বেআইনি ভাবে জলাশয় লিজ!!!

 বেআইনি ভাবে জলাশয় লিজ!!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

দৈনিক সংবাদ অনলাইন প্রতিনিধি, অমরপুর।। মৎস্য দপ্তরের সঙ্গে চুক্তি খেলাপি এবং মৎস্য দপ্তরের বকেয়া আড়াই লক্ষাধিক টাকা মিটিয়ে না দেওয়া সত্ত্বেও, সেই সংস্থাকেই নিয়ম বহির্ভূত ভাবে দরপত্রে অংশ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, বর্তমানে অসম্পূর্ণ ও ভুলে ভরা দরপত্রকেই সর্বোচ্চ দরদাতা হিসাবে মান্যতা দিয়ে অমরপুরের বাষট্টি কানির জলাশয় অমর সাগরকে সাত বছরের জন্য লিজ প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করেছে অমরপুর মৎস্য দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের লিজ কমিটির কর্মকর্তারা। যা নিয়ে মহকুমা জুড়ে তীব্র গুঞ্জন শুরু হয়েছে। স্থানীয় বিধায়ক ও লিজ কমিটির কর্মকর্তাদের ভুমিকা নিয়ে বড়সর প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যেই। শুধু তাই নয়, চুক্তি খেলাপি এবং অমর সাগর দীঘির পূর্বেকার লিজের দুই লক্ষ সত্তর হাজার টাকা অনাদায়ি থাকা সত্ত্বেও ওই সংস্থাকেই পুনরায় লিজ দেওয়ার জন্য কমিটির কর্মকর্তাদের সুপারিশ সহ ওয়ার্ক অর্ডার রাজ্য মৎস্য দপ্তরে পাঠানোর কাজ সম্পন্ন করে নিয়েছেন অমরপুর মহকুমা মৎস্য আধিকারিক তথা লিজ কমিটির সদস্য সচিব। এই নিয়ে গোটা মহকুমা জুড়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। দাবি উঠেছে এই অনিয়মের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্তের।
বিগত বেশ কয়েক দশক ধরেই অমরপুর মৎস্য দপ্তরের অধিনে থাকা রাজন্য আমলের খনন করা অমরপুর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত অমর সাগর দীঘিটিতে অমরপুর ক্ষুদ্র মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি লিজ নিয়ে মৎস্য চাষ এবং মাছের ব্যবসা করে যাচ্ছিলো। বামেদের দীর্ঘ ২৫ বছরে ওই সংস্থা বাম নেতা ও কর্মী সমর্থকদের দ্বারা পরিচালিত হলেও, মাছ চাষ করে মৎস দপ্তরের লিজের টাকা যথা সময়ে পরিশোধ করে প্রভুত সম্পদের অধিকারী হয়েছিল। অমরপুর বাজারে দোকান ভিট,শঙ্কর পল্লীতে বাস্তু ভুমি সহ অমরপুরে বেশকিছু স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির মালিক হয়ে যায় ওই সংস্থা, শুধুমাত্র অমর সাগর দীঘিতে মাছ চাষ করে। ২০১৮ সালে রাজ্যে বিজেপি- আইপিএফটি জোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর, পালা বদলের প্রভাব পরে অমরপুর ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির উপরও। রাতারাতি বামেদের হটিয়ে সংস্থার পরিচালন কমিটি গঠিত হয় রাম ভক্তদের নিয়ে। শেষের শুরুটা কিন্তু তখনই শুরু হয়ে যায়। বামেদের পরিচালন কমিটি, রামভক্ত পরিচালন কমিটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় দোকান ভিটি,বাস্তু ভুমি, কোটি টাকার স্হাবর অস্থাবর সম্পত্তি সহ সমবায় ব্যাঙ্কের অমরপুর শাখায় বারো লক্ষাধিক টাকা আমানত রেখে যায়। কিন্তু গত চুয়ান্ন মাসে পুরো খোকলা হয়ে গেছে সংস্থার কোষাগার। সমবায় ব্যাঙ্কের একাউন্টে বর্তমানে দশ টাকাও নেই বলে সংবাদ। রামভক্তদের পরিচালন কমিটি অমর সাগর দীঘির মাছ সহ কোষাগারের যাবতীয় অর্থ লুটেপুটে খেয়ে সাবার করে দিয়েছে। বর্তমান অমরপুর ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির পরিচালন কমিটি, মহকুমা মৎস্য দপ্তরকে অমর সাগর দীঘির পুর্বেকার লিজের বকেয়া দেনা রয়েছে দুই লক্ষ সত্তর হাজার টাকার অধিক। তাছাড়া বাজেরেও প্রচুর ঋন রয়েছে সংস্থার।এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রাম আমলের ৫৪ মাসে সমিতির পরিচালন কমিটি দুই বার পরিবর্তন করেও অবস্থার ইতর বিশেষ উন্নতি তো হয়ই নি বরং আরও অবনতি হয়েছে। সমিতিতে কর্মরত শ্রমিকরা,দীঘির পাহারাদার সহ হাতে গোনা কর্মচারীদের মাসান্তে মাস মাহিনা পর্যন্ত মিটিয়ে দিতে পারছে না সংস্থার পরিচালকরা। সংস্থার একমাত্র নাইট গার্ড গত এক বছরের উপর মাস মাহিনা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। সংস্থার বর্তমান পরিচালন কমিটি মৎস্য দপ্তরের বকেয়া মিটিয়ে না দেওয়ায় মৎস্য দপ্তর নুতন করে আর ক্ষুদ্র মৎসজীবী সমবায় সমিতির সাথে চুক্তিতে যায়নি। সমিতির নিকট দুই লক্ষ সত্তর হাজার টাকা বকেয়া পাওনা রেখেই গত ৮ ই আগষ্ট মৎসজীবী সমবায় সমিতির সাথে মৎস দপ্তর পুরানো চুক্তি বাতিল ঘোষনা করে। নুতন করে অমর সাগর দীঘির লিজ প্রদানের জন্য দরপত্র আহ্বানের উদ্যোগ নেয়। কিন্ত তার মধ্যেই শাসক দলের পরিচালিত কমিটির কোনও কোনও পদাধিকারি পূর্বের মত চুরি করে অমর সাগর দীঘির মাছ উজার করে দিয়ে নিজেদের পকেট স্ফিত করতে থাকে। যা নিয়ে বার কয়েক থানা পুলিশ ও হয়। অমর সাগর দীঘি থেকে আটক করা মাছ ধরার বেশ কিছু কারেন্ট জাল এখনো বীরগঞ্জ থানার পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
তারমধ্যেই গত ২৩ আগস্ট অমরপুর মৎস্য দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক সেহা নম্বর F.3(11)-SF/AMP/TENDER/2022-23/1367 মুলে অমরসাগর দীঘির সাত বছরের জন্য লিজ প্রদানের জন্য নিদ্দির্ষ্ট বেশ কয়েকটি শর্ত আরোপ করে দরপত্র আহ্বান করেন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিকাল চারটা পর্যন্ত দরপত্র জমা দেওয়ার নির্দিষ্ট সময় সীমা পর্যন্ত অমরপুরের পাঁচটি ব্যক্তি ও সংস্থা তথা ষ্ট্যান্ডিং সামাজিক সংস্থা, রানা পাল, খোকন সাহা, অমরপুর ক্ষুদ্র মৎসজীবী সমবায় সমিতি এবং নারায়ন সাহা দরপত্রে অংশ গ্রহণ করেন। কিন্তু দপ্তরের চুক্তি খেলাপি এবং দপ্তরের নিকট দুই লক্ষ সত্তর হাজার টাকা ঋনি থাকা ডিফল্টটার সংস্থা কি ভাবে দরপত্রে অংশ গ্রহণ করতে পারলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। ১৫ সেপ্টেম্বর দরপত্র খোলার পর দেখা যায় দপ্তরের দেওয়া শর্ত অনুযায়ি পাঁচ দরদাতার মধ্যে চারটি দরপত্রই ইনফরমাল, অসম্পূর্ণ এবং শর্ত অনুযায়ী প্রতি বছরে ন্যুনতম পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি হাড়ে দরপত্রে টাকার অঙ্ক ভুল বসানো হয়েছে চারটি দরপত্রেই। দরপত্রে মৎস্য দপ্তরের উল্লেখ করা সমস্ত শর্ত অনুযায়ী শুধুমাত্র ষ্ট্যান্ডিং সামাজিক সংস্থার দরপত্রই সঠিক বিবেচ্য হয় । দপ্তরের শর্ত ও নিয়ম অনুযায়ী ষ্ট্যান্ডিং সামাজিক সংস্থাই অমর সাগর দীঘির লিজ পাওয়ার আইনত অধিকারী। কিন্তু তার পরেই আসল খেলা শুরু হয়। দরপত্র সংক্রান্ত ফাইল যায় লিজ প্রদান কমিটির অনুমোদনের জন্য। চার সদস্যের লিজ কমিটির চেয়ারম্যান হলেন অমরপুর নগর পঞ্চায়েতের চেয়ারম্যান প্রাক্তন শিক্ষক বিকাশ সাহা,ভাইস চেয়ারম্যান মৎস্য দপ্তরের গোমতী জেলার উপ অধিকর্তা সুজিত সরকার, সদস্য সচিব মহকুমা মৎস্য তত্ত্বাবধায়ক অজয় দাস এবং একমাত্র সদস্য হলেন মহকুমা ম্যাজিসট্রেট অসিত কুমার দাস। কমিটির সকলেই উচ্চ শিক্ষিত সরকারী পদাধিকারি হওয়া সত্ত্বেও কোন প্রকার হিসাব কিতাব কিংবা স্কুৃটিনির ধারে কাছে না গিয়ে, বিধায়কের হুকোয় তামাক খেয়ে নগর পঞ্চায়েতের চেয়ারম্যানের কথায় সায় দিয়ে বিগত দিনে মৎস্য দপ্তরের চুক্তি খেলাপি ভুলে ভরা ইনফরমাল,অসম্পূর্ণ দরদাতা অমরপুর ক্ষুদ্র মৎসজীবী সমবায় সমিতিকেই পুনরায় বাষট্টি কানির জলাশয় অমর সাগর দীঘিকে লুটেপুটে খাওয়ার জন্য লিজ প্রদানের সুপারিশ করে বলে অভিযোগ। চুক্তি খেলাপি, ঋনী ওই একই সংস্থাকেই যখন পুনরায় লুটপুটে খাওয়ার সরকারি অনুমোদন দেওয়া হবে বলে শাসক দলের নেতৃত্বরা ঠিক করে রেখেছিলেন, তাহলে চুক্তি বাতিল, দরপত্র আহ্বান করার নাটক না করলেই তো হতো। সরাসরি অমর সাগর দীঘির সাথে ফটিক সাগর দীঘিও ওই একই সংস্থার হাতে তুলে দিলেই ষোলকলা পূর্ণ হতো।
এই বিষয়ে মহকুমা মৎস্য দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক অজয় দাসের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ক্ষুদ্র মৎসজীবী সমবায় সমিতির চুক্তি খেলাপের এবং দুই লক্ষ সত্তর টাকা সমিতির নিকট পাওনা থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দরপত্র ও লিজ প্রদানের কমিটির সুপারিশ সহ তিনি দরপত্রের বিষয়টি রাজ্য মৎস্য অধিকর্তার নিকট পাঠানো হয়েছে। মৎস্য অধিকর্তার সিদ্ধান্তই চুরান্ত সিদ্ধান্ত বলে মহকুমা মৎস্য তত্ত্বাবধায়ক জানান। অপরদিকে দপ্তরের শর্ত অনুযায়ী সর্বোচ্চ দরদাতা ষ্ট্যান্ডিং সামাজিক সংস্থাও আইনি ভাবে বিষয়টি মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.