ব্লাড ক্যানসার মানেই মৃত্যু নয়!!

এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

লিউকিমিয়া কী?

লিউকিমিয়া এক ধরনের রক্তের ক্যানসার। লিউকিমিয়া নামটা এসেছে গ্রীক প্রতিশব্দ লিউকস থেকে। লিউকস মানে হচ্ছে সাদা। আমাদের শ্বেত কণিকার ক্যানসারকে এটা বলা হয় লিউকিমিয়া। যখন শরীরে শ্বেত কণিকার সংখ্যা বেড়ে যায় অসম্ভব রকম এবং সেগুলো কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন এই অসুখটাকেই বলা হয় লিউকিমিয়া। অনেক সময় প্রদাহ বা ইনফেকশন হলেও শ্বেতকণিকা বাড়ে। কিন্তু তাকে লিউকিমিয়া বলে না। শ্বেত কণিকাগুলো ধাপে ধাপে তৈরি হয় এবং সেই ধাপের সেলগুলো রক্তে বেরিয়ে আসে না। যখন সেগুলো বেরিয়ে আসে, সেগুলোকে বলা হয় লিউকিমিয়া। এর প্রকারভেদ ? লিউকিমিয়াকে সাধারণত দু’ভাগে ভাগ করা হয়। একটা হল অ্যাকিউট যেটা দ্রুত তৈরি হয় আর একটা হল ক্রনিক যা ধীরে ধীরে তৈরি হয়। অ্যাকিউট এবং ক্রনিকের চিকিৎসার ধরন সম্পূর্ণ আলাদা। অ্যাকিউট লিউকিমিয়ার মধ্যেও অনেকগুলো ভাগ আছে। অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকিমিয়া, এটা বাচ্চাদের বেশি হয়। অ্যাকিউট মায়েলয়েড লিউকিমিয়া, এটা বড়দের হয়। আবার ক্রনিকের দিকেও ভাগ আছে। ক্রনিক মায়েলয়েড লিউকিমিয়া এবং ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকিমিয়া, এটা বয়স্ক লোকেদের বেশি হয়। এই দুই প্রকারের চিকিৎসাও আলাদা হয়। অ্যাকিউট লিউকিমিয়ার উপসর্গ কী? ছোটদের ক্ষেত্রে -জ্বর আসবে, গাঁটে গাঁটে ব্যথা হবে। গায়ে কালশিটের দাগ পড়বে। মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে। অন্যান্য জায়গা থেকেও রক্ত পড়তে পারে। তারপর রক্ত পরীক্ষা করে দেখা যাবে শ্বেত কণিকার মধ্যে ব্লাস্ট সেল বলে এক ধরনের শ্বেত কণিকা আছে যাদের সংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বেড়ে যাবে। সাধারণত ব্লাস্ট সেলের সংখ্যা পাঁচ শতাংশের নিচে থাকে আমাদের অস্থি মজ্জাতে। এই ধরনের উপসর্গ থাকলে ধরে ধারণত দু’ভাগে নিতে হবে তার অ্যাকিউট লিউকিমিয়া হয়েছে। বড়দের ক্ষেত্রেও একই আর একটা সম সমস্যা জ্বর হওয়া, গায়ে ব্যথা-বেদনা হওয়া। খিদে চলে যায়, ওজন কমে যায়। গায়ে ছোপ ছোপ বেরোয়, মাড়ি ফুলে যায়। মাড়ি থেকে অনেক সময় রক্ত পড়তে পারে। অনেক সময় নাক থেকে রক্ত পড়তে পারে। অ্যাকিউট লিউকিমিয়ার ডায়াগনসিসের সময় রক্ত পরীক্ষা করলে দেখা যায় ব্লাস্ট সেলের সংখ্যা বেড়ে গেছে। চিকিৎসা পদ্ধতি কেমন হয়ে থাকে? প্রথমত, আমাদের খুঁজে বের করতে হয়, কী ধরনের লিউকিমিয়া। তার জন্য মজ্জা পরীক্ষা করাটা প্রয়োজনীয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমেই বোঝা যায় এটা লিউকিমিয়া কিনা। অনেক রকম পরীক্ষা আছে। সাইটোলজি, যেখানে কোষগুলোকে দেখা হয়। ফ্লো সাইটোমেট্রি, যেখানে কোষের পরিচয়গুলোকে দেখা হয় অর্থাৎ কী ধরনের কোষ আমরা দেখছি সেগুলোকে দেখা হয়। এরপর হচ্ছে মিউটিশন স্টাডি অর্থাৎ জিনগত যেমন ত্রুটি যেগুলো লিউকিমিয়াতে দেখা যায় সেগুলোকে খুঁজে বের করা। মজ্জা থেকেই তিন-চারটে রকম পরীক্ষা করা হয়। কারণটা হচ্ছে এই চিবি প্রত্যেকটা রিপোর্ট থেকে যা উত্তর আসে সেই অনুযায়ী চিকিৎসার একটু সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। এছাড়াও রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। এগুলো সাধারণ পরীক্ষা। যেমন— রক্তের কমপ্লিট হিমোগ্রাম (সিবিসি), এলডিএইচ ইউরিক অ্যাসিড এগুলো পরীক্ষা করার পর মজ্জা পরীক্ষা করা হয়। তারপর চিকিৎসার প্রশ্ন আসে। বাচ্চাদের যে অ্যাকিউট লিম্ফোটিক লিউকেমিয়া হয়, চিকিৎসা করলে ৮০-৯০ শতাংশ শিশু ভাল হয়ে যায়। চিকিৎসাটা অবশ্যই কেমোথেরাপি। ছোটদের ক্ষেত্রে উপসর্গ ধরা পড়লে প্রথমে দেখা হয় পেটে লিভার, স্প্লিন বা প্লীহা বড় আছে কিনা। তারপর দেখা হয় লিম্ফনোড বা লসিকাগ্রন্থিগুলো বড় হয়েছে কিনা। এরকমটা থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। তারপর রক্ত পরীক্ষা করা হলে দেখা হয় কমপ্লিট হিমোগ্রামের ব্লাস্ট বেশি থাকে। এরকম একগুচ্ছ পরীক্ষার পর অ্যাবনর্মালিটিগুলো পাওয়া যায়। মজ্জা পরীক্ষার পর যদি দেখা যায় এটা অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকিমিয়া, চিকিৎসার প্রথম দিকটা একটু রিস্ক থাকলেও পরবর্তীকালে আস্তে আস্তে ভাল হয়ে যায়। ছোটদের অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকিমিয়া থাকা সত্ত্বেও তারা সাধারণ জীবন-যাপন করছে এমন উদাহরণ আকছার পাওয়া যায়। ব্লাড ক্যানসার মানে মৃত্যু এমনটা কিন্তু নয়। অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকিমিয়ায় আক্রান্ত ৮০-৯০ শতাংশ শিশু কিন্তু ভাল হয়ে যায়। তবে বড়দের ক্ষেত্রে সারানোটা একটু কঠিন। প্রথমে কেমোথেরাপি তারপর মজ্জা প্রতিস্থাপন করাতে হয়। সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হলে বরাবর সেরে যায়। একেবারে সেরে যাওয়ার পরও কি ছোটদের নিয়মিত চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হয়? না সেটা থাকতে হয় না, তবে ফলোআপের মধ্যে থাকতে হয়। প্রতিনিয়ত জীবনযাত্রার সঙ্গে কি লিউকিমিয়ার যোগাযোগ আছে ? না, সেই অর্থে লাইফস্টাইলের সঙ্গে এই রোগের প্রত্যক্ষ কোনও সম্পর্ক নেই। রেডিয়েশন হ্যাজার্ড-এ লিউকিমিয়া বেশি হয়। হিরোসিমা, নাগাসাকিতে এরকম হয়েছিল। রেডিয়েশন হ্যাজার্ডে যে কোনও ক্যানসারই বেড়ে যায়। এর মধ্যে লিউকিমিয়া আছে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে এই রোগ কম হবে কিনা জানা নেই কিন্তু হলে চিকিৎসা করা সহজ হবে। ধূমপান না করা, মদ না খাওয়া এগুলো থেকে প্রতিরোধ হবে না কিন্তু জেনারেল স্বাস্থ্য ভাল থাকলে যদি এই ধরনের রোগ হয়ে থাকে তখন তা চিকিৎসা করার সময় কমপ্লিকেশন কম হতে পারে। খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে কোনও বিশেষ সতর্কতা থাকে যখন রোগীর কেমোথেরাপি চলে ? কাঁচা খাওয়ার খেতে নিষেধ করা হয়। জল ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খেতে বলা হয়। চিকিৎসার সময় সংক্রমণের ভয় থাকে। চিকিৎসা চলাকালীন প্রধান নজর রাখা হয় সংক্রমণের দিকে। সাক্ষাৎকার : আনন্দিতা সরকার

Dainik Digital

Share
Published by
Dainik Digital

Recent Posts

মূল্যস্ফীতির চাপ!!

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতোই এখন সাধারণ মানুষের জীবনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি স্থায়ী রূপ নিয়েছে।এটা এখন নিশ্চিত হয়ে…

1 min ago

উচ্চশিক্ষার গতিভঙ্গ!!

গত জুলাইয়ে,তৃতীয় নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রথম তথা সর্বশেষ সংসদ অধিবেশনে, লোকসভায় এক প্রশ্নোত্তর পর্বে কেন্দ্রীয়…

23 hours ago

গুলিবিদ্ধ অভিনেতা গোবিন্দা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-গুলিবিদ্ধ অভিনেতা তথা শিবসেনা নেতা গোবিন্দা। জানা গিয়েছে ভুলবশতই তাঁর নিজের বন্দুক থেকে…

24 hours ago

রাজধানীতে সিপিএমের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম ও দপ্তরের পরিকাঠামো তলানিতে এসে ঠেকেছে।এই কারণে,রাজ্যে ৪০ শতাংশ গ্রাহকের…

24 hours ago

ভোক্তাদের পকেট কেটে চিনি, সুজি, ময়দা!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-রাজ্যে বিনামূল্যে চিনি, সুজি,ময়দা দেওয়ার নামে সস্তা রাজনীতি করতে গিয়ে লেজেগোবরে হয়েছে বিজেপি…

1 day ago

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে হার্টের ক্ষতি হয়!!

অনলাইন প্রতিনিধি :-ডায়াবেটিসের রোগী এখন প্রায় ঘরে ঘরেই। জীবনযাপনে পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সহজেই এই রোগ…

1 day ago