বুলডোজার ও কিছু কথা!!
বুধবার ভোরবেলা বিশাল নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে পশ্চিম বু জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছেন উযাবাজারে ভারতরত্ন সংঘের বিল্ডিং।তার আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্লাব কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় দিয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল।নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল,নোটিশ পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে যেন ক্লাব ঘরের বিল্ডিং সরিয়ে নেওয়া হয়। ক্লাব কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ পালন করেনি। সাত দিনের সময়সীমা পার হতেই প্রশাসন বিদ্যুৎ গতিতে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে প্রমাণ করে দিয়েছে, সরকার ও প্রশাসন ইচ্ছে করলেই সবই করতে পারে।বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে সরকারের বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করে জেলা প্রশাসন।ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হলো ক্লাবের যাবতীয় নির্মাণ।সেই সাথে প্রশাসন নিজেদের হেফাজতে নিয়ে নেয় ক্লাবের দখলে থাকা জমিও।কেন উষাবাজারের ভারতরত্ন ক্লাবের বিল্ডিং ভেঙে দেওয়া হলো?ক্লাবের বিরুদ্ধে কি কি অভিযোগ?যে কারণে এমন একটি কঠোর প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে?এই নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। রাজ্যবাসী ইতিমধ্যে সবকিছুই জেনে গেছে এবং এই সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়কিবহাল।শুধু তাই নয়, সরকার ও প্রশাসনের এই বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত এবং তা কার্যকর করার উদ্যোগকে রাজ্যবাসী স্বাগত জানাচ্ছে। অবশ্যই এই কাজ প্রশংসার দাবি রাখে।এই নিয়ে কোথাও কোনও দ্বিমত নেই।
কিন্তু এরপরও কিছু কথা, কিছু প্রশ্ন অবশ্যই থেকে যায়। এই প্রশ্ন এবং কথাগুলো সরকার ও প্রশাসনের কাছে হয়তো তেতো লাগতে পারে। কিন্তু জনগণের মনের কথা, প্রশ্ন তো তুলে ধরতেই হবে।যে যে অভিযোগের কারণে উষাবাজারের ভারতরত্ন ক্লাব প্রশাসন বুলডোজার দিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে, এই অভিযোগ গুলি কি এই রাজ্যে শুধু একটি ক্লাবের বিরুদ্ধে? এই রাজধানী শহরে এমন একাধিক ক্লাব আছে, যেগুলি সরকারী জমি এবং অন্যের জমি জোর করে দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে। শুধু রাজধানীতেই নয়, রাজ্যের প্রতিটি মহকুমাতে এমন বহু ক্লাব রয়েছে।যেগুলো সরকারী জমিতে অথবা অন্যের জমি বেআইনিভাবে দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে।ওই ক্লাব গুলিই লোক দেখানো কিছু সামাজিক কর্মকাণ্ডের আড়ালে নিগো বাণিজ্য, জমি দালালি ও মাফিয়াদের আখড়া।বিগত বাম আমলেও এই সংস্কৃতি ছিল।২০১৮ রাম আমলেও একই সংস্কৃতি আরও ফুলে ফেঁপে পল্লবিত হয়ে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে।বাম আমলে এরাই ছিল লাল পতাকার আশ্রয়ে। তখন তারা কেউ ছিলেন বড় নেতা, মাঝারি নেতা, ছোট নেতা, অঞ্চল নেতা, কট্টর ক্যাডার।২০১৮ সরকার বদলের পর রাতারাতি জামাপাল্টে এরাই আশ্রয় নিয়েছে গেরুয়া পতাকা তলে। দল, সরকার এবং প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ এখন কার্যত তাদের হাতেই।এমন ভাবার কোনও কারণ নেই যে, দল-সরকার এবং প্রশাসন কিছুই জানে না। সবাই সব কিছু জানে। সব কিছুই সকলের নখদর্পনে।ত্রিপুরা একটি ছোট রাজ্য। রাজ্যের কোথায় প্রতিদিন কি হচ্ছে? কারা কি করছে? কেন করছে?কারা করাচ্ছে? সব কিছুই রাজ্যবাসী জানে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, যত দোষ কি শুধু উষাবাজারের ভারতরত্ন ক্লাবের?উত্তরটাও সবাই জানে।তবে ঊষাবাজার ভারতরত্ন সংঘের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎগতিতে ব্যবস্থা নেওয়ার পিছনে শাসকের গোষ্ঠীবাজির তত্ত্বের কথাও শোনা যাচ্ছে।শাসক দল ও সরকার যগি নিগো ও জমি মাফিয়া দমনে সত্যিকার অর্থেই আন্তরিক হয়, তাহলে শুধু ভারতরত্নই নয়, এই শহরের এবং রাজ্যের একাধিক ক্লাবের নামে নিগো ও জমি মাফিয়া আখড়া ভেঙে গুড়িয়ে দিতে হবে। মাফিয়াদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা। এমনটাই মনে করছে রাজ্যবাসী।নতুবা সুশাসন শুধু প্রচারেই থেকে যাবে। সর্ষ থেকে ভূত তাড়াতে না পারলে,অধরাই থেকে যাবে সুশাসন। শরীর থেকে ক্যান্সারের ক্ষত কেটে বাদ দিতে না পারলে, রোগীর যেমন খুব একটা লাভ হয় না, তেমনি একটি মাফিয়া আখড়ায় বুলডোজার চালিয়ে সমস্যা নির্মূল হবে না।থাকতে হবে ধারাবাহিক আন্তরিক প্রয়াস এবং উদ্যোগ।