ব্যাপক জনসমাগমের মনোনয়ন জমা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষদিনে রাজধানীর প্রতিটি রাস্তা ছিল মিছিল ও র্যালিতে ছয়লাপ। প্রতিটি দলই তাদের মতো করে মিছিল বের করে। সদর শহর এলাকার প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থীই এদিন বেশ বড়সড় মিছিল করে মনোনয়নপত্র জমা দেন। মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা, প্রদেশ বিজেপি সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ সহ বিভিন্ন দলের প্রার্থীগণ এদিন ঘটা করেই সদর মহকুমাশাসক অফিসে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। এদিন সদরের চার আসন ৬ আগরতলা, ৯ বনমালীপুর, ১৪ বাধারঘাট এবং ৮ টাউন বড়দোয়ালীতেও বাম প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন।
তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা সদরের পাঁচটি কেন্দ্রে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা এ দিন রবীন্দ্র ভবনের সামনে থেকে র্যালি নিয়ে শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ দিন তার সাথে গোটা পর্বে ছিলেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং সহ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কর্মসূচিতে প্রচুর সংখ্যক শাসক দলীয় কর্মী- সমর্থক জড়ো হন। প্রদেশ বিজেপি সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্যও শিবনগর মডার্ন ক্লাব এলাকা থেকে বর্ণাঢ্য মিছিল করে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এছাড়া রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুরজিৎ দত্ত, ৬ আগরতলা বিধানসভা কেন্দ্রের শাসক দলীয় প্রার্থী পাপিয়া দত্ত এদিন বর্ণাঢ্য র্যালি করে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
৬ আগরতলা বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী সুদীপ রায় বর্মণ, ৮-টাউন বড়দোয়ালী বিধানসভা কেন্দ্রে আশিস সাহা, বাধারঘাট বিধানসভা কেন্দ্রে রাজকুমার সরকারও এদিন মনোনয়নপত্র জমা দেন। বাধারঘাট কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মীনা সরকারও এদিন বড়সড় মিছিল সহ মনোনয়নপত্র জমা দেন। এই কেন্দ্রে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ফরোয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী পার্থ রঞ্জন সরকারও। ৬ আগরতলা বিধানসভা কেন্দ্রে এদিন মনোনয়নপত্র জমা দেন সিপিএম প্রার্থী বিশ্বজিৎ দেব, ৯ বনমালীপুরে মনোনয়ন জমা দেন সিপিএম প্রার্থী অমল চক্রবর্তী, ৮ বড়দোয়ালীতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সিপিএম প্রার্থী সুশোভন দত্ত মজুমদার।
এদিন খয়েরপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তথা রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ রতন চক্রবর্তী এবং মজলিশপুর বিধানসভা কেন্দ্রের শাসকদলীয় প্রার্থী তথা মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বড়সড় মিছিল করে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। সিপিএমের মজলিশপুর কেন্দ্রের প্রার্থী সঞ্জয় দাসও এদিন মনোনয়নপত্র জমা দেন। মান্দাই কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী রাধাচরণ দেববর্মাও শেষদিনে মনোনয়নপত্র জমা দেন। ওই কেন্দ্রে তিপ্ৰা মথা প্রার্থী।স্বপ্না দেববর্মা মনোনয়ন জমা দেন। এ দিন তার সাথে ছিলেন তিপ্রা মথা সুপ্রিমো প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মণ, এডিসির চেয়ারম্যান জগদীশ দেববর্মা সহ অন্যরা।
সকাল সাড়ে দশটায় প্রচুর অনুগামী ও সমর্থক নিয়ে ৭ রামনগর বিধানসভা কেন্দ্রের ত্রিপুরা হিউম্যান রাইটস্ অর্গানাইজেশনের পক্ষে নির্দল প্রার্থী হিসাবে এদিন মনোনয়ন জমা দেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও সমাজকর্মী পুরুষোত্তম রায় বর্মণ। সাদা পতাকায় মানবাধিকার আন্দোলনের লোগো সম্বলিত এই মিছিল মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে যাওয়ার পথে উৎসুক পথচলতি মানুষ রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে এই ব্যতিক্রমী ভোটপর্বের বর্ণাঢ্য যাত্রা প্রত্যক্ষ করেন। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা আগরতলায় মিছিল করে। মনোনয়নপত্র জমা দেন। ৭-রামনগর কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী পূজন বিশ্বাস আখাউড়া রামনগর থেকে মিছিল নিয়ে আসেন।
৯ বনমালীপুর কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী শান্তনু সাহা প্রদেশ কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে আসেন। ৮- টাউন বড়দোয়ালী কেন্দ্রের প্রার্থীও মিছিল সহকারে আসেন। এদিকে, তৃণমূলের প্রার্থীর দাবিদাররা বঞ্চিত হতেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ জেলার তৃণমূল সভাপতি প্রশান্ত সেন দলের প্রদেশ কমিটির সহ সভাপতি ত্রিদিব দত্ত সহ আরও কয়েকজন পদ থেকে পদত্যাগ করেন বলে প্রদেশ নেতৃত্বকে জানিয়ে দেন। এ বিষয়ে প্রদেশ তৃণমূল সভাপতি পীযূষ কান্তি বিশ্বাস জানান সব ঠিক হয়ে যাবে। মনোনয়ন জমা করার অন্তিম দিনে সোমবার বিশালগড় মহকুমাধীন তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিল করেন বিশালগড় মহকুমাশাসক অফিসের নির্দিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে।
নির্বাচন ঘোষণার পর বামফ্রন্ট মনোনীত ১৫ কমলাসগর বিধানসভায় হিরন্ময় নারায়ণ দেবনাথ এবং ১৬ বিশালগড় বিধানসভায় পার্থপ্রতিম মজুমদার মনোনয়ন জমা করলেও ১৯ চড়িলাম বিধানসভা কেন্দ্রটি জোটের প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে মনোনয়নপত্র জমা করার অন্তিম দিনে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক মহাজোটকে বুদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবশেষে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেন। ১৯ চড়িলামের সিপিআই(এম) দলের প্রার্থী পলাশ দেববর্মা। এরপর বিজেপি দলের পক্ষে তিনটি বিধানসভা এলাকা থেকে দলীয় কর্মীদের নিয়ে বিশাল মিছিল সহযোগে ১৫ কমলাসাগর থেকে অন্তরা দেব সরকার, ১৬ বিধানসভা থেকে সুশান্ত দেব এবং ১৯ চড়িলাম থেকে যীষ্ণু দেববর্মণ মনোনয়নপত্র দাখিল করেন নিজ নিজ রিটার্নিং অফিসারের কাছে।
পরবর্তী সময়ে তিপ্রা মথা দলের পক্ষ থেকে ১৫ কমলাসাগরে আশিস দাস, ১৬ বিশালগড়ে শাহ আলম মিয়া এবং ১৯ চড়িলামে সুবোধ দেববর্মা মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। অন্যদিকে, তৃণমূলের পক্ষে কমলাসাগর থেকে মনোনয়ন দাখিল করেন হারাধন দেবনাথ। প্রত্যেকেই মনোনয়নপত্র জমা করে নির্বাচনে ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এদিন মোহনপুর মহকুমা প্রশাসনের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের মোট ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেন। সোমবার বিশাল মিছিল করে ২ নং মোহনপুর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রতন লাল নাথ মনোনয়নপত্র জমা দিলেন।
এদিন সিপিএম প্রার্থী ঝরনা মজুমদার মনোনয়নপত্র জমা দেন।এই কেন্দ্রে প্রচার শুরু করবেন।এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী প্রশান্ত সেন চৌধুরী মনোনয়নপত্র জমা দেন। আগামী দিনে এই কেন্দ্রে প্রচার শুরু করবেন। এই কেন্দ্রে তিপ্রা মথার হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাপস দে। অপরদিকে বামুটিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণধন দাস, তিপ্ৰা মথা প্রার্থী নিতাই সরকার, তৃণমূল কংগ্রেসের নীহার রঞ্জন সরকার, রিপাবলিক পার্টি অব ইণ্ডিয়ার পক্ষে নান্টু দাস এবং নির্দল প্রার্থী বাবুল বৈরাগী। সিমনা বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রার্থী বিনোদ দেববর্মা, তিপ্রা মথার পক্ষে দুজন প্রার্থী রবীন্দ্র দেববর্মা এবং বিশ্ববিদ্য দেববর্মা।
এই কেন্দ্রে রিপাবলিক পার্টি অব ইণ্ডিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জিতেন দেববর্মা। প্রত্যেকেই নিজেদের জয় নিয়ে ভীষণ আশাবাদী। সোনামুড়া মহকুমার চারটি আসনে এদিন বড়সড় মিছিল করে বিজেপির চার প্রার্থী ধনপুরে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, সোনামুড়ায় দেব্রত ভট্টাচার্য, নলছড়ে প্রদেশ বিজেপি সাধারণ সম্পাদক কিশোর বর্মণ এবং বক্সনগরে তফাজ্জল হোসেন মনোনয়নপত্র জমা দেন। তারা সবাই জয়ের লক্ষ্যে দৃঢ়তা ব্যক্ত করেন। সোনামুড়া মহকুমার চার বিধানসভা কেন্দ্রে এদিন দুই তিপ্ৰা মথা প্রার্থীও তাদের মনোনয়ন জমা দেন। তারাও বড় মিছিল করে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তৃণমূল কংগ্রেস মহকুমার চারটি আসনেই মনোনয়ন জমা দেয়।