বিলুপ্তপ্রায় বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ সংরক্ষণ শুরু সুন্দরবনে

 বিলুপ্তপ্রায় বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ সংরক্ষণ শুরু সুন্দরবনে
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বিলুপ্ত হতে থাকা বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ সংরক্ষণ করতে আরও একধাপ এগিয়ে গেল সুন্দরবন ব্যঘ্র প্রকল্প। সোমবার ছিল আন্তর্জাতিক কচ্ছপ দিবস। সেই উপলক্ষে সুন্দরবনের সজনেখালিতে আয়জন করা হয় এক বিশেষ কর্মশালা। সেই কর্মশালার লক্ষ্য, একেবারে বিলুপ;তপ্রায় বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপের আরও বেশি করে সংরক্ষণ করা। এদিন একটি বাটাগুর বাসতি কচ্ছপের পিঠে একটি ট্রান্সমিটার বসানো হয়। যাকে পরীক্ষামূলকভাবে গভীর জঙ্গল লাগোয়া নদীতে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে পশ্চিমবঙ্গের বনদপ্তরের তরফে বলা হয়েছে। ট্রান্সমিটারের মাধ্যমেই বাটাগুর বাসতি প্রজাতির কচ্ছপের গতিবিধি, পছন্দের ও খাদ্যের রকমভেদ- সহ নানা ধরনের তথ্য জানা যাবে।

চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি একই ভাবে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প বাটাগুর বাসকা প্রজাতির ৯ টি কচ্ছপের পিঠে অত্যাধুনিক ট্রান্সমিটার বসিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় সুন্দরবনের নদীতে। যদিও নোনাজলে অনেকসময় ট্রান্সমিটার বিকল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেই সময় ছেড়ে দেওয়া ৯ টি কচ্ছপের মধ্যে ২ টি কচ্ছপ আবার নদীপথে চলে গিয়েছিল প্রতিবেশী বাংলাদেশে। ওই দেশের বনকর্মীরা ট্রান্সমিটার লাগানো ওই দুটি কচ্ছপকেই উদ্ধার করেন। আবার সেই দু’টি কচ্ছপকে আজ ছেড়ে দেওয়া হবে নদীতে।
ইতিমধ্যেই ট্রান্সমিটার লাগানো কচ্ছপগুলির থেকে হরেকরকমের তথ্য পেয়েছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও টার্টেল সারভাইভাল অ্যালায়েন্সের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা। সেই তথ্য নিয়ে কর্মশালায় আলোচিত বনদপ্তর সূত্রে খবর, একসময় সুন্দরবন থেকে শুরু করে মায়ানমার, থাইল্যান্ড থেকে মালেশিয়া উপকূল পর্যন্ত এই বিশেষ ধরনের কচ্ছপের বসতি ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই প্রজাতির কচ্ছপ বিলুপ্ত হয়ে যেতে বসেছে।
১৯৯৫-৯৬ সালে বনদপ্তরের তরফে সমুদ্র তীর থেকে অলিভ রিডলে বা সামুদ্রিক কাঠা প্রজাতির কচ্ছপের ডিম সংগ্রহ করে তা ফোটানো হয়। কিন্তু সেই নবজাতক কচ্ছপগুলির মধ্যে বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপের সন্ধান পায় বনদপ্তর। সেই থেকেই এই বাটাগুর বাসতি প্রজাতির কচ্ছপের সংরক্ষণ শুরু হয় সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পে। সুন্দরবনের সজনেখালিতে আলাদা একটি পুকুর তৈরি করে সেখানেই বেশ কিছু বছর ধরে এই কচ্ছপ সংরক্ষণ ও তার প্রজনন করে চলেছে ব্যাঘ্র প্রকল্প। মাত্র ১২ টি কচ্ছপ থেকে বংশবৃদ্ধি হয়ে এখন বর্তমানে ৩৭০ টি বাটাগুর বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে ব্যাঘ্র প্রকল্পের কাছে। তবে বংশবৃদ্ধি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমানে সজনেখালির পাশাপাশি দোবাঁকি, খাটোয়াঝুরি ও হরিখালিতে এদের সংরক্ষণ ও প্রজননের ব্যবস্থা করেছে বনদপ্তর।

এবার লুপ্তপ্রায় কচ্ছপদের বাঁচাতে সুন্দরবনের স্কুলের পড়ুয়া এবং স্থানীয় মৎস্যজীবীদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সোমবার কচ্ছপ নিয়ে একটি পোস্টারও প্রকাশ করা হয়েছে। যেখানে স্থান পেয়েছে প্রায় ২০ টি কচ্ছপ। যার মধ্যে গাঙ্গেয় কাছিম ( নিলসনিয়া গ্যাঞ্জেটিকা), ময়ূরপঙ্খী ( নিলসনিয়া হুরাম) সহ প্রায় ১৪ টি লুপ্তপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে। এই বিশেষ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রধান মুখ্য বনপাল জেটি ম্যাথিউ, সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা তাপস দাস সহ টার্টেল সারভাইভাল অ্যালায়েন্সের ডিরেক্টর শৈলেন্দ্র সিং ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বনবিভাগের ডিএফও মিলন কান্তি মন্ডল। একদিকে যখন সুন্দরবনের কচ্ছপ কর্মশালা চলছে তখন দক্ষিন চব্বিশ পরগণার ঠাকুরনগরন এলাকায় বাগদার হেলেঞ্চা বাজার থেকে ২২ তি ভারতীয় প্রজাতির কচ্ছপ উদ্ধার করেন বনদপ্তরের আধিকারিকরা। বনগাঁর রেঞ্জের বন অধিকর্তা চিরব্রত রায় বলেছেন, ‘এদিন হেলেঞ্চা এবং ঠাকুরনগর বাজার থেকে ২২ টি কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়েছে , এগুলো ভারতীয় প্রজাতির। খবর পেয়ে বিক্রেতারা কচ্ছপগুলো ফেলে চম্পট দিয়েছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.