বুবাগ্রার পশ্চাদপসরণ!

 বুবাগ্রার পশ্চাদপসরণ!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

রবিবার বিকেল থেকে আচমকাই পাহাড়ে রাজনৈতিক দমকা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আর এই দমকা হাওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে মথা নেতৃত্ব।এই দমকা হাওয়ায় সিঁদূরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে মথা নেতৃত্ব।এই দমকা হাওয়ায় মথার সাজানো বাগান তছনছ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ভর করেছে তিপ্রা মথার অন্দর মহলে। বিষয়টি বুঝতে পেরে সোমবার দুপুরে রাজবাড়ির অন্দর মহলে সাংবাদিক সম্মেলন করে দমকা হাওয়া কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যায় কি না, সেই চেষ্টা করেছেন প্রদ্যোত কিশোর। তাতে ড্যামেজ কন্ট্রোল কতটা হয়েছে বা হবে, তা অবশ্যই সময়ই বোঝা যাবে।তবে এই মুহূর্তে প্রদ্যোত কিশোরের কৌশলী পশ্চাদপসরণ নিয়েই রাজ্য রাজনীতিতে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। আজ থেকে প্রায় দুই বছর আগে একেবারে উল্কার গতির মতোই প্রদ্যোত কিশোরের হাত ধরে জন্ম হয় জনজাতি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল তিপ্রা মথার।গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ড’ নামে ছোট ত্রিপুরাকে ভাগ করে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবি তুলে জনজাতি সেন্টিমেন্টকে উস্কে দিয়েছিলেন প্রদ্যোত। ত্রিপুরার রাজ পরিবারের এই উত্তরসূরিকে ত্রিপুরার সরল জনজাতিরা মনেপ্রাণে বিশ্বাসও করেছিলেন।তাকে ভিত্তি করেই রাজ্যের জনজাতিরা এক অলীক স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।সেই স্বপ্নে ভর করেই কোনও সংগঠন ছাড়াই মাত্র তিন মাসের মধ্যে ত্রিপুরা উপজাতি জেলা পরিষদের ক্ষমতা দখল করে প্রদ্যোত কিশোরের তিপ্রা মথা দল। এডিসির ক্ষমতা দখলের পর পাহাড়ে বসবাসকারী গরিব জনজাতিরা ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করে, আদতে কিছুই হওয়ার নয়। বরং পাহাড়ে বসবাসকারী জনজাতিদের আর্থ- সামাজিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। উন্নয়নতো দূরের কথা। এডিসির হাতে থাকা পাহাড়ের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সড়ক, পানীয় জল থেকে শুরু করে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলির বিন্দুমাত্রও পরিবর্তন ঘটেনি। তারপর শুরু হয় আরেক খেলা। পাহাড়বাসীকে বোঝানোর চেষ্টা হয়, শুধু এডিসি দখল করলেই হবে না। রাজ্যের ক্ষমতা দখল করতে না পারলে গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ডের দাবি পূরণ করা সম্ভব হবে না। এতে রাজ্যের জনজাতিদের একটা বড় অংশ বিশ্বাস করে নিলেও অপর অংশ কিন্তু বিশ্বাস করেনি। আর বিশ্বাস করেনি বলেই ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে ৪২টি আসনে প্রার্থী দিয়ে জয় মাত্র ১৩টি আসনে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে, ২০টি জনজাতি সংরক্ষিত আসনের মধ্যে মাত্র ১৩টি দখল করতে পেরেছে তিপ্পা মথা। এই ফলাফলের পর থেকেই প্রদ্যোতের গ্রেটার তিপ্রাল্যাণ্ডের ভবিষ্যৎ নিয়ে জোর প্রশ্ন উঠতে শুরু করে।গত চার মাস ধরে হাওড়া-গোমতী দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের গল্প থেকে শুরু করে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। ধীরে ধীরে প্রদ্যোতের সুরও নরম হতে থাকে। পাহাড়ের সরল জনজাতিরা বুঝতে না পারলেও শিক্ষিত প্রদ্যোত ঠিকই আন্দাজ করতে পারছিলেন, যে আগুন নিয়ে তিনি রাজনীতির ময়দানে খেলতে নেমেছিলেন, দাবি পূরণ না হলে সেই আগুন তাকেই গ্রাস করে নেবে। তাছাড়া শারীরিকভাবেও তিনি অসুস্থ। আগের মতো আর চাপ নিতে পারছেন না। একটা সম্মানজনক পশ্চাদপসরণের রাস্তা তিনি খুঁজছিলেন।অবশেষে গত রবিবার খুমুলুঙে আয়োজিত দলের প্রথম প্লেনারি বৈঠকের শেষদিন মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোতের বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই, স্পষ্ট হয়ে যায় বুবাগ্রা এবার কৌশলে দায় ঝেড়ে ফেলতে চলেছেন। দলের নতুন সংবিধান গ্রহণের মধ্য দিয়ে নিজে মুক্তি লাভের আশায় দিল্লীবাসী হতে যাচ্ছেন। এই কৌশলী পশ্চাদপসরণের সময়ও প্রদ্যোত নিজের বুক ঠুকে বলে গেছেন, তিপ্রাসাদের জন্য তার লড়াই জারি রাখার কথা। কিন্তু সব থেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে, নিজের হাতে দল তৈরি করে, দলের কমাণ্ড অন্যের হাতে দিয়ে তিনি শুধু দলের একজন সাধারণ কর্মী হয়ে থাকবেন? এতে তার দলটাই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবে তো? রাজনৈতিক মহলের একটা অংশের দাবি, প্রদ্যোত কিশোর রাজ্যের তিপ্রাসাদের স্বপ্ন দেখিয়ে এখন নিজে দায়মুক্ত হতে চলেছেন। তবে শেষ কথা বলবে সময়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.