বিশ্ব ক্ষুধা বিবাদ!!

 বিশ্ব ক্ষুধা বিবাদ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-পৃথিবীতে যত ধরনের লড়াই আছে, এর মধ্যে ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই ‘হল সবচেয়ে বেশি কঠিন।আসলে ক্ষুধা হলো এমন এক অনুভূতি যাকে কোন শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।এই বিশ্বে আশ্রয়হীন, বস্ত্রহীন মানুষের হাহাকার যত বেশি, এর চেয়ে ক্ষুধার্ত মানুষের কান্না অনেক বেশি।এ মুহূর্তে গোটা দুনিয়ায় প্রায় ৮২ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত। অর্থাৎ আগামী দিনগুলিতে গোটা বিশ্বের সামনে অন্তত ২০টি এমন দেশ রয়েছে যাদের শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি, সাধারণ মানুষের মধ্যেই তীব্র ক্ষুধা এবং খাবারের সংকটের কারণে মহাবিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে চলেছে আমাদের আগামী পৃথিবী।

শুধু তাই নয়, এই মুহূর্তে খোদ ভারতেই ২৮ কোটি মানুষ রয়েছেন যারা ক্ষুধার্ত। জাতি সংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ফাও এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ডব্লিও এফপি বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকটের ব্যাপক আকার ধারণ করা এলাকাগুলো সম্পর্কে যে রিপোর্ট গত বছর পেশ করেছে তাতে বলা হয়েছিল, তীব্র ক্ষুধার বিপর্যকর পরিস্থিতি এবং উদ্বেগজনক তালিকায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে নাইজেরিয়া ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান ছাড়াও এশিয়া মহাদেশের আফগানিস্তান, সিরিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের লেবানন কিংবা লাতিন আমেরিকার হাইতি ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলগুলোতে দ্রুত মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে।ক্ষুধা নিয়ে যখন গোটা বিশ্বজুড়েই উন্নত রাষ্ট্রগুলোর এবং রাষ্ট্রসংঘের বিভিন্ন সংস্থা সমূহের প্রতিবেদন দেখে যখন উদ্বেগ ছড়াচ্ছে, ঠিক তখনই আইরিশ এনজিও কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এবং জার্মানির এনজিও ওয়েন্ট হাঙ্গার হিলফ সম্প্রতি এক সমীক্ষা প্রকাশ করেছে। সমীক্ষাটি হল বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের রিপোর্ট ২০২৩।মোট ১২৫ টি দেশকে নিয়ে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে এবং এতে ভারতের স্থান হল ১১১তে।এই রিপোর্ট প্রকাশ পেতেই ভারত জুড়ে শোরগোল শুরু হয়ে গেছে। মোদি সরকার দাবি করেছে এই সমীক্ষার রিপোর্টটি ত্রুটিপূর্ণ। শুধু তাই নয়, এই রিপোর্ট খারিজ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের নারী ও শিশু কল্যান মন্ত্রক।কিন্তু কি আছে এই রিপোর্টে?দেখা গেছে বিশ্ব ক্ষুধার ক্রমতালিকায় ভারতের পতন ঘটেই চলেছে।২০২১ সালে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক বা গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স-এ দেখা গেছে যে, ক্ষুধার তালিকায় ১১৬ টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১০১ নম্বরে।২০২২ সালে ১২১ টি দেশের মধ্যে সমীক্ষায় ভারতের স্থান দেখা গেছে ১০৭ নম্বরে। এ বছর ২০২৩ সালে ১২৫ টি দেশের মধ্যে সমীক্ষায় ভারতের ক্ষুধা সূচক আরও নীচে নেমে দাঁড়িয়েছে ১১১ নম্বরে।সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের এই ক্রমপতন নিঃসন্দেহে উদ্বেগের।

কারণ ভারতের প্রতিবেশী দেশ চিন এবং অপরদিকে কুয়েত-তুরস্ক সহ ১৭টি দেশ তালিকার একেবারে শীর্ষস্থান দখল করে আছে। শুধু তাই নয়, ভারতের চেয়ে তালিকায় অনেক ভালো অবস্থানে আছে নেপাল- বাংলাদেশের মতো দেশগুলো।মূলত এই তালিকা তৈরি হয় ক্ষুধা এবং অপুষ্টির সামগ্রিক পরিস্থিতির নিরিখে। তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে মূলত সময় ও পরিস্থিতি বিচার বিবেচনা করে ৫টি স্তরে র‍্যাঙ্কিং বাছাই করা হয়।যে দেশগুলোতে ক্ষুধার পরিমাণ একেবারেই কম সেখানে উপরের দিকে ভালো স্থানে যে দেশকে রাখা হয়।এর পরবর্তী স্তরগুলো হল মাঝারি, উদ্বেগজনক, ভীতিপ্রদ এবং অত্যন্ত ভীতিপ্রদ।দেখা গেছে, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের প্রতিবেদন অনুসারে ভারতের সামগ্রিক স্থান উদ্বেগজনক।কেন্দ্রীয় সরকার এই রিপোর্টকে বাস্তবের সঙ্গে সম্পর্কহীন ও জঘন্য বলে খারিজ করে দিয়েছে।কারণ সরকারের বক্তব্য হল, যে পদ্ধতি এই ধরনের সমীক্ষার কাজে ব্যবহার করা হয় তা ভারতের মতো বৈচিত্রপূর্ণ দেশে ক্ষুধা পরিমাপের ক্ষেত্রে অবৈজ্ঞানিক।

প্রশ্ন হল, রাষ্ট্রসংঘের সংস্থা ফাও (FAO) যে পদ্ধতি মেনে ক্ষুধার পরিমাপ করে, সেই একই প্রস্তুতি এক্ষেত্রেও কার্যকরী করা হয়। তাই এর বৈধতা বা অবৈজ্ঞানিক আখ্যা দেওয়াটা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। সরকারের বক্তব্য, অপুষ্টি মাপার উপায় হল ওজন ও উচ্চতার মধ্যে গড় পরিমাপ করা। কিন্তু ফাও যেভাবে তা বিচার বিশ্লেষণ করছে তাতে অসামঞ্জস্যতা রয়েছে বলে কেন্দ্রীয় সরকারের অভিযোগ।কেন্দ্রীয় সরকার সমীক্ষাটিকে খারিজ করে দিলেও বিরোধীরা কিন্তু এই সংবেদনশীল ইস্যুতে সরকারের ঘাড়ে শ্বাস ফেলছে। তবে বিতর্ক-বিবাদ যাই হোক না কেন, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের রিপোর্ট যে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানের ব্যাপক অবনতির বার্তা দিচ্ছে সেটা কিন্তু স্পষ্ট।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.