বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগ জরুরিঃ হাসিনা!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

শ্যামল সান্যাল।। ঢাকা।। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩,

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করার এবং বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় সমন্বিতভাবে প্রচেষ্টা গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন। শেখ হাসিনা শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর চার দফা সুপারিশে এই আহ্বান জানান। তিনি শীর্ষ সম্মেলনে ‘ওয়ান আর্থ’ অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় তাঁর প্রস্তাবে প্রথম বলেছেন, ‘এখানে জি-২০ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং বাংলাদেশ সংকট মোকাবেলায় কার্যকর সুপারিশ তৈরি করতে তাদের প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে”। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লির প্রগতি ময়দানে ভারত মন্ডলম কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্টিত শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দ্বিতীয় পয়েন্টে বলেন, মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে এবং সারা বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বব্যাপী সাহসী,দৃঢ় এবং সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন,বৈশ্বিক উন্নয়নের জন্য প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোকে তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করা উচিত। তৃতীয়ত,ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের ত্রয়ীকার সদস্য হিসেবে তিনি বলেন,জলবায়ুজনিত অভিবাসন মোকাবেলায় অতিরিক্ত অর্থায়নের ব্যবস্থা করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষতি এবং ক্ষয়ক্ষতি তহবিল চালু করার জন্য আমি সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, ‘আসন্ন কপ-২৮এ, আমি সকলকে জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার সাথে ক্ষতি এবং ক্ষতির জন্য তহবিল বাস্তবায়নের উপর জোর দেওয়ার জন্য অনুরোধ করব।


বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অবশেষে অভিমত ব্যক্ত করেন, সব মানুষেরই উপযুক্ত জীবনযাপনের সমান অধিকার থাকা উচিত।দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক সম্প্রদায় ভুলবেন না এবং তাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা আরো বলেন,আমরা আমাদের পৃথিবীকে বাঁচাতে ও শক্তিশালীকরণে জি-২০ অংশীদারদের সাথে কাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।


তিনি বলেন,আমাদের একে অপরের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে এবং আমাদের মাতৃ পৃথিবীর যত্ম নেওয়ার জন্য নিজেদেরকে পুনরায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।’
২০২২ সালে গঠিত জাতিসংঘ মহাসচিবের গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেখ হাসিনা উল্লিখিত সুপারিশগুলো করেছেন। শীর্ষ
সম্মেলনের এই অধিবেশনে ভাষণকালে তিনি আরো বলেন,‘আমরা এমন একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থা চাই যা দারিদ্র্য বিমোচন,জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্র্রভাব প্রশমন,সংঘাত প্রতিরোধ এবং জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য প্রযুক্তিগত স্থানান্তরকে অর্থায়নের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।
অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই শীর্ষ সম্মেলনটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন আমাদের মাতৃ পৃথিবী জলবায়ু পরিবর্তনের একাধিক সংকট,কভিড-১৯ মহামারী এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চ্যালেঞ্জ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘এই চ্যালেঞ্জগুলো মানবজাতির শান্তি ও উন্নয়ন এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য সম্প্রদায়ের গ্রহণ করা অপরিহার্য।
তিনি আরও বলেন, বাস্তবতা হল মানুষ এবং আমাদের মাতৃভূমি কেবল পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমেই টিকে থাকতে পারে।
অতএব,আমাদের উন্নয়ন প্রচেষ্টা সবুজ এবং টেকসই উন্নয়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে-উল্লেখ করে তিনি বলেন,এখন আমরা সার্কুলার অর্থনীতির পদ্ধতিও নিচ্ছি।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে নগণ্য অবদান রাখলেও এর পরিণতির শিকার হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের গ্রাউন্ডসওয়েল রিপোর্ট ২০২২ অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ সালের মধ্যে ১৩.৩ মিলিয়ন মানুষকে তাদের স্বাভাবিক আবাসস্থল থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, যদিও বাংলাদেশের প্রশমনের সুযোগ কম। প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন এবং এসডিজি অর্জনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাব মোকাবেলায় অনেক রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে তিনি গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ বা আশ্রয় নামে একটি প্রকল্প শুরু করেন।
এই উদ্যোগের অধীনে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত তাঁর সরকার প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার ভূমিহীনও গৃহহীন পরিবারকে বিনা মূল্যে বাড়ি ও জমি দিয়ে পুনর্বাসন করেছে।
তিনি বলেন ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত করা।
বাংলাদেশ’ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার রোল মডেল’হিসেবে পরিচিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,তারা দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং জলবায়ু অভিযোজনে শক্তিশালী অবস্থা অর্জন করেছে।
দুর্যোগ মেকাবেলার জন্য তাঁর সরকার ৪ হাজার ৫৩০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এছাড়া এখন বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য ‘মুজিব কিল্লা’ নামে আরও ৫৫০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করছে। তিনি
বলেন,বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য আমরা ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’ চালু করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার আমাদের ভবিষ্যৎপ্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য ও সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ প্রণয়ন করেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘২০২২ সালে আমার সরকার জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা চালু করেছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। আমরা এই বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে সক্রিয় সর্থনের আহ্বান জানাই।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

গয়নার ল্যাবে তৈরি হলো বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম রুবি!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-বাংলায় চুনি, ইংরেজিতে রুবি।চুনির রং কতটা টকটকে লাল, তার উপর এই মানিকের দাম…

4 hours ago

মুখ্যমন্ত্রীর মুখ বাঁচাতে পুলিশ প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-চাঁদারজুলুম নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে তথাকথিত সুশাসনের রাজ্যে প্রশাসনের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা প্রকাশ্যে এলো।…

5 hours ago

কাজের বাজারে মন্দা!!

কেন্দ্রে ১০০ দিন পূর্ণ করল তৃতীয় মোদি সরকার।যদিও বর্তমান ক্ষমতাসীন কেন্দ্রীয় সরকারকে মোদি সরকার আখ্যা…

5 hours ago

নিগো – অন্ধ প্রশাসন!!

নিগো বাণিজ্যের রমরমা চালানোর জন্যই কি ১৮ সালে রাজ্যের মানুষ বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছিলো?রাজ্যের আকাশ…

1 day ago

বিমানযাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে পুলিশের তদন্ত শুরু!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-এয়ারইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের কর্মীর চরম গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণে রীতা বণিক (৫৯) বিমান যাত্রীর…

1 day ago

হরিয়ানাঃ পাল্লা কার পক্ষে?

হরিয়ানা কি বিজেপির হাত থেকে ফসকে যাচ্ছে?শাসক বিজেপির হাবভাব দেখে তেমনটাই অনুমান করছে রাজনৈতিক মহল।প্রধানমন্ত্রী…

2 days ago