ভবিষ্যৎ!!

 ভবিষ্যৎ!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :-হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যে বিপুল জয়ের পরে সোমবার,সংসদে শীতকালীন অধিবেশন সূচনার মুখেও সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে নাম না করে কংগ্রেসকে তীব্র কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।পরামর্শের ঢঙে বলেছেন,ভোটে পরাজয়কে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হিসাবে দেখা শুরু করুক বিরোধীরা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,উন্নয়ন সঠিকভাবে হলে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা বলে কিছু থাকে না।এই কথার সূত্রে প্রধানমন্ত্রী সম্ভবত বোঝাতে চেয়েছেন,চব্বিশের লোকসভা ভোটে তার সরকারের প্রতিষ্ঠানবিরোধিতাকে যারা যুদ্ধের আয়ুধ হিসাবে ব্যবহার করবেন বলে ভাবছেন, বাস্তবে তা কাজেই আসবে না।পৌনে দশ বছর ক্ষমতায় থাকার পরে মোদি ম্যাজিক কী পর্যায়ে রয়েছে,বিশেষত মোদি-আদানি সম্পর্কের রসায়ন ঘিরে কংগ্রেসের আক্রমণ,বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি-মূল্যস্ফীতি, মণিপুরে গৃহযুদ্ধের মতো বিষয়গুলিকে হিন্দিভাষী জনতা কী চোখে দেখছেন এবং পাশাপাশি হিমাচলপ্রদেশ ও কর্ণাটকে বিজেপিকে হারিয়ে ক্ষমতায় ফেরা উজ্জীবিত কংগ্রেস মুখোমুখি লড়াইয়ে ‘ব্র্যান্ড মোদি কে কতটা টক্কর দিতে পারে, এতগুলি বিষয়ের একত্রিত পরীক্ষা ছিল চার রাজ্যের নির্বাচন।ফলাফলে দুটি বিষয় স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।এক)মোদি একাই একশো, দুই)কংগ্রেসের অবস্থান ন যযৌ ন তস্থৌ। এবারের ভোটে কংগ্রেস অন্তত তিনটি রাজ্যে সরকার গড়তে পারলে বিজেপিবিরোধী জোটের অবিসংবাদিত নেতা হতেন রাহুল।কিন্তু সেটি হলো না। নেতৃত্বের প্রশ্নে নরেন্দ্র মোদি রাহুলের তুলনায় কয়েক আলোকবর্ষ যেমন এগিয়েছিলেন,তেমনই থেকে গেলেন।তৃণীরের সমস্ত বাণই এবার নিক্ষেপ করেছিল কংগ্রেস।জাতগণনার দাবি থেকে শুরু করে বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, মুষ্টিমেয় শিল্পপতির সঙ্গে সাঙাততন্ত্র,ধনী-গরিবের বৈষম্য।কিন্তু কোনও তিরেই লক্ষ্যভেদ হয়নি।বিশেষত কাস্ট সেনসাস বা জাতপাতভিত্তিক সমীক্ষার দাবি ছিল কংগ্রেসের প্রচারের মূল সুর।রাহুল গান্ধীকে নিয়ম করে প্রতিটি জনসভায় জাত সুমারির দাবি করতে দেখে মনে হচ্ছিল যেন প্রয়াত বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংয়ের আত্মা তার উপরে ভর করেছেন।বোঝা যাচ্ছিল, রাহুল চাইছেন কমণ্ডলকে রুখতে ভিপির ছায়া অনুসরণ করে ‘মণ্ডল-২’ চিত্রনাট্য নির্মাণ করে বাজিমাত করবেন।পারলেন না,উল্টো লোক হাসালেন।জাত সুমারি নিয়ে কংগ্রেসের অন্দরেই ঐকমত্য নেই।অতএব, এই দাবি করার মতো রাজনৈতিক বা নৈতিক অবস্থানে কংগ্রেস আছে কিনা,কিংবা এর পক্ষে-বিপক্ষে কী কী যুক্তি আছে তা নিয়েও কংগ্রেসের খোলামেলা আলোচনা হয়নি। এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ, কর্ণাটকের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া তার নিজের রাজ্যে জাত সুমারি সম্পন্ন করে হাতে রিপোর্ট নিয়ে বসে থাকলেও উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা কর্ণাটক প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ডি শিবকুমার হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কায় সেটি প্রকাশ করতে নারাজ। জাতপাতের রাজনীতি কংগ্রেসের সনাতনী ঐতিহ্যের পরিপন্থী,রাহুল কি তা বোঝেননি?তাকে সেকথা বোঝানোর মতো দলে পারদর্শী কেউ ছিলেন।কি না আমাদের জানা নেই।ভোটের ফল বলে দিয়েছে, ওবিসিদের জন্য কংগ্রেসের মুখে হঠাৎ এমন মরাকান্না ভোটারদের কাছে অপরিচিত ও রহস্যজনক বলে মনে হয়েছে। এমনকী,গতবারের হাতে থাকা জনজাতি ও তফশিল ভোটও পদ্মে পড়েছে।কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতৃত্বে মল্লিকার্জুন খাড়গে ছাড়া ওবিসি মুখ নামমাত্র।নীতীশ কুমার,লালু অথবা অখিলেশ যাদবের মুখে যেটা সহজ প্রগলভতায় মানিয়ে যায়, অনেক কষ্ট করেও রাহুলের মুখে তা মানায় কি!হঠাৎ একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওবিসি,ওবিসি করে চেঁচালেই কি রাতারাতি তাদের আস্থা অর্জন করা যায়?সেই সারসত্যটি জানেন বলেই নিজেকে ওবিসি বলে পরিচয় দেওয়া নরেন্দ্র মোদি এই স্পর্শকাতর ইস্যুতে প্রত্যাঘাতের রাস্তায় হাঁটেননি, প্রতিপক্ষের অপরিণামদর্শী আস্ফালন দেখে অলক্ষ্যে মুচকি হেসেছেন।প্রতিটি সভায় রাহুল জাত-সমীক্ষার দাবি করেছিলেন।কিন্তু সমীক্ষার খুড়োর কল দেখিয়ে ওবিসি ভোটারদের কতখানি গুরুত্ব দেওয়া হয়,যদি না তাদের বোঝানো যায় যে,এই সমীক্ষা হলে দিনের শেষে তাদের কতটা উপকার হবে। রাহুল গান্ধীর ‘জিতনা আবাদি উতনি হক’ একটি বিভ্রান্তকর কথা।প্রথম মণ্ডল কমিশনের রিপোর্ট লাগু হওয়ার পরে অনেক লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সংরক্ষণের যে ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিয়েছে তা লঙ্ঘনইবা করা যাবে কোন উপায়ে?কংগ্রেস সম্পর্কে এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর আপাতত ভবিষ্যতের ধোঁয়াশায়।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.