বিস্মৃতির অন্তরালে তলিয়ে যাচ্ছে পাট চাষ ও পাট শিল্প

 বিস্মৃতির অন্তরালে তলিয়ে যাচ্ছে পাট চাষ ও পাট শিল্প
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

 দৈনিক সংবাদ অনলাইনঃ বিস্মৃতির অন্তরালে তলিয়ে যাওয়া পাট চাষ ও তার উপর ভিত্তি করে পাট শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ বাম আমলেতো ছিলোইনা, বাহান্ন মাসের রাম আমলেও নেই। অথচ পাট চাষ ও পাট শিল্পকে ঘিরে ত্রিপুরা রাজ্যের অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুদ হতে পারতো। হতে পারতো বেকারদের কর্ম সংস্থানের দারুণ সুযোগ। এখনো এরাজ্যের মানুষের এটাই বিশ্বাস। দরকার শুধু সরকারের বাস্তব সম্মত পরিকল্পনার এবং সরকারী সহযোগিতার। 

  একটা সময় ত্রিপুরার পাহাড় থেকে সমতলে ব্যাপক হারে পাট চাষ হতো। জাতি জনজাতি উভয় অংশের মানুষদের পাট চাষ ছিল পারিবারিক অর্থ উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম। গ্রামীণ অর্থনীতির একটা মজবুদ ভিত্তি ছিল পাট চাষ। লরির পর লরি ভর্তি পাট বহিরাজ্যেও রপ্তানি হতো। মহাজনদের ছিল বড়বড় পাটের গুদাম। আর মুনাফাখোর মহাজনদের পাট চাষিদের ঠেকানোর অভিযোগ ছিল সত্তরের দশকে বামেদের রাজনীতির অন্যতম হাতিয়ার। ১৯৭৮ এ এরাজ্যে বামেদের ক্ষমতাসীন হওয়ার ক্ষেত্রেও রাজ্যের গ্রাম পাহাড়ের পাট চাষিদের অবদান কোন অংশেই কম ছিলো না। বামেদের দীর্ঘ সময় ক্ষমতাসীন থাকা কালিনই এ রাজ্যের গ্রাম পাহাড়ে পাট চাষ বিলুপ্ত হতে হতে বিস্মৃতির অন্তরালে তলিয়ে যায়।

বামেরা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর রাজ্যের পাট চাষিদের উচিত মূল্য দেওয়ার নামে বিভিন্ন সমবায় সমিতির মাধ্যমে পাট ক্রয় করা শুরু হয় এবং পাট চাষিরাও আশার আলো দেখতে শুরু করে। ধিরে ধিরে মহাজনরাও তাদের ব্যবসাপত্র গোটাতে শুরু করে। আর সেই থেকেই শুরু পাট চাষের প্রতি কৃষকদের উৎসাহ হাড়ানো। অথচ রাজ্যের উৎপাদিত পাটের উপর নির্ভর করেই গড়ে উঠেছিল রাজ্যের প্রথম ও একমাত্র শিল্প কারখানা ত্রিপুরা জুট মিল। যার বর্তমানে গঙ্গা প্রাপ্তি ঘটে গেছে। শুধুমাত্র বামেদের ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতির লবিবাজী ও মাত্রাতিরিক্ত অবৈধ বাড়াবাড়ির দৌলতে এবং সরকারের বাস্তব সম্মত পরিকল্পনাও দৃঢ় মনোভাবের অভাবে।   
কিন্তু রাম সরকারের বাহান্ন মাসেও রাজ্যের প্রথম শিল্প কারখানাটিকে রুগ্ন অবস্থা থেকে পুনরায় জীবন দানের লক্ষ্যে কোন প্রকার বাস্তব সম্মত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা তা একমাত্র রাজ্যের শিল্প মন্ত্রী কিংবা রাজ্যের শিল্প উন্নয়ন নিগমের গেরুয়াধারী কর্তারাই ভালো বলতে পারবেন।

ফলে রাজ্যের গ্রাম পাহাড়ে পাট চাষের প্রচলন প্রায় শুন্যের কোটায়। নিজেদের প্রয়োজন ব্যতীত কেহই পাট চাষে আগ্রহ দেখান না। আর যে জনজাতিরা সবথেকে বেশি পরিমাণে পাট চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন,সেই জনজাতিরা পাট চাষ করাই ভুলে গেছেন।  
অথচ রাজ্যের উৎপাদিত পাট থেকে বস্তা,ব্যাগ সহ নানান পাটজাত সামগ্রী তৈরির পরিকাঠামো রাজ্যের জুট মিলে ছিল। শিল্পের গরু গাছে চড়িয়ে সেইসব পরিকাঠামোর কি অবস্থা সেটা রাজ্যের শিল্প নিগমের কর্তারা আর রাজ্যের শিল্প দপ্তরের আধিকারীকরাই একমাত্র বলতে পারবেন। বর্তমানেপ্লাস্টিকের বিকল্প হতে পারতো পাটের তথা চটের তৈরী ব্যাগ। তাছাড়া পাটের সোলা দিয়েও এখনো নানান শিল্প কর্ম করা হয় এবং বিগত দিনে করা হতো। পূজো পার্বনে,বিবাহের যজ্ঞে পাট সোলা অপরিহার্য বস্তু। যার যোগান দিয়ে যাচ্ছেন জনা কয়েক পাট চাষি।  
পর্যাপ্ত পরিমাণে পাট চাষ হয়না বলেই এবং বাজারে পাটের যোগান প্রয়োজনে তুলনায় একেবারেই কম হবার কারনে পাট ভিত্তিক ক্ষুদ্র, মাঝারি বেসরকারি শিল্প ইউনিট গুলিরও ঝাপ বন্ধ হয়ে গেছে সেই কবেই।
তবে বর্তমানেও রাজ্যে কৃষি দপ্তর থেকে পাটের বীজ ক্রয়,মজুদ এবং সরবারাহ অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু কৃষি দপ্তরের ষ্টোরে যে সময়ে পাটের বীজ আসে কিংবা যে সময় পাট চাষিদের মধ্যে বীজ সরবারাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেই সময় আর পাট চাষের মরশুমই থাকেনা। ফলে চাষিরা বীজ নেন না। আর কৃষি দপ্তরের বিভিন্ন কৃষি ষ্টোর গুলিতে বছরের পর বছর পাটের বীজ নষ্ট হচ্ছে। এসব বিষয়ে খবর নেওয়ার ফুরসত কোথায় রাজ্যের করিৎ কর্মা ডায়নামিক কৃষিমন্ত্রীর। তবে আশার কথা হলো, রাজ্যে অতি ক্ষুদ্র অংশের জনা কয়েক কৃষক রয়েছেন যারা সংখ্যায় নগন্য হলেও প্রতি বছরই নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে এখনও কমবেশি পাট চাষ করে থাকেন। অমরপুরের বীরগঞ্জ গ্রাম পঞ্চায়েতে পাট চাষি পলাশ দাস, কান্তি দাস, তপন দাস, রমেশ দাস, পুলিন দাসেরা স্বউদ্যোগী হয়ে পাট চাষ করছেন। পাট চাষি রমেশ দাস বলেন, পাট চাষে লাভের অঙ্কটা ভালই। আগের মতো পাট বিক্রয়ের বাজার নেই ক্রেতাও নেই। সরকারী ভাবেও পাট ক্রয়ের কোন ব্যবস্থা কিংবা উদ্যোগ কোনটাই নেই। ফলে পাট চাষে উৎসাহ পান না পাট চাষিরা। তাই তারা নিজেদের প্রয়োজনে পাট চাষ করেন। তবে দরকার যত টুকু, তত টুকুই।
পাট চাষের ফলে জমির উর্ভরতা অনেকটাই বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তি ফসলের ফলন ভাল হয় বলে কৃষক রমেশ দাসের অভিমত। মহকুমার পাট চাষিদের দাবী, সরকার রাজ্যের জুট মিলটিকে সচল করে এবং পাট ভিত্তিক শিল্প কারখানা স্থাপন করে বাস্তব সম্মত পরিকল্পনার মাধ্যমে রাজ্যের পাট চাষিদের পাট চাষে উৎসাহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।তাতে রাজ্যের পাট ভিত্তিক শিল্প যেমন পুনরোজ্জীবিত হবে।তেমনি রাজ্যের আর্থিক বুনিয়াদ ও পাকাপোক্ত হবে এবং পাট চাষিরাও আর্থিক স্বাবলম্বী হয়ে উঠার স্বপ্ন দেখতে শুরু করবেন।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.