বৈঠকের পরও আচমকা বাজারে লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি পেঁয়াজের!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বাজারে আবার আচমকা পেঁয়াজের লাগামছাড়া মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।মূলত গত বুধবার থেকেই বাজারে পেঁয়াজের মূল্য আবার বৃদ্ধি পেতে থাকে। মহারাজগঞ্জ বাজার ও আগরতলার অন্যান্য বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য গত চারদিনে প্রতিকিলোতে চার থেকে পাঁচ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।মহারাজগঞ্জ বাজার সহ খুচরো বাজারগুলিতেও পেঁয়াজের মূল্য গত চারদিনে প্রতিকিলোতে ১০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।বাজারে আচমকা লাগামছাড়া পেঁয়াজের মূল্য এক লাফে এতটা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিস্ময় দেখা দিয়েছে।তাজ্জব ব্যাপার হলো,গত ৩১ মে গোর্খাবস্তিস্থিত খাদ্য দপ্তরের
প্রধান কার্যালয়ে খাদ্যমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী আহূত বৈঠকে পেঁয়াজ, আলু’র পাইকারী ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাও উপস্থিত হয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এখন আপাতত: মূল্য বৃদ্ধি করা হবে না। বহিঃরাজ্যে যদি কোন মূল্য বৃদ্ধি পায় সেই পেঁয়াজ ও আলু – যখন আগরতলা তথা রাজ্যে আনা হবে তখন নতুন মূল্য বৃদ্ধি করার প্রয়োজন পড়লে খাদ্য দপ্তর ও সদর মহকুমাশাসককে জানিয়ে মূল্যবৃদ্ধির সব কাগজপত্র দেখিয়ে অনুমতি নিয়ে মূল্যবৃদ্ধি করা হবে। খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের এই বৈঠকের তিন দিনের মাথায় আবার বাজারে আলু, পেঁয়াজ সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি রোধে নিয়ন্ত্রণে আনতে সদর মহকুমাশাসক মানিক লাল দাসও ব্যবসায়ীদের ডেকে নিয়ে বৈঠক করেন গত সোমবার।ওই বৈঠকেও মহারাজগঞ্জ বাজার সহ আগরতলা ও সদর এলাকার বিভিন্ন বাজারে পাইকারি ব্যবসায়ী সহ বাজার ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর পদাধিকারীরা উপস্থিত ছিলেন।বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় এখন আপাতত আলু, পেঁয়াজ সহ কোন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি করা যাবে না।যখন কোন কারণে মূল্যবৃদ্ধির প্রয়োজন পড়ে সদর মহকুমা শাসক থেকে বহিঃরাজ্য থেকে মালামাল ক্রয়ের প্রয়োজনীয় ও সঠিক কাগজপত্র দেখিয়ে অনুমতি নিয়ে মূল্য বৃদ্ধি করতে হবে। বিস্ময় ও পরিতাপের ব্যাপার হলো, খাদ্যমন্ত্রী ও সদর মহকুমাশাসকের সঙ্গে বৈঠকে মূল্য বৃদ্ধি রোধে এই সব সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা আচমকা আবার বাজারে পেঁয়াজের মূল্য একলাফে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি করে দিয়েছেন।সদর মহকুমাশাসকের সঙ্গে সোমবার যখন ব্যবসায়ীরা বৈঠক করেন সেই বৈঠকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছিলেন মহারাজগঞ্জ বাজার তথা -আগরতলার অন্যান্য বাজারে ভালো লাল রংয়ের পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য সর্বোচ্চ ২৬ টাকা ৫০ পয়সা প্রতিকিলোর মূল্য রয়েছে।বাজারগুলোতে ভালো লাল রংয়ের খুচরো পেঁয়াজের মূল্য প্রতিকিলো ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।অথচ তাজ্জব ব্যাপার হলো, মঙ্গলবার সদর মহকুমাশাসকের সঙ্গে বৈঠকে ২৬ টাকা থেকে ২৬ টাকা ৫০ পয়সা পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানালেও বৈঠকের পরদিন বুধবার থেকেই বাজারে পাইকারি মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকে।শনিবার সন্ধ্যায় মহারাজগঞ্জ বাজারে পাইকারি পেঁয়াজের মূল্য নেওয়া হয়েছে প্রতিকিলোতে ৩২ টাকা থেকে ৩৩ টাকা। মঙ্গলবার সদর মহকুমাশাসকের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রতিকিলোতে পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ টাকার উপর।আর খুচরো বাজারে পেঁয়াজের মূল্য প্রতিকিলোতে বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ টাকা।শনিবার সন্ধ্যায় আগরতলার বাজারগুলিতে প্রতিকিলো পেঁয়াজ খুচরোতে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।ক্ষুব্ধ ক্রেতাসাধারণের প্রশ্ন, খাদ্যমন্ত্রী ও সদর মহকুমাশাসকের সঙ্গে বৈঠকের পরই কীভাবে বাজারে পেঁয়াজের মূল্য লাগামছড়া বৃদ্ধি পেলো। বৈঠকের প্রতিফলন কোথায় প্রশ্ন তা নিয়েও।এদিকে বাজারে পেঁয়াজের মূল্য লাগামছাড়া অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে এই খবর পেয়ে শনিবার সরকারী ছুটির দিনেও সদর এনফোর্সমেন্ট টিমের অফিসাররা মূল্য বৃদ্ধি রোধে ও নিয়ন্ত্রণে আনতে মহারাজগঞ্জ বাজার ও বটতলা বাজারে অভিযানে নেমে পড়েন। মহারাজগঞ্জ বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীদের একাধিক দোকানে অভিযান করে এনফোর্সমেন্ট টিম। মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসাবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এনফোর্সমেন্ট টিমের অফিসারদের কাছে দাবি করেন বহিঃরাজ্যের (নাসিক) উৎসস্থলে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।তাই মহারাজগঞ্জ বাজারেও পাইকারীতে মূল্য বৃদ্ধি পায়। যদিও এনফোর্সমেন্ট টিমের অফিসাররা পেঁয়াজ ক্রয়ে বহিঃরাজ্যের মূল্য বৃদ্ধির উপযুক্ত প্রমাণ, পেঁয়াজ ক্রয়ের এনভয়েজ পাকা ক্যাশ মেমো দেখতে বললে পাইকারি ব্যবসায়ীরা তা দেখাতে পারেননি বলে এনফোর্সমেন্ট টিমের অফিসাররা জানান। মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এনফোর্সমেন্ট টিমের কাছে কোনও উপযুক্ত প্রমাণ না দেখাতে পারায় অভিযানকারী দলের তরফে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য খাদ্য দপ্তরের অধিকর্তা নির্মল অধিকারী ও সদর মহকুমাশাসক মানিকলাল দাসের কাছে রিপোর্ট দিয়েছে। তারপর এখন খাদ্য অধিকর্তা ও সদর মহকুমা শাসক কী পদক্ষেপ নেবেন তা জানা যায়নি।যদিও মহারাজগঞ্জ বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাবি করছে বহিঃরাজ্যে (নাসিক) উৎসস্থলে পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে প্রতিকিলো বিক্রি ২১ টাকা থেকে ২২ টাকায়।এদিকে বটতলা বাজারে এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযানে গিয়ে পেঁয়াজ খুচরো প্রতিকিলো ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে দেখে আসেন। কেন মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে খুচরো ব্যবসায়ীরা এনফোর্সমেন্ট টিমের কাছে দাবি করেন, পাইকারিতে প্রতিকিলো ৩৩ টাকায় কিনতে হয়েছে।ক্রয়ের ক্যাশ মেমোও দেখান। মূল্য তালিকা কোন দোকানে টাঙানো নেই তাও দেখে আসে এনফোর্সমেন্ট টিম।কোন পদক্ষেপ নেয়নি। খাদ্য অধিকর্তা ও সদর মহকুমাশাসকের কাছে এনফোর্সমেন্ট টিম এই বিষয়ে রিপোর্ট দিয়েছে। এনফোর্সমেন্ট টিমের অভিযানে অংশ নেন খাদ্য দপ্তরের উপঅধিকর্তা স্বপন দেববর্মা, সদর ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কন্ট্রোলার অনিরুদ্ধ ধর চৌধুরী,খাদ্য পরিদর্শক দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, শর্মিষ্ঠা দাস, কিষান চন্দ্র সাহা।