ব্যয় তরজা
জি ২০ শীর্ষ সম্মেলন দিল্লীতে সদ্য শেষ হয়েছে।এই জি ২০ বৈঠকের লাভালাভ নিয়ে এবার হিসাব মেলাতে ব্যস্ত শাসক শিবির। জি ২০ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী মোদি ভারতকে ‘ব্র্যান্ড’ করার সব ধরনের চেষ্টাই করেছেন বিশ্বনেতাদের সামনে। যদিও এই সম্মেলনে চিন এবং রাশিয়া – বিশ্বের ২ শক্তিধর রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী কেউই আসেননি। তবে এসেছেন ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনের মতো শক্তিধর দেশগুলির শীর্ষ রাষ্ট্রনেতারা। তাদের সাথে যথেষ্ট কূটনৈতিক বৈঠকও করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছিলো পরবর্তী জি ২০-র সভাপতিত্ব দেশ ব্রাজিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুনা দ্য সিলভার কাছে পরবর্তী জি ২০ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করার জন্য ‘ব্যাটন’ তুলেও দিয়েছেন
জি ২০ সম্মেলনকে ঘিরে গত কয়েক মাস ধরেই ভারতে সাজো সাজো রব ছিলো। বিশেষ করে জি ২০ শীর্ষ সম্মেলনের আগে অন্যান্য
বিষয়ের উপর যে নানাবিধ বৈঠক হয়েছে তা ভারতের বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত ছিল অভিনব তা কিন্তু মানতেই
হবে।তবে এর জন্য অবশ্য সরকারী কোষাগার থেকে বিপুল পরিমাণ রাশিও খরচ হয়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেসের অভিযোগ যেখানে জি টোয়েন্টির জন্য বাজেট ছিল ৯৯০ কোটি টাকা, সেই জায়গায় কেন্দ্রীয় সরকার খরচ করেছে ৪১০০ কোটি টাকা। কেন এই বিপুল রাশি খরচ করা হলো জবাব চেয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেসের মতো দলগুলি।
গত বছর জি ২০ সম্মেলন হয়েছিলো ইন্দোনেশিয়ার বালিতে।ইন্দোনেশিয়া জি ২০ সম্মেলন আয়োজনের জন্য খরচ করে ৩৬৪ কোটি টাকা, আর ভারত খরচ করেছে ৪১০০ কোটি টাকা। কেন? ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে এই খরচ কি কম করা যেতো না ? বিরোধীদের দাবি এবং বক্তব্য, জি ২০ সম্মেলন আসলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে ছিল গোটা বিশ্বের সামনে নিজেকে ‘বিশ্বগুরু’ হিসাবে প্রতিষ্ঠার স্বীকৃতির একটি অনুষ্ঠানমাত্র। তবে তা করতে কোন কিছুই বাদ দেননি মোদি। জি ২০ সম্মেলনে সর্বত্রই ছিল মোদিময়। কোন দ্বিপাক্ষিক রাষ্ট্রের সাথে বৈঠকের পর কোন যৌথ বিবৃতি ছিল না। ছিল না কোনও প্রেস ব্রিফিংয়ের ব্যবস্থাও। শাসকদল বিজেপি জি ২০ বৈঠকের সাফল্যকে ভারতের সাফল্য হিসাবে তুলে ধরতে ব্যস্ত।ভারতের সভাপতিত্বে জি ২০ বৈঠকের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার তার বাজেটে বরাদ্দ ধরেছিলো ৯৯০ কোটি টাকা। কিন্তু খরচ হয়েছে প্রায় চারগুনেরও বেশি। দিল্লীকে পুরোপুরি সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। দিল্লীর রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সম্মেলনস্থল প্রগতি ময়দানের ভারতীয় মণ্ডপম-এ ছিল বাহারি ব্যবস্থা। বিদেশি রাষ্ট্রনেতাদের অতিথি আপ্যায়নে যাতে কোনও ধরনের খামতি না থাকে তাতে সর্বদা সচেষ্ট ছিল কেন্দ্রীয় সরকার।কংগ্রেস নেতা বেণুগোপাল জি ২০-তে কেন্দ্রীয় সরকারের এই বিপুল খরচ প্রসঙ্গে সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, সরকার চাষিদের ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ দিতে পারে না, হিমাচল প্রদেশে দুর্গতদের জন্য তহবিল নেই অথচ ভাবমূর্তি ফেরাতে দশগুন টাকা খরচ করতে পারে। বিরোধীদের অভিযোগ, সবকিছু দিয়েও ব্যর্থতা ঢাকা যাবে না।জি টোয়েন্ট সম্মেলন চলাকালে দ্বিতীয়দিনে সামান্য বৃষ্টিতে ভারতীয় মণ্ডপম-এর সামনে জল দাঁড়িয়ে যায়। তাতেই বিরোধীরা একেবারে রে রে করে সরকারের উপর হামলে পড়ে। এতো টাকা খরচ করেও জল আটকানো গেলো না কেন প্রশ্ন তোলেন তারা। শাসক দল বিজেপি অবশ্য জি টোয়েন্টি সাফল্যের প্রচার শুরু করে দিয়েছে। বৈঠকের ঘোষণাপত্রে ঐকমত্য তৈরিতে মোদি সরকারের সাফল্য, বিদেশি অতিথিদের প্রশংসা, রাষ্ট্রনেতাদের সাথে মোদির আলাপচারিতার ছবি, ভিডিও নিয়ে প্রচারে নেমেছে বিজেপি৷৷ অন্যদিকে, বিরোধীদের বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর পরম বন্ধুরা লুট চালাচ্ছেন। মণিপুরে ফের হিংসা শুরু হয়েছে। মোদি সরকার পর্দা দিয়ে বাস্তব আড়াল করছে। অন্যদিকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছে। তবে এতটুকু বলা যেতে পারে জি ২০-র সাফল্য মোদিকে কোনও এক্সট্রা মাইলেজ দেয় কিনা তা সময়ই বলবে।