আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছেন এই জুটি। তাই বহু প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় এবার বড়সড় রদবদলের পথে হাঁটতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি সরকার।আর প্ল্যান- টু হচ্ছে,কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার পুরো চেহারা বদলে দেওয়ার পর লোকসভার ভোট মে মাস থেকে এগিয়ে এনে ডিসেম্বরে একসাথে চার রাজ্যের বিধানসভার সঙ্গে একত্রে করে দেওয়া গেলে এক ঢিলে অনেকগুলো পাখি মারা সম্ভব হবে।এতে করে যেমন ৪ রাজ্যের বিধানসভার ভোটে সম্ভাব্য বিজেপির খারাপ ফলের প্রভাব লোকসভার ভোটে পড়বে না,তেমনি বিরোধীদের প্রস্তাবিত একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী করার ফর্মুলা মার খাবে।কারণ বিরোধী জোটের সম্ভাব্য আদল বা চেহারাটাই যেহেতু এখনো রূপ দেওয়া যায়নি,তাই এই অল্প সময়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সেই প্রস্তুতি নেওয়া বিরোধীদের পক্ষে সম্ভব হবে না।কিন্তু সমস্যা হল, ইচ্ছেমতো চাইলেই সবকিছু যথাযথভাবে রূপায়ণ করা যায় না। কারণ,২০২৪ সালে লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির ১ নম্বর এজেন্ডা হলো রামমন্দিরের শিলান্যাস এবং দ্বিতীয় এজেন্ডা সেন্ট্রাল ভিস্তার উদ্বোধন।কিন্তু সংঘ পরিবার এতদিন যে পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছে তাতে অযোধ্যার রামমন্দিরের নির্মাণ কাজ জানুয়ারীর শেষদিকে সম্পন্ন হলে ফেব্রুয়ারীতে তা উদ্বোধন করা যাবে।এই অবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ের আগে নির্মাণ কাজ শেষ না করে উদ্বোধন সম্ভব হচ্ছে না। অথচ এই সময়ের জন্য বসে থাকার অর্থই হল প্রতিপক্ষ বিরোধী শক্তিকে জোটবদ্ধ হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া।যা কোনওভাবেই বর্তমান পরিস্থিতিতে বুদ্ধিমানের কাজ নয়।তাছাড়া যে কংগ্রেসকে বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন কৌশলে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। এখন কর্ণাটকে বড় জয়ের পর কংগ্রেসের পুনরুত্থানকে আটকানো বাস্তবিক অর্থেই কঠিন।সবমিলিয়ে কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল জাতীয় রাজনীতিতে নতুন এক শুরুর ইঙ্গিত কি না সেটাই এখন দেখার।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.