বীরাঙ্গনা দেবশ্রী

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দৈনিক সংবাদ অনলাইন।। বীরাঙ্গনা দেবশ্রী, হ্যা এই নামেই তাঁকে ডাকতে হচ্ছে। ভবিষ্যতেও ডাকতে হবে। কারণ, ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধী হয়েও শুধু মাত্র মনের জোর ও অদম্য ইচ্ছা শক্তি এবং কিছুতেই হার না মানা মানসিকতা, দেবশ্রী কে ওই উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। সমস্ত প্রতিবন্ধকতা, কষ্ট, যন্ত্রণা, অভাব, অনটন কে জীবন যুদ্ধে পরাজিত করে সমাজে নজির বিহীন দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছে। যা শুধু এই সমাজকেই নয়, অন্যরাও অনুপ্রাণিত হবে।

দীর্ঘদিনের চাপা কষ্ট,আর মুখভরা একগাদা হাসি নিয়ে- ঋষ্যমুখ ব্লকের গজারিয়া গ্রামের  কলেজ পড়ুয়া দিব্যাঙ্গনা দেবশ্রী পাটারির একটাই উদ্দেশ্য, যে করেই হোক জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।

শিশুকাল থেকে অদম্য ইচ্ছার জোরে এবং বাবা-মা ও পিসির আপ্রাণ প্রচেষ্টায়- দুই হাঁটুর উপর ভর করে কোনমতে দাঁড়াতে পেরেছিল  দেবশ্রী। এরপর হামাগুড়ি দিয়ে শুরু হলো তাঁর জীবন যুদ্ধ। ধীরে ধীরে বিলোনিয়া মহকুমার ঋষ্যমুখ ব্লকের অধীন দেবীপুর এলাকার নিজ বাড়ি থেকে প্রথমে বাবা, মা ও পিসির কোলে চরে স্কুলের যাত্রা শুরু করে। শুধুমাত্র দুটি পা অকেজো হওয়ার কারণে- লেখাপড়া শুরু করতে গিয়ে-  বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় দেবশ্রী সহ তার পরিবারকে। কিন্তু মনোবল ভাঙতে পারেনি কেউই। অঙ্গনওয়াড়ি থেকে স্কুলযাত্রা, সেখান থেকে মাধ্যমিকের লড়াই, উচ্চমাধ্যমিকের যুদ্ধে জয়ী হয়ে, বিলোনিয়া ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাবিদ্যালয়ে প্রবেশ। এই ভাবেই দুই হাতের উপর ভর করে হামাগুড়ি দিয়ে বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে স্কুলে যেতে হয়েছে দেবশ্রীকে। 

ঋষ্যমুখ ব্লক এলাকার দেবীপুরের সীমান্তবর্তী এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাড়ি হওয়ার ফলে, গাড়িতে যাতায়াত করার মত সুবিধা পায়নি দেবশ্রী। গত বছর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে বিলোনিয়া কলেজ ভর্তি হয়।  কলেজে যাওয়ার জন্য প্রতিদিন সকাল সাড়ে সাতটায় হাঁটুর উপর ভর করে বাড়ি থেকে হামাগুড়ি দিয়ে-পাঁচ কিলোমিটার অতিক্রম করে মূল সড়কের উপর গাড়িতে চাপতে হয় দেবশ্রীকে। এরপর বিলোনীয়া এসে সাড়াসীমা বাজার এলাকায় নেমে- হামাগুড়ি দিয়ে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে কলেজে পৌঁছাতে হয়। তবুও হার মানতে নারাজ। কেননা লক্ষ্যে তাঁকে পৌঁছাতেই হবে। দেবশ্রীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। বাবাও অসুস্থ।

মা একটি বিদ্যালয়ে রাঁধুনির কাজ করে। এটাই তাদের আয়ের একমাত্র উৎস। যদিও এক হাজার টাকা বিকলাঙ্গ ভাতা পায় দেবশ্রী। না, আর কোনো সুযোগ সুবিধা জুটেনি।
দেবশ্রী, দক্ষিণ জেলা শাসকের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছে সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য। অন্তত যাতায়াতের সুবিধার জন্য তাকে যদি একটি স্ক্রুটি দেওয়া হয়, তাহলে তার এই কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো। প্রশাসন এগিয়ে আসে কিনা এখন সেটাই দেখার।

Dainik Digital

Recent Posts

আলু, ধান, সবজির সাথে ডাল চাষেও এগোচ্ছে ত্রিপুরা : রতন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য এবার ধান ও সবজির পাশাপাশি ডাল জাতীয় শস্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে…

17 hours ago

চটকলের আখ্যান!!

সর্বস্বান্ত গফুর, গ্রাম ছেড়ে মেয়ে আমিনার হাত ধরে ফুলবেড়ের সর্বমা চটকলের দিকে পা বাড়িয়েছিল বাঁচার…

18 hours ago

১০০ ও ২০০ টাকার নোট নিয়ে নয়া নির্দেশ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-১০০ এবং ২০০ টাকার নোটের বিষয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বড়সড় সিদ্ধান্ত।সোমবার জারি করা এক…

2 days ago

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আগুন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-আচমকাই আগুন লাগে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে । সোমবার সন্ধ্যায় আগুন…

2 days ago

সিন্ধু তীরের জলযুদ্ধ!!

পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হানার একদিন পরে বৃহস্পতিবার ভারতের জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব দেবশ্রী মুখার্জি পাকিস্তানের জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের…

3 days ago

বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অপরাধে নিষিদ্ধ করা হল ১৬ টি ইউটিউব চ্যানেল!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-পহেলগাঁও হামলার পর থেকে কেন্দ্রীয় সরকার অ্যাকশন মোড অন করেছে । সোমবার কেন্দ্রীয়…

3 days ago