বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম

 বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম

Gender equality. Man and woman in business suits standing on scales in balance, equal rights and pay, salary and fairness for both sexes at work, opportunities for employee vector flat cartoon concept

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

যোগ্যতা এক । শিক্ষাগত ডিগ্রিও এক । মেধার ক্ষেত্রেও কেউ এতটুকু পিছিয়ে নেই । কিন্তু ব্যবধান ঘুচছে না । কর্মক্ষেত্রে এভাবেই গোটা দুনিয়া জুড়ে পুরুষের কাছে নারীরা বেতনবৈষম্যের শিকার হচ্ছেন । দক্ষতা সত্ত্বেও সমান কাজে সমান পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না মহিলারা । অর্থাৎ মুখে মুখে যতই নারীদের প্রতি সামাজিক বৈষম্য ও বঞ্চনা দূর করার অঙ্গীকার করা হলেও রাষ্ট্রব্যবস্থা এখনো নারীদের অনেকদূর পিছিয়ে রেখেছে পুরুষের তুলনায় । সম্প্রতি গোটা বিশ্বে পালিত হয়েছে সমবেতন দিবস বা ইক্যুয়াল পে ডে । এই দিবস উপলক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা সংক্ষেপে আইএলও একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে । এই রিপোর্ট প্রকাশের পরই বিশ্বের তাবড় তাবড় নারী সংগঠন দুনিয়া জুড়ে নারীদের প্রতি বেতনবৈষম্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতেই রাষ্ট্রসংঘের নিজস্ব সংগঠন ‘ ইউ উইমেন ‘ নারীদের বেতনবৈষম্য দূর করার জন্য অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছে । ইউ উইম্যান ‘ হচ্ছে রাষ্ট্রসংঘের সেই প্রতিষ্ঠান যারা দীর্ঘদিন ধরে লিঙ্গ – সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে চলেছে । আসলে ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন যে রিপোর্ট গত ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করেছে তা উদ্বেগ বাড়ানোর মতোই । রিপোর্টে বলা হয়েছে , কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে মহিলারা এখনও শোষিত হচ্ছেন । পুরুষদের তুলনায় মহিলারা এখনও চাকরিতে ২০ শতাংশ কম বেতন পান এবং এই চিত্রটা বিশ্বের সর্বত্র প্রায় একই রকম । প্রশ্ন হলো , অশিক্ষার জন্য কিংবা কম পড়াশোনার জন্য মেয়েরা সমাজে পিছিয়ে রয়েছেন- এক সময়ের এই ধারণাটা এখন পৃথিবীতে অচল । তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই যে জিনিসটা মনে প্রশ্ন জাগে , শিক্ষার অভাব যদি নাই হয় , তবে কি লিঙ্গ বৈষম্যের কারণেই ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছে মেয়েরা ? অক্সফাম ইণ্ডিয়া তাদের সর্বশেষ যে সমীক্ষা প্রকাশ করেছে তাতে বলা হচ্ছে , কর্মক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ভারতে যে ব্যবধান তৈরি হচ্ছে তার ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রেই মূল কারণ লিঙ্গ বৈষম্য । অন্যদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা তাৎপর্যপূর্ণ একটি তথ্য দিয়ে বলেছে , লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে মহিলারা পুরুষের তুলনায় ২০ শতাংশ বেতন কম পান এটা যেমন সত্য , তেমনি বয়স , কাজের সময়ের পরিমাণ- শ্রম বাজারের এই বৈশিষ্ট্যের নিরিখে হিসাব করলে পুরুষদের তুলনায় নারীরা কম বেতন পান ২৪ শতাংশ ক্ষেত্রে । অনুসন্ধানে আরেকটা জিনিস দেখা গেছে , কর্মক্ষেত্রের যে স্থানগুলোতে মহিলারা প্রধান , সেখানে মজুরি প্রায়শই কম থাকে । যেমন স্বাস্থ্য ও পরিচর্যাক্ষেত্রে নারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ কর্মী প্রায় বিশ্বের সব দেশেই । তবুও অনেক দেশেই তাদের মজুরি কম । প্রতিবেদন বলছে , ভারতে কর্মক্ষেত্রগুলোতে ৩০ শতাংশ মহিলা কর্মী কর্মরত । কিন্তু বেতনের পাশাপাশি মহিলারা অনেক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত । বলা হচ্ছে বেতনবৈষম্য সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে তথ্য প্রযুক্তি , ছোট ও মাঝারি মাপের শিল্প সংস্থা এবং মিডিয়ায় । লিঙ্গ বৈষম্যের এই চিত্রটা আদিবাসী সম্প্রদায়ের বেলায় আরও অনেকটা বেশি । শুধু তাই নয় , বর্তমান সময়ে এখনও মেয়েদের আর্থিক – সামাজিক অবস্থা ভালো নয় । নারীরা কোন অংশেই পুরুষের তুলনায় পিছিয়ে নেই । রাষ্ট্রপরিচালনায় হোক , শিক্ষা ও প্রযুক্তির দুনিয়াতেই হোক কিংবা বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্র । তারপরে কাজের জগতে বৈষম্য পিছু ছাড়ছে না । এ সবকিছুর পেছনে কোনা না কোনভাবে পিতৃতান্ত্রিক বা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা অবশ্যই দায়ী । আবার এটাও ঘটনা , কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণ কম হওয়ায় বেতন নিয়ে নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই দরাদরি করার সুযোগ পাচ্ছেন না । আবার বাণিজিকও স্বার্থে বেসরকারী ক্ষেত্রে চাকরিগুলোতে মেয়েদের যোগদান সীমিত রাখতে চান পরিচালন কর্তৃপক্ষ । তারপর রয়েছে কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের হেনস্তা ও শারীরিক উৎপীড়নের মতো ঘটনা । ভারত সরকারের তথ্যই বলছে , কর্মক্ষেত্রেই হোক বা সামাজিক ক্ষেত্রে- মহিলাদের উপর বিভিন্ন ধরনের অপরাধ , নির্যাতন , যৌন হিংসার মতো ঘটনা এখনও রোধ করা যায়নি । বরং অনেক ক্ষেত্রেই তাদের উপর সংঘটিত অত্যাচারের ক্ষেত্রে অপরাধীরা পার পেয়ে যায় প্রশাসন ও রাজনীতির কারণে । এই শঙ্কাজনক চিত্রের মধ্যেই ভারতে মোদি সরকারের ‘ বেটি বাঁচাও , বেটি পড়াও ” স্লোগান কতটা সার্থক ও ফলপ্রসূ হচ্ছে সেটা নিঃসন্দেহে বিতর্কের দাবি রাখে ।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.