ভবিষ্যতের রাশ!!

 ভবিষ্যতের রাশ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

৭৫ বছর বয়স পেরোলেই নির্বাচনে আর টিকিট পাবেন না নেতারা বহু আগেই বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে দলের বয়স্ক নেতাদের লোকসভা তথা প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে দূরে সরাতে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছিল। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে এই সিদ্ধান্ত মেনে বিজেপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকে বাদ দিয়ে দলে নতুন মুখ তুলে আনা হয়েছিল। গান্ধীনগর থেকে লালকৃষ্ণ আদবানির জায়গায় অমিত শাহকে সেবার প্রার্থী করা হয়। কানপুর থেকে মুরলী মনোহর যোশী, ইন্দোর থেকে সুমিত্রা মহাজন, হিমাচলের কাংড়া থেকে শান্তা কুমার সহ বাদ পড়েন অনেক হেভিওয়েট নেতা।

FB_IMG_1671378854455

পুরানোকে বাদ দিয়ে নতুনকে জায়গা ছেড়ে দেওয়া এটাই হলো সময়ের বার্তা। কিন্তু প্রবীণ নেতাদের বাদ দিয়ে আগামী দিনে নবীনদেরকে সামনে তুলে আনতে গেলে চাই উপযুক্ত নেতৃত্ব, যাদের একই সঙ্গে জনসংযোগ ক্ষমতার পাশাপাশি বিশ্বস্ততা এবং নেতৃত্বদানের দক্ষতা হবে প্রশ্নাতীত। আর এক বছরের কিছু বেশি সময় বাদেই দেশে লোকসভার সাধারণ মা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বিভিন্ন সময়ে দলের মধ্যে তরুণ মুখদের সামনের দিকে এগিয়ে আসার বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু দলের মধ্যে সেই সম্ভাবনাময় নতুন প্রতিশ্রুতিসম্পন্ন নেতৃত্ব বর্তমান সময়ে আদৌ কতটা রয়েছে সেটা কিন্তু খোদ শাসকদলের মধ্যেই বারবার প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

bjp-flag-dh-photo-1143818-1662772413-1148187-1664112854

একটা সময় কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের সময়কালে দলীয় নেতৃত্ব অটল বিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আদবানি, মুরলী মনোহর যোশীর পাশাপাশি দলে দ্বিতীয় প্রজন্মের নেতা হিসাবে অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ, প্রমোদ মহাজন, গোপীনাথ মুন্ডে অনন্ত কুমারের মতো প্রভাবশালী ও ডাকাবুকো নেতার অভাব ছিল। ছিলেন ভেঙ্কাইয়া নাইডুর মতো প্রতিভাধর নেতারাও। সম্প্রতি গুজরাট ও হিমাচলের ভোটের পর দিল্লীতে বিজেপির সদর দপ্তরে সাংগঠনিক যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় তাতে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়েই নেতৃত্ব পুঙ্খানুপুঙ্খ মতবিনিময় করেন। কিন্তু পাশাপাশি বর্তমান সময়ে কেন্দ্রে টানা দুইবারের মতো বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়া সত্ত্বেও দলে, সরকারে, সংগঠনে দ্বিতীয় প্রজন্মের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে একটা বড়সড় ঘাটতি প্রকট হয়ে উঠেছে।

9bbrkr58_modi-shah-bloomberg_625x300_16_April_19

এই মুহূর্তে দল ও সরকারের রাশ মোদি ও অমিত শাহের হাতে। এর ঠিক পরেই আছেন রাজনাথ সিং এবং নীতিন গড়কড়ির মতো প্রবীণ নেতারা। কিন্তু মূল যে বিষয়টি, দলে নবীন নেতৃত্ব যারা আগামী দিনের জন্য দল, সংগঠন ও সরকারে বড়সড় ভূমিকা নিতে পারেন সেই দ্বিতীয় সারির নেতৃত্বের প্রশ্নে খোদ দলের মধ্যেই কোথায় যেন একটা ঘাটতি ও শূন্যতা বারবার প্রকট হচ্ছে। যদিও দলে শিবরাত সিং চৌহান, ইয়েদুরাপ্পা, বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার মতো নেতারা রয়েছে এবং তারা বর্তমানে রাজ্যস্তরে নেতৃত্বে থাকলেও জাতীয় রাজনীতি ক্ষেত্রেও বড়সড় ভূমিকা ও প্রভাব রাখেন। কিন্তু দলের মধ্যেই যে প্রশ্নটি এখন তাড়া করছে সেটা হলে দলের ভেতর পরবর্তী নেতৃ কোথায়?

যদিও বলা হয় দ্বিতীয় সারির নেতা বলতে স্মৃতি ইরানি, গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াতরা রয়েছেন। কিন্তু নিজেদের রাজ্যের বাইরে গোটা দেশে তাদের যে প্রভাব প্রতিপত্তি তা দিয়ে একটি জাতীয় দলকে ভোটের ময়দানে টেনে সামনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। যদিও রাজ্যস্তরে যোগী আদিত্যনাথ, দেবেন্দ্র ফাড়নবীশের মতো বা অনুরাগ সিং ঠাকুরের মতো নেতারা রয়েছেন। কিন্তু যোগী আদিত্যনাথ ছাড়া বাদবাকিদের সকলের প্রভাবই রাজ্যস্তরে সীমিত। এই অবস্থায় বিজেপিকে এক নামে চেনা এবং নেতা হিসাবে সর্বময় বহুমাত্রিক প্রভাব বলতে যা বোঝায় সেই করিশমা দলের দুই-তিনজন ছাড়া বাকিদের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। অথচ রাজ্যস্তর থেকে নতুন নেতা তৈরির উপর বিজেপি নেতৃত্ব জোর দিলেও সেই অর্থে সম্ভাবনাময় নেতার দেখা পাচ্ছেন না বিজেপি নেতৃত্ব।

২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগেই এটাই বড় মাথাব্যথার কারণ শাসকের। যদিও দলীয় মহলেই জোর গুঞ্জন, নেতৃত্ব যেহেতু ইচ্ছে করলেই তৈরি করা যায় না, এটা সহজাত এবং স্বত:স্ফূর্ত প্রক্রিয়া। সেক্ষেত্রে বর্তমান পর্যায়ে খোদ দলের মধ্যেই দু-একজন নেতার এককপ্রবণতা অর্থাৎ একচ্ছত্র ভূমিকা ও আধিপত্যবাদ দলের ভেতর দ্বিতীয় সারির এবং নতুন প্রজন্মের নেতার পরিচিতি ও প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলে ও সরকারে ক্ষমতার অভিমুখ এক বা দুইজনের মধ্যে সীমিত হয়ে যাওয়ায় সমষ্টিগত নেতৃত্ব এবং নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠার প্রয়াস বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। আগামী লোকসভা ভোটে শাসক বিজেপি ১৬০টি আসনকে চিহ্নিত করে বিশেষ নির্বাচনি রণকৌশল গ্রহণ করেছে। কিন্তু দলের মধ্যে সম্ভাবনাময় নেতৃত্বের সঙ্কট এবং দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রতিশ্রুতিবান নেতা। উঠে না আসা দলের ভোট রণকৌশলকে কতটা অক্সিজেন জোগাবে সেটাই দলের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ।

BJP-1
Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.