বিশ্বে প্রথম ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়

 বিশ্বে প্রথম ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

মারণ ম্যালেরিয়ার আতঙ্ককে এবার বোধহয় জয় করা গেল। প্রতি বছর প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় এই অসুখে। তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ হল শিশুরা, যাদের বয়স ৫ বছরের কম। ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার জন্য নানা ধরনের ওষুধ রয়েছে বাজারে। এগুলির কোনওটা কারও কারও ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় খুবই কার্যকর। কিন্তু ম্যালেরিয়া অসুখটির জন্য যে প্যারাসাইট দায়ী, সেটি শরীরে আর সংক্রমণ ঘটাতে পারবে না, এমন কোনও উপায় এত দিন জায়া ছিল না। সংক্রমণ ঘটানোর পরে ওই ওষুধগুলি তা সারাতে সাহায্য করত। এবার আসছে টিকা।

New financing agreement boost for malaria vaccine | Gavi, the Vaccine  Alliance


যেটি ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ হতেই দেবে না শরীরে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ‘হু’য়ের তরফে বলা হয়েছে, ‘এটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। বিজ্ঞান শেষ পর্যন্ত শিশুদের জন্য ম্যালেরিয়ার টিকাটি তৈরি করে ফেলল। বহু দিন আমরা এর অপেক্ষায় ছিলাম। এর সঠিক প্রয়োগ হলে প্রতি বছর হাজার হাজার শিশুর প্রাণ বাঁচবে।’ ইতিমধ্যেই ঘানা, কেনিয়া এবং মালাউইয়ের আট লক্ষ শিশুর উপর এই টিকা প্রয়োগ করে আশানুরূপ ফল পাওয়া গিয়েছে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে এই টিকা প্রয়োগ করে পৃথিবী থেকেই ম্যালেরিয়াকে বিদায় জানানো সম্ভব হবে বলেও আশা করছেন হু’য়ের বিশেষজ্ঞরা।

Courses | University of Oxford


আশার আলো দেখালেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা। বিশ্বে প্রথম ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিনে তৈরিতে বড় সাফল্য পেল অক্সফোর্ডের জেন্নার ইনস্টিটিউট। এই জেন্নার ইনস্টিটিউটই করোনার ডিএনএ ভ্যাকসিন তৈরি করেছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ম্যালেরিয়ার টিকা আগে তৈরি হলেও তা তেমনভাবে কার্যকর হয়নি। বিশ্বে প্রায় ১০০ রকম ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট নিয়ে গবেষণা ও পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে। তবে এই প্রথমবার অক্সফোর্ডের তৈরি ম্যালেরিয়ার টিকা আশার আলো দেখিয়েছে। ঘানায় এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সফল হয়েছে বলেও দাবি করেছে হু। ঘানার সরকার ইতিমধ্যে এই টিকা প্রয়োগে ছাড়পত্র দিয়েছে। সে দেশে ৩৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের ম্যালেরিয়ার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে।অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ আদ্রিয়ান হিল এই টিকার আবিষ্কর্তা। তিনি জানিয়েছেন, এই ভ্যাকসিনের নাম আর২১/ ম্যাট্রিক্স- এম। হু’য়ের দাবি, এই ভ্যাকসিন এখনই ৭৫ শতাংশ কার্যকরী হয়েছে। আরও বেশি মানুষকে টিকা দিলে এর কার্যকারিতা আরও ভাল করে বোঝা যাবে। ঘানার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন শিশুদের জন্য এই টিকায় ছাড়পত্র দিয়েছে। আফ্রিকার আরও কিছু দেশে এই টিকার প্রয়োগ হবে বলে জানা গেছে।আফ্রিকায় ম্যালেরিয়া একপ্রকার মহামারীর চেহারা নিয়েছে গত চার দশক ধরে। শয়ে শয়ে শিশুর মৃত্যু নাড়া দিয়েছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীমহলকে।

এর আফ্রিকার শিশুদের ওপর ‘মসকুইরিক্স’-এর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সেই ভ্যাকসিন তৈরি করেছিল গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন নামে একটি কোম্পানি।

Here's How GlaxoSmithKline's CEO Thinks Pharma Should Modernize | Fortune


ইউরোপিয়ান ড্রাগ রেগুলেটরসের অনুমোদন ভ্যাকসিন। ১৯৮০ সাল থেকে এই ভ্যাকসিনটি তৈরির ভাবনা আসে বিজ্ঞানীদের মাথাতে। সেই সময় থেকেই ধীরে ধীরে কাজ শুরু হয়। পিএটিএইচ ম্যালেরিয়া ভ্যাকসিন ইনিশিয়েটিভ এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনও এই ভ্যাকসিন তৈরিতে সহযোগিতা করেছে। এখনও পর্যন্ত ম্যালেরিয়ার কোনও ভ্যাকসিনে ১০০ শতাংশ সাফল্য সামনে আসেনি।বিজ্ঞানীদের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, বিভিন্ন ধরনের ম্যালেরিয়া পরজীবী রয়েছে। ফলে একটি ভ্যাকসিন সব ক্ষেত্রে কাজ করে না। এর ফলেই একটি সঠিক ভ্যাকসিন তৈরি করা একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া হয়ে উঠেছিল।
হু’য়ের ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রস আধানম গেব্রিয়াসুস জানান ‘এই টিকা নিরাপদ। তাছাড়া এটি ম্যালেরিয়া বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যাওয়া আটকে দিতে সক্ষম। অন্যদিকে দামও সাধ্যের মধ্যে।’ তারমতে, পাঁচ মাস বয়স থেকে শিশুদের চারটি ডোজের মাধ্যমে ভ্যাকসিন প্রদান করতে হবে। সংক্রামিত মহিলা অ্যানোফিলিস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে এই রোগ বাসা বাঁধে। এটি প্রতিরোধযোগ্য এবং নিরাময়যোগ্য রোগ বলেও ফের মন্তব্য করেছেন গেব্রিয়াসুস।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.