বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যেতে চলেছে ত্রিপুরা ফার্মাসি এডুকেশন

 বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যেতে চলেছে ত্রিপুরা ফার্মাসি এডুকেশন
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

বেশ কিছুকাল ধরেই ত্রিপুরা বোর্ড অব ফার্মাসি এডুকেশন-এর কর্মপদ্ধতি ও আর্থিক লেনদেন স্বাস্থ্য দপ্তরের সন্দেহের তালিকায় ছিল।এবার রিপস্যাটের অধ্যক্ষের বেআইনিভাবে ছড়ি ঘোরানো এবং একের পর এক দুর্নীতির ঘটনা সংঘটিত হতেই সম্প্রতি তদন্তে নামেন স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব। অনৈতিকভাবে স্বেচ্ছাচারিতা এবং সরকারী অর্থের লুটপাটের সঙ্গে রিপস্যাটের মধ্যমণি জড়িয়ে যেতেই তদন্তে আরও নতুন নতুন ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে থাকে। অধ্যক্ষ শুভকান্ত দাশের যাবতীয় বাধা সত্ত্বেও উত্তরপত্র মূল্যায়নের মাধ্যমে ডি ফার্ম প্রথম বর্ষের ছাত্রী পরীক্ষায় পাস করার ঘটনা রিপস্যাটে চাঞ্চল্য ছড়ায়। কন্যাসম ছাত্রীর ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে এই কুচক্রীরা চক্রান্তের জাল বিস্তার করেও শেষ পর্যন্ত ল্যাজে গোবরে হতেই দুর্নীতির এই দুর্ভেদ্য চক্রের পতন ঘটতে থাকে।ত্রিপুরা বোর্ড অব ফার্মাসি এডুকেশন কোনও স্ট্যাটিউটরি বডি বা সংবিধিবদ্ধ কমিটি নয়- এই বিষয়টি স্বাস্থ্য দপ্তরের তদন্তে উঠে আসার পর তদন্তের অগ্রগতিতে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে আসে। ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৩, রিপস্যাট অধ্যক্ষ ড. দাশ ত্রিপুরা বোর্ড অব ফার্মাসি এডুকেশনের কর্মচারী সংক্রান্ত বিষয়ে দপ্তরকে জানালেন যে বোর্ডের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণেই এ যাবৎকালে কোন নিয়োগ হয়নি এবং সূচনার দিনগুলি থেকেই রিপস্যাটের প্রশাসনিক কাজে নিয়োজিত কর্মীরাই টিবিপিই’র সব কাজ সামলেছে।এরপরই ঘটনাচক্রে দপ্তরের গোচরে এলের টিবিপিই’র এক বছর আগের একটি পুরনো সার্কুলার যেখানে ২ জন প্রার্থীকে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছিল।১০আগষ্ট ২০২২-এর ওই সার্কুলারটির উপর ডা. দাশের স্বাক্ষরের পাশাপাশি তৎকালীন সময়ে রিপস্যাটের লেকচারার
(সিলেকশন গ্রেড) পদে কর্মরত ড.তেজেন্দ্র ভক্ত এবং ড্রাগ কন্ট্রোল দপ্তরের কর্মরত ড্রাগ ইন্সপেক্টর গৌতম ত্রিপুরারও স্বাক্ষর রয়েছে। এই সার্কুলার রিপস্যাট অধ্যক্ষ তথা টিবিপিই’র সদস্য সচিব ড. শুভকান্ত দাশের আরেক মিথ্যার মুখাবয়ব উন্মোচন করলো। মিথ্যার কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতল দপ্তরকে দেওয়া ৫সেপ্টেম্বর ২০২২- এর ড. দাশ স্বাক্ষরিত একটি নিযুক্তিপত্র যেখানে ২ জন নির্বাচিত প্রার্থীর মধ্যে থেকে একজনকে টিবিপিই’র ‘ডেটা এন্ট্রি অপারেটর’ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল।সুতরাং টিবিপিই’র কর্মচারী সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের কাছে ড.দাশের বক্তব্য সর্বতোভাবে মিথ্যা ও প্রকৃত তথ্য গোপনের অপচেষ্টা, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও দণ্ডনীয় অপরাধ।
ইতিমধ্যেই উত্তরপত্রের পুনর্মূল্যায়নের ভিত্তিতে ওই ছাত্রীকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। এই ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে যে সরকারী তদন্ত হয়েছে তার ফলেই রিপস্যাটে গড়ে ওঠা টিবিপিই নামধারী ‘পরীক্ষণ কর্তৃপক্ষ’ এর দুর্নীতি দুরাচারের নগ্নরূপটি উদ্ভাসিত হয়েছে। যতদূর শোনা যায়,এই বোর্ডের আর্থিক লেনদেন কেনাকাটা ইত্যাদির বহুবিধ অনাচার অনিয়ম ইতিমধ্যেই দপ্তরের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অর্থ দপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী সরকারী অ্যাকাউন্ট পরিচালনার জন্য একজন ডিডিও’র প্রয়োজন রয়েছে।এই ডিডিওর সঙ্গে যুগ্মভাবে অধ্যক্ষ এই অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করবেন। এছাড়াও অর্থ দপ্তরের ডিএফপিআরটির সমস্ত নিয়ম এখানে প্রযোজ্য হবে। কিন্তু শুভকান্ত দাশ সরকারী নিয়মের তোয়াক্কা না করে, ডিএফপিআরটির নিয়মকানুনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একা এই অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করেছেন। ডিডিও নিযুক্ত না করে তার খেয়ালখুশি মতো এসি, কম্পিউটার ইত্যাদি অনলাইনে ক্রয় করেছেন। কোনও টেণ্ডার না করে বিভিন্ন অনলাইন সংস্থার মাধ্যমে ক্রয় করেছেন। সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে এই কেনাকাটা করেছেন এবং সরকারী অ্যাকাউন্ট পরিচালনার জন্য এটিএম ব্যবহার করছেন, যা গর্হিত ও আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। যতদূর শোনা যায়, রিপস্যাটে বয়েজ হোস্টেল ও গার্লস হোস্টেলের পৃথক পৃথক অ্যাকাউন্টে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। রিপস্যাটে ইদানীং যে অডিট চলছে তাতে সেসব আকাশছোঁয়া দুর্নীতি ধরা পড়তে চলেছে বলে তথ্যভিজ্ঞ মহলের অভিমত। শুভকান্ত দাশ মনগড়া নিয়ম তৈরি করে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির ক্ষেত্রে আদায়ীকৃত অর্থের একটি ক্ষুদ্র অংশ সরকারী ফাণ্ডে জমা রেখে বাকি অর্থ রিপস্যাটের বেসরকারী অ্যাকাউন্টে জমা রেখে, যাতে অর্থ দপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই অর্থ দোহন করা যায় ।রিপস্যাট অধ্যক্ষ ড. দাশ আইনের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে মনগড়াভাবে জিনিসপত্র কেনাকাটা করেছেন এববং অনেক ক্ষেত্রে অনলাইনেও অর্থের আদানপ্রদান হয়েছে। তাই অর্থের যে নয়ছয় হয়েছে তাতে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। বিষয়টির ইতি টানতে স্বাস্থ্য দপ্তর ইতিমধ্যে এই বোর্ডের যাবতীয় অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং আশা করা যাচ্ছে কিছুদিনের মধ্যেই সমস্ত বিষয় জলের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে। এমত এই অবস্থায় ড. দাশ ও কোম্পানি দপ্তরের এই সিদ্ধান্ত কোন মতেই মেনে নিতে পারছেন না তাই যেকোন মূল্যে এই বোর্ডকে রিপস্যাটেই আটকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাই নিজে সরাসরি দায়িত্বে না থেকে রিপস্যাটের অন্য একজন অধ্যাপককে সদস্য সচিবের পদে আসীন করার টোপ দিয়ে নানা বাহানার অবতারণা ঘটিয়ে বোর্ডের কাজকর্ম হস্তাস্তরের গোটা প্রক্রিয়াকে শ্লথ করার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে বলে জানা যায়। তবে এতে কোন লক্ষ্য সফল হবে না, কারণ বৃহত্তর স্বার্থে ও রাজ্যের ২ টি প্রাইভেট ও ১ টি সরকারী ফার্মাসি কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে ডিপ্লোমা কোর্সের এগজামিনিং অথরিটি করার জন্য।এদিকে দপ্তরের অনুরোধক্রমে রিপস্যাটে অডিট টিম এসে পৌঁছানো মাত্র থরহরিকম্প শুভঙ্কর দাশ অ্যাণ্ড কোং। এনডাউমেন্টের দশটি অ্যাকাউন্ট নিয়ে অডিট টিম তদস্ত শুরু করেছে। ত্রিপুরা বোর্ড অব ফার্মাসি এডুকেশন সংক্ষেপে টিবিপিই নিয়েও অডিট টিমের তদন্তে বহু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। সংবাদসূত্রে জানা গেছে, টিবিপিইতে কর্মরত যে ক্যাশিয়ার রিপস্যাটে তার অফিসরুমে আত্মহত্যা করেছিলেন, সেই সময়কার বহু তথ্য গায়েব হয়ে গেছে, বহু রসিদপত্র হাফিজ। সন্দেহের তির তাই ঘনীভূত।ডিপ্লোমা ফার্মাসি কোর্সের শিক্ষা নিয়ন্ত্রক বিধান ‘এডুকেশন রেগুলেশন-১৯৯১’ ও সর্বশেষ বিধান ‘এডুকেশন রেগুলেশন- ২০২০’ তে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে বিধিবদ্ধ যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষণ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব সামলাতে পারবে। তাই রাজ্যে সরকার ও স্বাস্থ্য দপ্তর ডিপ্লোমা কোর্সের পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় আগামী দিন থেকে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালযের তত্ত্বাবধানে নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে শোনা যায়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.