বিশালগড়ে বিশালাকার!!

পুলিশি ব্যবস্থার কী হইয়াছে।বিশেষ করিয়া বিশালগড়।বিশালগড় পুলিশি যেন বিহার উত্তরপ্রদেশের কোনও ফিলমের পটভূমি। গত কয়েকদিন ধরিয়া পুলিশি ও সুনাগরিকদের অভিযানের পাল্টা চলিতেছে।শেষ পর্যন্ত এইবার ওসির গাড়ি ছিনতাই করিয়া লইলো বিশালগড়ের সমাজদ্রোহী দল। হায়, বিপদগ্রস্ত মানুষের ত্রাণে, রক্ষায় পুলিশ ছুটিয়া যাইবে সেই উপায়ও আর রহিলো না।বিশালগড়ের সর্বশেষ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি হইলো প্রকাশ্য দিবালোকে বাপ ছেলেকে আহত করিয়া জমি বিক্রির ১১ লক্ষ টাকা ছিনতাই। আহত বাপ বেটা হাসপাতালে ভর্তি রহিয়াছে। পুলিশ যখন দুষ্কৃতী ধরিতে ময়দানে ঠিক সেই সময়েই মহিলা থানার ওসির গাড়িটি ঠাণ্ডা মাথায় ছিনতাই করিয়া নেয় দুষ্কৃতীরা। পুলিশের মান ইজ্জত লইয়া এমন টানাটানি এর আগে কখনও দেখেননি। রাতের অন্ধকারে ওসির, দারোগার ঘরে চোর ঢুকিবার ইতিহাস রাজ্যে রহিয়াছে, কিন্তু থানার সামনা হইতে, প্রকাশ্য রাজপথে গাড়ির চালককে মারধর করিয়া নামাইয়া দিয়া গাড়ি লইয়া পগারপাড় হওয়ার দৃশ্য কেবল হিন্দি মশলা সিনামাতেই দেখিয়াছেন রাজ্যের মানুষ।
গত বেশ কিছুদিন ধরিয়াই দুঃসাহসিক ঘটনা ঘটাইয়া যাইতেছে দুষ্কৃতীরা।কিন্তু ওসির গাড়ি ছিনতাইকাণ্ডকে প্রত্যক্ষদর্শী যেইভাবে বিবৃত করিতেছেন তাহাতে ঘটনাকে লোমহর্ষক বলিতে হইবে। মোটর সাইকেল আরোহী দুই যুবক গাড়ির কাছে আগাইয়া আসে এবং গাড়ির চালককে মারধর করিয়া গাড়ির চাবি লইয়া লয়। এক যুবক গাড়ির চালকের আসনে বসিয়া যায়।অন্যজন মোটর সাইকেলেই। পেছন হইতে আর একটি গাড়ি অনুসরণ করিয়া চলিতে থাকে। অন্যদিকে, গাড়ির প্রকৃত চালক রাজপথে আর্ত চিৎকারে পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে থাকে। দুষ্কৃতীরা কোনও রকম তাড়াহুড়া ছাড়াই সবার চোখের সম্মুখে হাওয়া হইয়া যায়। প্রসঙ্গত, গত ১৭ মে চড়িলামে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কনভয় হইতে পিস্তল উঁচাইয়া গাড়ি ছিনতাই করিয়াছিল দুষ্কৃতীরা।১৯ মে গকুলনগর টিএসআর সদর দপ্তরের সামনা হইতে এক যুবককে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। এই ঘটনায় তুমুল তোলপাড় হয়।এলাকাবাসী তিন যুবককে শনাক্ত করিয়া তিন যুবককে পুলিশে তুলিয়া দেয়।
এলাকাবাসীর দাবি, যাবতীয় চুরি ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মতন কর্মকাণ্ডে এই যুবকেরাই জড়িত।পুলিশি জেরায় ইহারা এই দাবির সপক্ষে পুলিশকে বেশ কিছু তথ্য দেয়। সেই মতন অভিযান চালাইয়া পুলিশ আর তিনজনকে তুলিয়া আনে। সঙ্গে একখানা পিস্তল উদ্ধার করিতে সমর্থ হয়। পুলিশ তাহাদের সফলতার ঢক্কানিনাদ করিয়া জানায়, চোর ডাকাত, সমাজদ্রোহী চক্রের সন্ধান তাহারা পাইয়াছে। সকল দুষ্কৃতীদের ধরিয়া গারদে পোরা হইবে। কিন্তু দেখা গেলো পুলিশের ঘোষণা মতন আর কেহ ধরা পড়ে নাই। তবে দুই দিন পর থানার দেড় কিলোমিটার দূরে এক গৃহস্থের ঘরে ঢুকিয়া ৭০ হাজার নগদ অর্থ এবং ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লইয়া যায়। ইহার পরে সপ্তাহকালের নীরবতা ভাঙ্গিল উত্তম চৌমুহনীতে প্রকাশ্য দিবালোকে বাপ বেটার মথায় পিস্তল ও ছোরা ঠেকাইয়া ১১ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায়। জেলা পুলিশ কর্তা হইতে শুরু করিয়া থানার ওসিরা যখন এই ঘটনার তদন্তে ময়দানে রহিয়াছে সেই সময়েই ঘটনা মহিলা থানার ওসির গাড়ি চুরির।
বিশালগড় পুলিশের মান ইজ্জত যে এই প্রকারে জনসমক্ষে চ্যালেঞ্জের সামনে আসিয়া যাইবে এই কথা তাহারা কোনওদিনই ভাবিতে পারে নাই নিশ্চয়ই।একই দিনে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুইটি বড় ঘটনা ঘটিয়া গেলো বিশালগড়ে। জমি বিক্রির টাকা লইয়া বাপ বেটা ঘরে ফিরিবার সময় ছিনতাইকারীদের দ্বারা কেবল নিঃস্বই হইলো না, নিগৃহীত প্রচণ্ড আহত হইয়া হাসপাতালে ভর্তি হইলো। তাহাদের চিকিৎসা চলিতেছে। পুলিশ এই দফায় মান রাখিবে না কুল রাখিবে- ইহাই দেখিতে আকুল হইতেছে রাজ্যের জনগণ। কারণ পুলিশ যতটা না রাজনীতিকদের তোষণে ব্যস্ত থাকিয়া সময় কাটায় তাহার সিকিভাগও যদি সাধারণ আইনশৃঙ্খলা তারা জনগণের কথা চিন্তা করিয়া কাটাইতো তাহা হইলে এমন অবর্ণনীয় দুরবস্থায় তাহাদের পড়িতে হইতো না। বিশালগড়ে আজ যাহা ঘটিতেছে তাহার পরিণতি কোথায় যাইয়া শেষ হইবে তাহা আমরা কেহই জানি না। তবে মনেপ্রাণে প্রত্যেকেরই কামনা থাকিবে বিশালগড় যেন কোনও প্রকারেই বিশাল আকার লইয়া সারা রাজ্যে সংক্রামক হইয়া না পড়ে।
পুলিশকে এই রকম অসহায় চেহারায় কেহই দেখিতে চাহিবে না।যে পুলিশ মানুষের বিপন্নতায় মানুষের পাশে ছুটিয়া যাইবে সেই পুলিশের যান ছিনতাই হইয়া যাওয়া পুলিশকে অসহায় করিয়া দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নহে। সাধারণ আইনশৃঙ্খলা লইয়া যে দুষ্কৃতীরা পুলিশের নাকে দম করিয়া দিতেছে প্রশাসনের নাকে দড়ি দিতেছে তাহাদের পরিচয় কী। ইহাদের পরাক্রমের পশ্চাতে কোন ব্যাটারি কাজ করিতেছে? বিশালগড়ের নৈরাজ্যকর অবস্থার বিস্তৃতি যেন সারা রাজ্যে ছড়াইয়া না পড়ে সেই লক্ষ্যে এখনই ভাবা দরকার প্রশাসনকে। কালার্স পুলিশ যদি নিজেদের অতীত গর্বের কথা ভাবিবার শক্তি সঞ্চয় করিতে পারে, তাহা হইলে রাজ্যের মঙ্গল, উহাদের নিজেদেরও মঙ্গল।