ব্রণর সমস্যায় হোমিওপ্যাথি।

 ব্রণর সমস্যায় হোমিওপ্যাথি।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

মুখের রূপের জন্য প্রয়োজন হয় দু’টি জিনিসের,একটি স্কুল নিখুঁত ত্বক এবং অপরটি হল সুন্দর চুল। চুলের সমস্যা হলে অনেক উপায়েই ব্যবস্থা করা যায় বটে,তবে মুখের সৌন্দর্য বজায় রাখতে হলে জরুরি ত্বকের যত্নের।তবে অনেক ক্ষেত্রে অযাচিত দাগ ছোট সৌন্দর্যের অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।লেজার ট্রিটমেন্ট করা যায় বটে, যদি তা না করে কপালে মুখের কালো কিংবা লাল দাগ-ছোপ, ব্রণ তুলতে হয়, ভরসা করা যেতেই পারে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায়।


মুখে বা ত্বকে দাগ হয় কেন ? আমাদের ত্বকের যে কোশগুলো থাকে, এর মধ্যে মেলানোসাইট বা রং তৈরি করার একটি কোশ থাকে। এর কাজ হল মেলানিন বা রং তৈরি করা। আমাদের মেলানোসাইট সবারই সমান। তবে মেলানিন উৎপাদন যাদের কম, তারা ফর্সা। আর যাদের মেলালিন উৎপাদন বেশি তারা একটু কালো। তাছাড়া যদি অযাচিত ভাবে মুখে দাগ হয় তার জন্য দায়ী হরমোনের ভারসাম্যের উলটপালট। সূর্যের আলোও একটি অন্যতম কারণ। আসলে ত্বক কালো করে দেওয়ার জন্য সূর্যের আলো অনেক বড় একটি কারণ। সাধারণত ১১ থেকে ৪০ বছর বয়সি ৮০ শতাংশ মানুষের ব্রণ জন্মনিরোধক পিল, কসমেটিকস, স্টেরয়েড, দাগ কমানোর জন্য যে পণ্যগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোর কারণেও হয়।দামি হলেই যে গুণগত মান ভাল এই কথাটার অন্ধ বিশ্বাস করার মানেই হয় না,সিস্টেমিক অনেক ওষুধও সমস্যা করতে পারে। ক্রনিক লিভার ডিজিজ, কিডনি ডিজিজে ত্বক কালো হয়ে যায়।গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো সব থেকে বেশি দেখা দেয়।এর সঙ্গে পিসিওএস, হাইপোথাইরয়েডিজম কিংবা মেনোপাজের মতো অবস্থা থাকলে তো কথাই নেই।বেশ কিছু বিষয় আছে যেগুলি ব্রণ তৈরিতে সাহায্য করে। শুধু তাই নয়, এগুলি আবার কখনও কখনও পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে। যেমন- একজন মহিলার পিরিয়ডের সময় হরমোনের ওঠানামা।ব্রণের ঘায়ে পিকিং করা।অপরিচ্ছন্ন ত্বক।তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করা, যেমন— ভারী লোশন, ক্রিম ইত্যাদি।
সিনথেটিক পোশাকের ব্যবহার। বায়ু দূষণ এবং নির্দিষ্ট আবহাওয়া
বিশেষ করে উচ্চ আর্দ্রতা।
মানসিক চাপ বা অবসাদ, ঘুমের অভাব ইত্যাদি।কর্টিসল হরমোন বাড়ায়, ব্রণ হওয়ার পরিবেশ তৈরি
করে দেয়।কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবেওব্রণ হয়। বংশানুক্রমেও এই সমস্যা হতে পারে।ব্রণ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে অপ্রদাহজনক ব্ৰণ ব্ল্যাকহেডস- ত্বকে কাল রঙের ব্রণ যা অতিরিক্ত তেল এবং মৃত ত্বকে ভরা থাকে। যা সকল মহিলাদের একটি সমস্যা। তা যদি কোনও উৎসবের আগে হয় অনেক সময়ই অনেকেই হীনমন্যতায় ভোগে। হোয়াইটহেডস—ব্রণ, যা তেল এবং মৃত ত্বকে বন্ধ অবস্থায় থাকে। প্রদাহজনিত ব্রণ একনি ভালগারিস— এটি সাধারণত বয়ঃব্রণ নামে পরিচিত। এগুলোতে দুই আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ভাতের ন্যায় এক প্রকার পদার্থ বের হয়। যা ১২ মাসের সঙ্গী বললেও ভুল হবে না, যার আছে, তারাই জানে একমাত্র। অনেক সময় হরমোনজনিত পিসিওএস থাকলেই বেশি দেখা যায় মেয়েদের মধ্যে।একনি রোসেসিয়া—এটি হল একটি ত্বকের ব্যাধি যা নাক, গাল, চিবুক এবং কপালের মধ্যে সীমাবদ্ধ। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে শুরু হয়।মুখের ত্বক তৈলাক্ত, লালচে হয়ে যায়। ছোট লাল রক্তনালী দেখা যায়। চরম ক্ষেত্রে, পাক খুব লাল এবং কন্দ প্রদর্শিত হতে পারে। ছেলে-মেয়ে সকলের হলেও মেয়েদের একটু বেশি হয়।
প্যাপিউলস— ছোট লাল বা গোলাপি বাম্প যা স্ফিত হয়ে যায়।
পাসটুলক— পুঁজযুক্ত ফুসকুড়ি। এগুলি লাল রিং দ্বারা বেষ্টিত, হোয়াইটহেডসের মতো দেখতে। এগুলোতে আঘাত করলে দাগের কারণ হতে পারে।নোডুলস-শক্ত ব্রণ, যা আপনার ত্বকের গভীরে থাকে। আকারে বড়
হয়, খুব কষ্টদায়ক।সিস্ট—পুঁজ-ভরা বড় আকারের ব্রণ। এগুলোও দাগের কারণ হতে পারে। ব্রণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিতে হবে জীবনযাত্রার পরিবর্তনে-পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।নিয়মিত স্নান করতে হবে। বিশেষ করে নিয়মিত মুখ ভাল করে পরিষ্কার করা দরকার।
তৈলাক্ত ও রাসায়নিকযুক্ত প্রসাধনী সামগ্রীর ব্যবহার কমাতে হবে। সব হার্বাল সামগ্রী যে ১০০ শতাংশ বিশুদ্ধ, বলা কিন্তু চলে না । ব্ৰণতে অহেতুক খোঁচাখুঁচি করা থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকতে হবে।উচ্চ গ্লাইসেমিক সূচকযুক্ত খাবার যেমন প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেট মিষ্টিজাতীয় খাদ্য বর্জন করা উচিত। তেলে ভাজা ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়া উচিত। বেশি পরিমাণ মৌসুমী ফল, শাক-সব্জি, স্যালাড, গোটা শস্য এবং প্রোটিনের স্বাস্থ্যকর উৎসগুলি খাদ্য তালিকায় যোগ করা উচিত। এ সব কিছুর সঙ্গে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩-৪ লিটার জল খেতে হবে। ঘুমানোর আগে কিংবা পরে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে।চিন্তামুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে— চিন্তা, হতাশা, অবসাদ ইত্যাদি কমানোর জন্য জীবনশৈলির পরিবর্তন প্রয়োজন। নিয়মিত শরীর চর্চা করতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুম যাতে হয়, সে দিকে যত্নবান হতে হবে প্রয়োজন। নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। শারীরিক ও মানসিক বিশ্রামের প্রতি নজর দিতে হবে।ব্রণ চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি।ব্রণ মারাত্মক কোনও শারীরিক সমস্যা নয় তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় মেয়েদের মনে। অনেক সময় শুধুমাত্র এই ব্রণের জন্য আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা যায়। আজ এই ক্রিম কাল আরেক বিজ্ঞাপন দেখে সেই ক্রিম। ছুটতে ছুটতে হয়রান। হরমোনজনিত সমস্যা থাকলে সেই রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি জীবনযাত্রার মানের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। তাই ব্রণের সমস্যায় উপরোক্ত জীবনশৈলির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় খুব ভাল ফল পাওয়া যায়। নিয়মিত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মাধ্যমে ব্রণ হওয়ার প্রবণতার মূল কারণটি খুঁজে সেটির চিকিৎসার ফলে ব্রণের সমস্যা অনেকটা কমে যায়।হোমিওপ্যাথি ওষুধ আক্রান্তের লক্ষণ বা সাফল্যের উপর নির্ভর করে নির্বাচন করা হয়। তাই বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা ওষুধ কার্যকরী হয়। তবে অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গিয়েছে, কিছু হোমিওপ্যাথি ওষুধ ব্রণের ক্ষেত্রে খুব ভাল কাজ করে। যেমন— ক্যালি ব্রোম, হিপার সালফিউরিকাম, বেলেডোনা, পালসাটিলা, বারবারিস অ্যাকোয়া ইত্যাদি। তবে কার জন্য কী ওষুধ, কত পরিমাণ, কত দিন, কীভাবে খেতে কিংবা লাগাতে হবে একজন সুদক্ষ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকই বলতে পারেন। কারণ নিজের মতো করে ওষুধ খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। কমার থেকে বেড়েও যেতে পারে ব্রণ, সব ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই ওষুধ খাওয়া উচিত।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.