বিলুপ্ত তাসমানিয়ান বাঘ ফিরিয়ে আনার আশায় দিন গুনছেন বিজ্ঞানীরা
৮৬ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া তাসমানিয়ান বাঘকে প্রাণীজগতের বুকে আবার ফিরিয়ে আনতে লক্ষ লক্ষ ডলারের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা । ত্রিশের দশকে শেষ তাসমানিয়ান বাঘটি পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় , যা মূলত ‘ থাইলাসাইন ‘ হিসেবে পরিচিত ছিল । প্রাণী বিজ্ঞানের তথ্য বলছে , তাসমানিয়ান বাঘের বৈজ্ঞানিক নাম থাইলাসাইনাস সাইনোসিফেলাস । পিঠে সাদা ডোরাকাটা দাগের কারণে নামের শেষে ‘ বাঘ ‘ পরিচয় জুড়ে নিতে পেরেছিল ‘ থাইলাসাইন ‘ । কিন্তু এটি আসলে মারসুপিয়াল বা এক ধরনের অস্ট্রেলিয়ান স্তন্যপায়ী গোত্রের প্রাণী বলে আজও প্রাণী বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করেন । সেই থাইলাসাইনাসরা নিজেদের থলিতে করে বাচ্চা লালন – পালন করতে । যা কার্যত বাঘের স্বভাবের মধ্যে পড়ে না । কিন্তু ওই প্রাণীর দাতের এবং শারীরিক গঠন থেকে বিজ্ঞানীরা ওই প্রাণীটিকে বাঘের সমগোত্রীয় বলে ধারনা করে নেন।গবেষকরা আশাবাদ ব্যক্ত করলেও , তাসমানিয়ান বাঘ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশ্বের একাধিক তাবড় প্রাণী বিজ্ঞানী । তাদের কথায় , বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীর ‘ পুনরুত্থান ‘ স্রেফ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতেই সম্ভব , বাস্তবে নয় । অস্ট্রেলিয়ান ও মার্কিন বিজ্ঞানীরা একই ডিএনএ – বিশিষ্ট মারসুপিয়াল প্রজাতির জীবিত কোনো প্রাণী থেকে স্টেম সেল নিয়ে , জিন সম্পাদনা প্রযুক্তির মাধ্যমে এই বিলুপ্ত প্রাণীটিকে ফিরিয়ে আনা বা এর খুব কাছাকাছি বৈশিষ্ট্যের প্রাণী নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছেন । অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের থাইলাসিন ইন্টিগ্রেটেড জেনেটিক রিস্টোরেশন রিসার্চ বা ট্রিগার নামে একটি ল্যাব তৈরির জন্য ৩৬ লক্ষ ডলার অনুদান দেওয়া হয়েছে । এই ল্যাব তৈরির পর বিলুপ্তপ্রায় এই বাঘটিকে আবারও পৃথিবীতে আনার চেষ্টা করবেন বিজ্ঞানীরা । তাসমানিয়ান মানবসভ্যতা তাসমানিয়ান বাঘের সংখ্যা হ্রাস পায় । এরপর ডিঙ্গো নামে অস্ট্রেলিয়ান কুকুরের আগমনের পর তাদের আক্রমণে তাসমানিয়ান বাঘের সংখ্যা আবারও হ্রাস পায় । বাঘ নিয়ে করছেন গবেষণাটি পরিচালনা মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অ্যান্ড্রু পাস্ক । তিনি বলেছেন , ‘ আমার বিশ্বাস , আগামী দশ বছরের মধ্যেই আমরা আমাদের প্রথম থাইলাসাইন শাবক আনতে পারবো । হাজার হাজার বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় পা রাখার তারপর একসময় শুধু তাসমানিয়ার দ্বীপে এগুলোর দেখা মিলত এবং অবশেষে বিলুপ্তই হয়ে যায় । প্রায় ৩ হাজার বছর আগে , তাসমানিয়ান টাইগার অস্ট্রেলিয়াজুড়ে বিস্তৃত ছিল । কিন্তু ব্যাপক শিকার এবং ডিঙ্গোদের থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে টিকে থাকার লড়াইয়ে হেরে একটা সময়ের পর প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে যায় । শেষ তাসমানিয়ান বাঘটি ৭ সেপ্টেম্বর , ১৯৩৬ সালে হোবার্ট চিড়িয়াখানায় মারা গিয়েছিল । আসলে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে ভেড়ার প্রতিপালনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই তাসমানিয়ান টাইগার । খাবারের জন্য ভেড়া চুরি করে নিয়ে পালাত এই মাংসাশী প্রাণীটি । ফলে গবাদি পশুদের বাঁচাতে তাসমানিয়ান বাঘের ব্যাপক শিকার শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা । কিন্তু আসেপাশের বেশ কিছু এলাকায় মাঝে মাঝেই অনেকে তাসমানিয়ান টাইগারের দেখা পেয়েছেন বলে দাবি করেন । যদিও শেষপর্যন্ত তদন্তে তা প্রমাণিত হয়নি। কিন্তু এই ‘ পুনরুত্থান ‘ প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহের মেঘ কাটছে না বিশেষজ্ঞদের মন থেকে । অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর অ্যানশেন্ট ডিএনএ’র সহযোগী অধ্যাপক জেরেমি অস্টিন বলেন , ‘ পুনরুত্থান ‘ তো একটা কল্পকাহিনীর মতো ব্যাপার । তিনি মনে করেন , বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের চাইতে বরং গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণের দিকেই তাদের মনোযোগ বেশি । তবে তাসমানিয়ান বাঘ ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় গত ২০ বছর ধরেই চলছে। ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান জাদুঘর কর্তৃপক্ষ এই প্রাণীটির ক্লোনিং করার কথা ভেবেছিল । এরপর বিভিন্ন সময়ে নমুনা থেকে ডিএনএ নেওয়া বা পুনর্গঠনের চেষ্টাও করা হয়েছে । তাসমানিয়ান বাঘ নিয়ে বর্তমান প্রকল্পটি মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও টেক্সাস ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ কলোসাল ‘ এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে।