ব্রিজ দিয়ে ছুটবে ট্রেন, জাহাজ এলে দুভাগ সেতু!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- এ যেন আলি বাবা চল্লিশ চোরের কাহিনী। নাটক, সিনেমায় দেখা ঘটনা। সেই বিখ্যাত, বহুশ্রুত সংলাপ। ‘খুল যা সিমসিম’, ‘বন্ধ হো যা সিমসিম।’ ডাকাত দলের সর্দারের মুখের কথায় খুলে যায় পাহাড়ের দরজা। একইভাবে বন্ধও হয়ে যায়। চোখে পড়ে পাহাড়ের গোপন কক্ষের মণি মুক্তা, স্বর্ণালঙ্কার। থরে থরে সাজানো নানা বহুমূল্য সামগ্রী। প্রায় একই ঘটনা ঘটছে বাস্তবে, সমুদ্রের উপরে। মন্ত্রবলেই যেন খুলে যায় রাস্তা, রাজপথ। ভারতের দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ু। রাজ্যটির দক্ষিণ প্রান্ত দেশের শেষ সীমা। রামনাথপুরম জেলার রামেশ্বরম ধনুশকুড়ি। কথিত আছে ধনুশকুড়ি থেকেই রাম রাবণের লঙ্কায় যাত্রা করেন। এখান থেকেই সমুদ্রের জল শুকোতে বাণ নিক্ষেপ করেন। সেই ত্রেতা যুগ আর নেই। নেই রাম ও রাবণ। আছে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন অংশ। সমুদ্র জলরাশি দিয়ে চারিদিকে ঘেরা নানা লোকালয়। রামেশ্বরম, ধনুশকুড়ির মতো বহু জনপদ। এই জনপদের সঙ্গে এখন সংযোগ রয়েছে। রয়েছে সড়কপথে। রেলপথের সংযোগ ব্যবস্থাও তৈরি পুরোপুরি। রেলপথে এককালে তৈরি সংযোগ পথ এখন অচল, বিভিন্ন কারণ সুরক্ষা ও নিরাপত্তার ঝুঁকি। এর বিকল্প এখন তৈরি। তৈরি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে অবাক করা নির্মাণ ভারতীয় রেলের। প্রায় ৯০ শতাংশ দেশিয় উপাদান ব্যবহার করে মাত তুলেছে আশ্চর্য সেতু। শুধুমাত্র দুটি সামগ্রী এসেছে জার্মানি থেকে। এর একটি গিয়ারবক্স, অন্যটি হাইড্রোলিক ব্রেক। ট্রেনের পাশাপাশি সমুদ্র পশে জাহাজ চলাচলের জন্য শক্তিশালী ব্যবস্থার লক্ষ্যে।
এই সেতুটিই পম্বন সেতু। বিরল দেশে। বিরল এশিয়াতেও। শত বা বর্ষ পূর্বে ব্রিটিশ যুগের অনুরূপ সেতুটি আর ব্যবহারের উপযোগী নেই। তাই নতুন উদ্যোগ। নির্মাণ করা হয়েছে নয়া রেল সেতু। এর নামও ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সেতুর নামে, পম্বন। সেতুটির বৈদ্যুতিকরণের কাজও শেষ। ২ কিলোমিটার ১ হাজার মিটার লম্বা সেতু নির্মাণে খরচ পড়েছে বিস্তর। মোট ৫৩১ কোটি টাকা। পাইল পদ্ধতির নির্মাণশৈলীতে তৈরি পম্বনে ৩৩৩টি থাম, মানে পিলার বসানো হয়। এগুলির ব্যাস ১৫০০ মিলি মিটার করে। গড় গভীরতা সমুদ্রতল থেকে ৩৮ মিটার। সেতুর প্রান্তে অবকাঠামো নির্মাণে ১০১টি স্পান বসেছে। পম্বনে কোনও লোহার ব্যবহার নেই। পুরোটাই উন্নতমানের মরিচা নিরোধক স্টিল। সব মিলিয়ে এর পরিমাণ ৫৫৭২ মেট্রিকটন। বালি, পাথর, সিমেন্টের মিশ্রণ, কংক্রিট ব্যবহার করা হয়েছে ২৫০০০ বর্গ মিটার। এর উপর আবার মরিচা প্রতিরোধ সহ সামুদ্রিক লবণাক্ত জলের ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত করণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ ধরনের সামগ্রী, জিঙ্ক মেটাল ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ প্রাইমার ব্যবহার করা হয়েছে অত্যন্ত উন্নতমানের পলিসিলোক্সান রঙ।এভাবে পম্বনকে করে তোলা হয়েছে আবহাওয়া, জল ও বাষ্পের ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত।এ সবই জানান ভারতীয় রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডের প্রবীণ আধিকারিক। তিনি আর শ্রীনিবাসন।পদমর্যাদায় নিগমের চেন্নাইস্থিত কার্যালয়ের প্রধান, বরিষ্ঠ উপ ব্যবস্থাপক। তিনি বলেন, সেতুটির আয়ুষ্কাল ১০০ বছরের বেশি হবে। এর উপর দিয়ে ট্রেন চলাচলের গতি হবে সর্বোচ্চ ৭৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। আপাতত ব্রজগেজে একক রেলপথ, সিঙ্গল লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ডবল লাইনের সংস্থান রাখা হয়েছে। এর জন্য সরকারের তরফে প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেলেই হল। হয়ে যাবে ডবল লাইন। দেশে, এশিয়াতেও এই প্রযুক্তিতে প্রথম রেল সেতু নির্মাণ। এর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ ধরনের পাথর, কোরেল ও বিশেষ বালি পাথর। দীর্ঘ সেতু নির্মাণে সময় লেগেছে প্রায় পাঁচ বছর। প্রায় ৫০০ শ্রমিক এবং ১০০ শ্রমিক লাগাতর কাজ করেছেন। মাঝখানে কোভিডে কাজের ব্যাঘাত ঘটেছে। তাতে একটু বেশি লেগেছে। তবে তামিলনডুর মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে দ্বীপ অঞ্চলকে রেলপথে যুক্ত করা গেছে। এখনও অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয়নি দ্বীপ অঞ্চল। কারণ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি পম্বনের।এখানেই কিন্তু সব শেষ নয়। আসল কথা সেতুর মাঝখান দিয়ে জাহাজ পারাপারের সুবিধা। এর জন্য সেই খুল যা অথবা বন্ধ হো যা পদ্ধতি। এখানে অবশ্য মন্ত্র নয়, এর জন্য বৈদ্যুতিক শক্তির ব্যবহার হয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক ও অত্য শক্তিশালী স্টিলের দড়ি। একেক পাশে ৬টি করে দুই দিকের চারপা মোট ২৪টি দড়ি সেতুটি টেনে তুলতে ও নামাতে কাজ করছে। সেতুর মূল স্তর থেকে উপরে উঠে যাচ্ছে ১৭মিটার। এর জন্য ব্যবহার কারা হয়েছে ৩৪ মিটর উঁচু ৪টি থাম। জাহাজ চলাচলের প্রয়োজনে মোট সাড়ে ৫ মিনিটে উপরে উঠে যায় পম্বন। আবার একই সময়ে প্রয়োজনে নিচে নেমে যায়। ফলে মাঝখানে প্রায় ১০০ মিটার এলাকায় জাহাজ চলাচল করতে পারে। সাংবাদিক দলের সামনে করে দেখানো হয়েছে যাবতীয় কলা কৌশল সমুদ্রের মাঝে ‘পম্বনের উপর দাঁড়িয়ে। ইংরেজ আমলের পুরনো সেতুর তুলনায় নয়া সেতুর উচ্চতা বেশি। তিন মিটার উঁচুতে অবস্থিত নয়টি। নয়া সেতু মাঝ বরাবর জাহাজ চলাচলের জন্য উলম্ব, মানে খাড়াভাবে উপরে উঠে ও নেমে যায়। আগের সেতুটি প্রায় একই অংশে সরে যায় সমান্তরালভাবে, পাশাপাশি। তাতে জাহাজ চলাচলে অল্প-বিস্তর অসুবিধা হয়। সেই সমস্যা দূরীকরণের নয়া উদ্যোগ। তার সফল প্রয়োগ সম্পন্ন। এখন শুধু ভাবীকালের জন্য অপেক্ষা। পম্বন সেতুতে সমুদ্রের জলের উপর দাঁড়িয়ে এক প্রকৌশলীর এই কথা যেন কানে বেজে চলছে বিমানে বসে প্রতিবেদন লেখার সময়েও।

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

ইন্ডিগো ফ্লাইটে বোমার হুমকি!! কলকাতা বিমানবন্দর হাই অ্যালার্ট!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা জারি করা…

5 hours ago

আওয়ামী লীগের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করল নির্বাচন কমিশন!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-গেজেট নোটিফিকেশন দিয়ে আওয়ামী লীগের সবরকম কার্যকলাপ নিষিদ্ধ ঘোষণা করল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রশাসন…

6 hours ago

অবসর নিলেন দেশের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-সুপ্রিম কোর্টের ব্যাটন তুলে দিয়ে গেলেন বিচারপতি বি আর গাভাইয়ের হাতে। বুধবার ১৪…

7 hours ago

সিঁদুর’ প্রসঙ্গে বিজেপির ১০ দিনের ‘তিরঙ্গা যাত্রা’!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে প্রচারে নামতে চলেছে বিজেপি।পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ায় ভারতীয় সেনা বাহিনীকে ধন্যবাদ…

7 hours ago

পুরনো ছন্দে ফিরছে উপত্যকা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে শ্রীনগর। শ্রীনগর বিমানবন্দরও মঙ্গলবার খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। রাস্তা ঘাটে স্বাভাবিক…

8 hours ago

পঞ্জাবের বায়ুসেনাঘাঁটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে সামরিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল, তা প্রশমনের পর মঙ্গলবার…

9 hours ago