বেতন বাড়লো মন্ত্রী, বিধায়কদের!!

 বেতন বাড়লো মন্ত্রী, বিধায়কদের!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-ছয় বছর পর একলাফে অনেকটাই বাড়লো রাজ্যের মন্ত্রী, বিধায়কদের বেতন সহ অন্যান্য ভাতা। একই সাথে বড়লো পেনশন, ফ্যামিলি পেনশনের পরিমাণ। বুধবার বিধানসভায় এ সংক্রান্ত বিলটি সর্বসম্মতিতেই পাস হয়েছে। এখন থেকে মুখ্যমন্ত্রীর মাসিক বেতন হলো ৯৭ হাজার টাকা। এছাড়াও রয়েছে অন্যান্য ভাতা। উপ মুখ্যমন্ত্রী মাসিক বেতন ৯৬ হাজার টাকা। সঙ্গে অন্যান্য ভাতা। মন্ত্রীরা পাবেন মাসিক ৯৫ হাজার টাকা। সঙ্গে অন্যান্য ভাতা। স্পিকার পাবেন মাসে ৯৫ হাজার টাকা। সাথে অন্যান্য ভাতা। বিরোধী দলনেতা ৯৫ হাজার টাকা, সাথে অন্যান্য ভাতা। মুখ্য সচেতক ৯৫ হাজার টাকা, সাথে অন্যান্য ভাতা। ডেপুটি স্পিকার ৯৪ হাজার টাকা, সাথে অন্যান্য ভাতা। বিধায়করা পাবেন প্রতি মাসে ৯৩ হাজার টাকা, সাথে অন্যান্য ভাতা। এছাড়া ব্যক্তিগত ব্যয় ভাতা প্রতি মাসে মুখ্যমন্ত্রী পাবেন ১৩ হাজার টাকা। উপ মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধী দলনেতা, সরকারী মুখ্য সচেতক এবং ডেপুটি স্পিকার প্রতিমাসে পাবেন ১২ হাজার টাকা করে।এছাড়াও অতিথি আপ্যায়ন ভাতা প্রতি মাসে মুখ্যমন্ত্রী পাবেন ১৫ হাজার টাকা করে। উপ মুখ্যমন্ত্রী ১৪ হাজার টাকা। মন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধী দলনেতা, মুখ্য সচেতক, ডেপুটি স্পিকার প্রতিমাসে পাবেন তেরো হাজার টাকা করে। পরিবহণ ভাতা মন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলনেতা, মুখ্য সচেতক এরা আগে পেতেন ৪,৩১০ টাকা করে। বেড়ে হলো ৭,০০০ টাকা। নিজের গাড়ি যারা ব্যবহার করতেন তারা এতদিন পেতেন ৩,২৫০ টাকা করে। এখন পাবেন ৫,২০০ টাকা করে। বিধায়করা পরিবহণ ভাতা আগে পেতেন ৯,৫০০ টাকা করে। এখন থেকে পাবেন ১৬,০০০ টাকা করে। টিএ আগে পেতেন (রোেড মাইলেজ) চব্বিশ টাকা করে, এখন সেটা পঁয়ত্রিশ টাকা হয়েছে। ডিএ রাজ্যের ভেতরে সাতশো টাকা পেতেন, এখন পাবেন ১১০০ টাকা করে। রাজ্যের বাইরে গেলে আগে পেতেন নয়শো টাকা, এখন পাবেন ১৫০০ টাকা। নির্বাচন ক্ষেত্র ভাতা মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলনেতা, মুখ্য সচেতক এখন থেকে প্রতি মাসে ২১,০০০ টাকা করে পাবেন। পোস্টাল ভাতা সকলে আগে পেতন ৩,৯৪০ টাকা করে, এখন পাবেন ৯,০০০ টাকা করে। টেলিফোন সুবিধা এবং ভাতা আগে পেতন ৬,৭৪০ টাকা করে, এখন পাবেন ১১,০০০ টাকা করে। বাড়ি ভাড়া ভাতা আগে পেতেন ৪,৩০২ টাকা করে, এখন পাবেন ১৫,০০০ টাকা করে। পেনশন আগে ছিল ৩৪,৫০০ টাকা। সেটা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৬,০০০ টাকা। আগে সাড়ে চার বছর বিধায়ক পদে থাকলেই পেনশনের সুবিধা পাওয়া যেতো। এই আইন সংশোধন করা হয়েছে। এখন থেকে বিধায়ক পদে একদিন থাকলেও পেনশনের সুবিধা পাবে। পারিবারিক পেনশন আগে ছিল মাসে ২৫,০০০ টাকা, এবার বাড়িয়ে ৪৮,০০০ টাকা করা হয়েছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের স্পেশাল ভাতা আগে ছিল ২,৮৮০ টাকা, এবার সেটা বাড়িয়েকরা হয়েছে ৬,০০০ টাকা। বিলটি উত্থাপন করেছেন পরিষদীয় মন্ত্রী রতনলাল নাথ। বিলের উপর প্রথমে আলোচনা করতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা জিতেন চৌধুরী বলেন, আমরাই আমাদের বেতন ভাতা বাড়াই। যেভাবে বৃদ্ধি করা হচ্ছে, বলা যায় প্রায় একশ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে রাজ্যের মানুষের যে পরিস্থিতি তাতে এটা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, জিতেনবাবু বিলের বিরোধিতা করেননি। বরং তিনি প্রয়াত জনপ্রতিনিধিদের পরিবারগুলি যাতে সুবিধা পায় তার দাবি জানান। এরপর কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ বিরোধী দলনেতার বক্তব্যকে অনেকটা কটাক্ষ করে বলেন, বিলে এমন একটা সুযোগ থাকুক যারা সারেন্ডার করতে চায়, তারা যেন সেটা করতে পারে। তিনি মেডিকেল বিল নিয়ে কিছু অনিয়মের উল্লেখ করেন। এ ব্যাপারে কঠোর হওয়ার দাবি জানান। এই ক্ষেত্রে তিনি টাকা নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা বলেন। একমাত্র রেফার হলে বিষয়টি অন্যভাবে বিবেচনা করার কথাও বলেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে এদিন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী সরাসরি বিরোধী দলনেতা জিতেন চৌধুরীকে নিশানা করেন। তিনি বলেন, আপনি প্রস্তাবের বিরোধিতা করেননি, অথচ ঠিক হচ্ছে না বলে মন্তব্য করলেন। এমন দ্বিচারিতা কেন? প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও এমনটাই করতেন। গত পাঁচ বছর বামপন্থী বিধায়কদের পকেটে কি টাকা যায়নি? তিনি সুদীপবাবুর প্রস্তাব সমর্থন করে বলেন, যারা চান না তারা এই বেতন ভাতা না নিলেই পারেন। সবশেষে পরিষদীয় মন্ত্রী রতনলাল নাথ কেন এই বিল আনা হলো? প্রয়োজনীয়তা কেন পড়লো, তার বিস্তারিত উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন। তিনি এ দিন বলেন, অতীত জানতে হবে অতীতকে ভুলে গেলে চলবে না। তিনি বলেন, এই রাজ্যে প্রথম বিধানসভা থেকে আজ পর্যন্ত তিনজন মনোনীত সহ ৭৫১ জন বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্য থেকে অনেকে মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী হয়েছেন। আজ আমাদের মধ্যে অনেকেই নেই। যারা আজও বেঁচে আছেন এবং যারা এই পৃথিবীর মোহ ত্যাগ করে চলে গেছেন, আমরা কজন তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিই? তারা কেমন আছেন। তাদের স্ত্রী এবং পরিবার কেমন আছে? আমরা কি খোঁজ রাখি? মন্ত্রী বলেন তাদের এবং তাদের পরিবারগুলোর করুণ অবস্থা। তারা এই রাজ্যের জন্য কিছুই করেননি? আজ আমরা যে জায়গায় পৌঁছেছি, এর জন্য পুরো অবদান তাদের এদের আমরা অস্বীকার করবো কীভাবে? এদের খোঁজখবর আমরা রাখবো ন তো কে রাখবে? মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেকের কিছু না কিছু অবদান রয়েছে এই রাজ্যনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে।বক্তব্য রাখতে গিয়ে পরিষদীয় মন্ত্রী শ্রীনাথ এ দিন রাজ্যের এগারোজন (প্রাক্তন ও বর্তমান) মুখ্যমন্ত্রীকে নিজের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং অনুভব থেকে মূল্যায়ন করেন। একই সাথে তাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূষিত করেন। রাজ্যের প্রাক্তন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্রলাল সিংহকে তিনি ‘রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথিকৃৎ’ হিসাবে ভূষিত করেন। তার মূল্যায়নে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুখময় সেনগুপ্ত হলেন ‘ভালো প্রশাসক’। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নৃপেন চক্রবর্তী হলেন ‘রাজ্যে কমিউনিস্ট সরকারের প্রধান কাণ্ডারী’। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুধীররঞ্জন মজুমদার ‘সোজা সরল মানুষ’। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সমীর রঞ্জন বর্মণ’ চৌকস রাজনীতিবিদ’। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল দাস ‘মৃদুভাষী’। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাধিকারঞ্জন গুপ্ত হলেন ‘বুদ্ধিমান’। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দশরথ দেব হলেন ‘মুকুটহীন রাজা’। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার ‘নৃপেন চক্রবর্তীর ভাবশিষ্য এবং দীর্ঘদিনের প্রশাসক’। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব হলেন ‘রাজ্যে কমিউনিস্ট শাসন অবসানের পুরোধা, রাজ্যে ইতিবাচক রাজনীতির প্রচারক এবং সার্বিক উন্নয়নের মার্গ দর্শক’। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা হলেন ‘সজ্জন ব্যক্তি এবং উন্নয়নের কারিগর’।এভাবেই নানাভাবে প্রাক্তন ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর মূল্যায়ন করেন রতনবাবু।শেষে সর্বসম্মতভাবেই বিলটি পাস হয়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.