বিলুপ্ত তাসমানিয়ান বাঘ ফিরিয়ে আনার আশায় দিন গুনছেন বিজ্ঞানীরা

 বিলুপ্ত তাসমানিয়ান বাঘ ফিরিয়ে আনার আশায় দিন গুনছেন বিজ্ঞানীরা

Now extinct, Tasmanian Tiger (thylacine) in Hobart Zoo Tasmania;Australia. 1933. (Photo by: Universal History Archive/Universal Images Group via Getty Images)

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

৮৬ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া তাসমানিয়ান বাঘকে প্রাণীজগতের বুকে আবার ফিরিয়ে আনতে লক্ষ লক্ষ ডলারের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা । ত্রিশের দশকে শেষ তাসমানিয়ান বাঘটি পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় , যা মূলত ‘ থাইলাসাইন ‘ হিসেবে পরিচিত ছিল । প্রাণী বিজ্ঞানের তথ্য বলছে , তাসমানিয়ান বাঘের বৈজ্ঞানিক নাম থাইলাসাইনাস সাইনোসিফেলাস । পিঠে সাদা ডোরাকাটা দাগের কারণে নামের শেষে ‘ বাঘ ‘ পরিচয় জুড়ে নিতে পেরেছিল ‘ থাইলাসাইন ‘ । কিন্তু এটি আসলে মারসুপিয়াল বা এক ধরনের অস্ট্রেলিয়ান স্তন্যপায়ী গোত্রের প্রাণী বলে আজও প্রাণী বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করেন । সেই থাইলাসাইনাসরা নিজেদের থলিতে করে বাচ্চা লালন – পালন করতে । যা কার্যত বাঘের স্বভাবের মধ্যে পড়ে না । কিন্তু ওই প্রাণীর দাতের এবং শারীরিক গঠন থেকে বিজ্ঞানীরা ওই প্রাণীটিকে বাঘের সমগোত্রীয় বলে ধারনা করে নেন।গবেষকরা আশাবাদ ব্যক্ত করলেও , তাসমানিয়ান বাঘ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশ্বের একাধিক তাবড় প্রাণী বিজ্ঞানী । তাদের কথায় , বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীর ‘ পুনরুত্থান ‘ স্রেফ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতেই সম্ভব , বাস্তবে নয় । অস্ট্রেলিয়ান ও মার্কিন বিজ্ঞানীরা একই ডিএনএ – বিশিষ্ট মারসুপিয়াল প্রজাতির জীবিত কোনো প্রাণী থেকে স্টেম সেল নিয়ে , জিন সম্পাদনা প্রযুক্তির মাধ্যমে এই বিলুপ্ত প্রাণীটিকে ফিরিয়ে আনা বা এর খুব কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের প্রাণী নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছেন । অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের থাইলাসিন ইন্টিগ্রেটেড জেনেটিক রিস্টোরেশন রিসার্চ বা ট্রিগার নামে একটি ল্যাব তৈরির জন্য ৩৬ লক্ষ ডলার অনুদান দেওয়া হয়েছে । এই ল্যাব তৈরির পর বিলুপ্তপ্রায় এই বাঘটিকে আবারও পৃথিবীতে আনার চেষ্টা করবেন বিজ্ঞানীরা । তাসমানিয়ান মানবসভ্যতা তাসমানিয়ান বাঘের সংখ্যা হ্রাস পায় । এরপর ডিঙ্গো নামে অস্ট্রেলিয়ান কুকুরের আগমনের পর তাদের আক্রমণে তাসমানিয়ান বাঘের সংখ্যা আবারও হ্রাস পায় । বাঘ নিয়ে করছেন গবেষণাটি পরিচালনা মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অ্যান্ড্রু পাস্ক । তিনি বলেছেন , ‘ আমার বিশ্বাস , আগামী দশ বছরের মধ্যেই আমরা আমাদের প্রথম থাইলাসাইন শাবক আনতে পারবো । হাজার হাজার বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় পা রাখার তারপর একসময় শুধু তাসমানিয়ার দ্বীপে এগুলোর দেখা মিলত এবং অবশেষে বিলুপ্তই হয়ে যায় । প্রায় ৩ হাজার বছর আগে , তাসমানিয়ান টাইগার অস্ট্রেলিয়াজুড়ে বিস্তৃত ছিল । কিন্তু ব্যাপক শিকার এবং ডিঙ্গোদের থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে হেরে একটা সময়ের পর প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে যায় । শেষ তাসমানিয়ান বাঘটি ৭ সেপ্টেম্বর , ১৯৩৬ সালে হোবার্ট চিড়িয়াখানায় মারা গিয়েছিল । আসলে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে ভেড়ার প্রতিপালনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই তাসমানিয়ান টাইগার । খাবারের জন্য ভেড়া চুরি করে নিয়ে পালাত এই মাংসাশী প্রাণীটি । ফলে গবাদি পশুদের বাঁচাতে তাসমানিয়ান বাঘের ব্যাপক শিকার শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা । কিন্তু আসেপাশের বেশ কিছু এলাকায় মাঝে মাঝেই অনেকে তাসমানিয়ান টাইগারের দেখা পেয়েছেন বলে দাবি করেন । যদিও শেষপর্যন্ত তদন্তে তা প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু এই ‘ পুনরুত্থান ‘ প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহের মেঘ কাটছে না বিশেষজ্ঞদের মন থেকে । অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর অ্যানশেন্ট ডিএনএ’র সহযোগী অধ্যাপক জেরেমি অস্টিন বলেন , ‘ পুনরুত্থান ‘ তো একটা কল্পকাহিনীর মতো ব্যাপার । তিনি মনে করেন , বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের চাইতে বরং গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের দিকেই তাদের মনোযোগ বেশি । তবে তাসমানিয়ান বাঘ ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় গত ২০ বছর ধরেই চলছে। ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এই প্রাণীটির ক্লোনিং করার কথা ভেবেছিল । এরপর বিভিন্ন সময়ে নমুনা থেকে ডিএনএ নেওয়া বা পুনর্গঠনের চেষ্টাও করা হয়েছে । তাসমানিয়ান বাঘ নিয়ে বর্তমান প্রকল্পটি মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও টেক্সাস ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ কলোসাল ‘ এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.