‘বুড়ির চুল’ এ মিশছে বিষ; নিষেধাজ্ঞা জারি করল কেন্দ্র!!
অনলাইন প্রতিনিধি :-মুখে দিলেই গলে যায় তুলোর মতো সুস্বাদু মিষ্টি খাবার।শিশু থেকে কিশোর সবার কাছে বরাবরই জনপ্রিয় ‘কটন ক্যান্ডি’।গ্রামে-গঞ্জে অবশ্য এর পরিচিতি, ‘বুড়ির চুল’ নামে। দুর্গাপুজো থেকে মেলা, রাস্তার মোড়ে বিকোনো তুমুল জনপ্রিয় এই খাবারের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে বিষ!
গত ফেব্রুয়ারী মাসে কটন ক্যান্ডিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করছিল পুদুচেরি সরকার। এবার কেন্দ্রের তরফ থেকেও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হল,মানবদেহে বিষক্রিয়া ঘটাতে সক্ষম ‘রোডামাইন-বি’ নামের একটি রাসায়নিকের উপস্থিতির কারণেই ‘ব্যান’ করা হলো ‘কটন ক্যান্ডি’ ওরফে ‘বুড়ির চুল’।কেন্দ্রের পক্ষ থেকে সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকেও সতর্ক করে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বুড়ির চুল’এ নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পরেই পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।কেন্দ্রীয় ফুড সেফটি দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন,বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; বিশেষ করে শিশুদের স্বাস্থ্যের বিষয় যখন জড়িয়ে আছে।কেন্দ্রীয় ফুড অ্যান্ড ড্রাগ সেফটি ফর কনজিউমার্সের গভর্নর জেনারেল তামিলিসাই সৌন্দর্যরাজন ‘কটন ক্যান্ডি’কে সোমবার ব্যান করার কথা জানিয়ে অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেছেন;’আপনার সন্তানের সুস্বাস্থ্য তার নীরোগ জীবনের চাবিকাঠি আপনার হাতেই। কটন ক্যান্ডির মতো বিষাক্ত খাবার কখনোই ওদের হাতে দেবেন না।’কেন্দ্রীয় খাদ্যসুরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, গলদটা আদতে কটন ক্যান্ডিতে নয়, বরং তাতে মিশে থাকা লালচে গোলাপী রঙে।এই রঙের উৎস জামাকাপড়ে ডাই বা রঙিন করার জন্য যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় তা থেকেই। এই রঙের মধ্যে রয়েছে নিষিদ্ধ রোডামাইন- বি,যা ছাড়া বুড়ির চুলকে ধূসর এবং মলিন দেখায় বলে চোখ টানে ছোটদের।সম্প্রতি তামিলনাডুর খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরও কটন ক্যান্ডির নমুনায় ক্ষতিকারক রাসায়নিকের সন্ধান পেয়েছেন বলেও সতর্ক করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের ফুড সেফটি কমিশনার তপনকুমার রুদ্র বলেছেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশ আমাদের হাতে পৌঁছেছে।এই নির্দেশ পাওয়ার পরেই আমারা একাধিক জায়গায় ড্রাইভ দেবো। তাছাড়া প্রতিটি উৎসবের আগে আমার খাদ্য নিরাপত্তা সম্পর্কে একাধিক পদক্ষেপ নিয়ে থাকি।’
কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ডায়েটিশিয়ান অরিজিৎ দে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে সমর্থনই জানিয়েছেন।তিনি বলেছেন, ‘রোডামাইন-বি একটি ক্ষতিকারক রাসায়নিক যার উপস্থিতি টের পাওয়া গিয়েছে কটন ক্যান্ডির নমুনায়।এটি স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকারক, শরীরে নানাবিধ বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে।’একই সুর রসায়নবিদ অধ্যাপক শ্যামলকান্তি সরকারের গলায়।তিনি বলেছেন, ‘প্রিভেনশন অফ ফুড অ্যাডাল্টারেশন আইন অনুসারে এ দেশের খাদ্যশিল্পে রোডামাইন- বি’এর ব্যবহার নিষিদ্ধ।তাসত্বেও মিষ্টিতে, সসে, লঙ্কা গুড়োয় এই রাসায়নিক মেশানো হয়।যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।এর জেরে ক্যান্সারের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, জননতন্ত্র ও স্নায়ুর ক্ষতি হতে পারে।’অন্যদিকে চিকিৎসকরাও জানাচ্ছেন, এই রাসায়নিক ত্বক ও হৃদযন্ত্রেরও ক্ষতি করে।
তাই রোডামাইন-বি আছে, এমন যাবতীয় খাদ্যদ্রব নিষিদ্ধ করা উচিত।বিশেষ করে সেগুলি, যেগুলি ছোটরা খায়। কেননা,তাদের ক্ষতিটা আরও বেশি। তাৎক্ষণিক ক্ষতি হিসেবে ডায়েরিয়া, বমি, অ্যালার্জিও হতে পারে,’ মন্তব্য ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের অধ্যাপক দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের।