ভবিষ্যৎ চাহিদা মেটাতে কেন্দ্র রাজ্যের বড় উদ্যোগ ঃ রতন

 ভবিষ্যৎ চাহিদা মেটাতে কেন্দ্র রাজ্যের বড় উদ্যোগ ঃ রতন
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

অনলাইন প্রতিনিধি :- দেশে আগামীদিনে বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বড় ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ভারত সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রক। সেই লক্ষ্যে দেশের প্রায় প্রতিটি রাজ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিদ্যুৎ পরিকাঠামো উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত সরকার।

সেই উদ্যোগের ফলে দেশের সীমান্ত রাজ্য ত্রিপুরা আগামীদিনে উত্তরপূর্বের অন্যতম ‘বিদ্যুৎ হাব’ হিসেবে গড়ে উঠতে যাচ্ছে। কেননা, ত্রিপুরার মাটির নীচে রয়েছে অমূল্য গ্যাসের ভাণ্ডার।

যে সম্পদ ত্রিপুরাকে আগামীদিনে উত্তরপূর্বের ‘বিদ্যুৎ হাব’ ইসেবে গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রধান সহায়ক বলে মনে করা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে আগরতলা সূর্যমণিনগরস্থিত ১৩২ কেভি সাবস্টেশনটিকে ৪০০ কেভি সাবস্টেশনে উন্নত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর জন্য ব্যয় হবে ১৯১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা।

এ ব্যাপারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা এবং অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায়ও অত্যন্ত আন্তরিক এবং ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ভারত সরকারের এই মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বুধবার রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকদের নিয়ে সূর্যমণিনগর ১৩২ কেভি সাব স্টেশনের (পাওয়ার গ্রীড) যাবতীয় বিষয় এবং পরিকাঠামো খতিয়ে দেখেন।


এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎমন্ত্রী শ্রীনাথ বলেন, কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের উদ্যোগে প্রতিবছর দেশের প্রতিটি রাজ্যে সার্ভে করা হয়। বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখেই এই সার্ভে করা হয়। গোটা দেশের জন্য আগামী ২০৪০-৪১ অর্থ বছর পর্যন্ত কত বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে, এর সার্ভে যেমন করা হয়েছে, তেমনি রাজ্যগুলির জন্যও সার্ভে করা হয়েছে। সেই সার্ভে মোতাবেক দেখা গেছে, ত্রিপুরার জন্য আগামী ২০৩০-৩১ অর্থ বছর পর্যন্ত ৭০৩ মেগাওয়াট “এবং বাংলাদেশের জন্য ২০০ মেগাওয়াট মোট ৯০৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে ৷ সেই মতো রাজ্যের বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্টগুলির উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেমন রুখিয়াতে বর্তমানে ৬৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। সেটাকে ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জোর দেওয়া হয়েছে সৌরশক্তি অর্থাৎ সোলার প্ল্যান্ট গড়ার।মন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ লাগবে এবং উৎপাদন হবে, এটা যেমন একটা দিক, তেমনি সেই বিদ্যুৎ পরিবহণের জন্য অত্যাধুনিক বিদ্যুৎ পরিবাহী পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। তাই সূর্যমণিনগরে যে ১৩২ কেভি সাবস্টেশন আছে, উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরার এই সাবস্টেশনটি সর্বাধিক ক্ষমতা সম্পন্ন এবং অত্যাধুনিক। ভবিষ্যতের চাহিদার কথা ভেবে এখন এই ১৩২ কেভি সাবস্টেশনটিকে ৪০০ কেভি সাবস্টেশনে উন্নতি করতে হবে। এখন এই সাব স্টেশনটি থেকে বাংলাদেশের কুমিল্লা পাওয়ার গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান, ৪০০ কেভি সাব স্টেশন উত্তর পূর্বে আর কোথাও নেই। ভারত সরকারও এ ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নিজেও চাইছেন ত্রিপুরাতে ৪০০ কেভি সাব স্টেশন হোক । বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান, এই পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শেষ হলে এর সাথে যুক্ত হবে পালাটানা, মনারচক, রুখিয়া, বড়মুড়া, আর সি নগর, নিপকো বিদ্যুৎ উৎপাদন | প্ল্যান্টগুলি। একই সাথে যুক্ত হবে গকুলনগর, বোধজংনগর, ৭৯টিলা পাওয়ার গ্রীড, বাধারঘাট, উদয়পুর, তেলিয়ামুড়া, আমবাসা এবং ধর্মনগর ১৩২ কেভি সাব স্টেশনগুলি। শুধু তাই নয়, এর সাথে যুক্ত হবে আসামের শিলচর এবং দুর্লভছড়া বিদ্যুৎ সাব স্টেশন। এর মাধ্যমে সূর্যমণিনগর ৪০০ কেভি সাব স্টেশন যে যুক্ত হবে উত্তর পূর্বের পাওয়ার গ্রীডের সাথে। মন্ত্রী বলেন, প্রতিনিয়ত সর্বক্ষেত্রে বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে। ফলে বাড়ছে চাহিদাও। রেল, শিল্প, পরিবহণ, কৃষি, পানীয় জল সহ সব সেক্টরে বিদ্যুৎ অপরিহার্য। বিদ্যুৎ ছাড়া কোনও কিছু কল্পনাই করা যায় না। তাই বিদ্যুতের জোগান স্থিতিশীল রাখতেই হবে। শুধু তাই নয়, নির্ভরযোগ্য এবং উন্নত ভোল্টেজ বিদ্যুৎ চাই।


বিদ্যুৎমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ১২০০ থেকে ১৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। পরিকাঠামো এবং উৎপাদন বৃদ্ধি হলে আমরা সেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করে রাজ্যের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারি। বর্তমানে আমাদের দেশে ৪ লক্ষ ২৫ হাজার ৪০৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা রেকর্ড হয়েছে ২ লক্ষ ৪০ হাজার মেগাওয়াট। বর্তমানে আমাদের দেশ থেকে বাংলাদেশ, নেপাল এবং মায়ানমারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে দুই জায়গা থেকে। সেগুলি হলো ত্রিপুরার সূর্যমণিনগর এবং পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে। বিদ্যুৎমন্ত্রী এদিন বলেন, সূর্যমণিনগর সাব স্টেশনকে আপগ্রেড করতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডা. মানিক সাহা এবং অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছেন। বিদ্যুৎক্ষেত্রকে শক্তিশালী করার জন্য পরিষেবা ও পরিকাঠামো উন্নয়নে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সূর্যমণিনগরে ৭২ একর জমি রয়েছে। ৪০০ কেভি সাব স্টেশনের জন্য এই জমি যথেষ্ট বলে জানান বিদ্যুৎমন্ত্রী।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.