ভবিষ্যৎ চুরি!!

 ভবিষ্যৎ চুরি!!
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

ইরাকের একটি বিল ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে।গোটা বিশ্বজুড়ে পড়ে গেছে, শোরগোল।কারণ হলো, ইরাকের সংসদে এই প্রস্তাবিত বিলে বিয়ের বয়স কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশের এই নতুন প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়েছে, ইরাকে এখন থেকে মেয়েদের বিয়ের বয়স কমিয়ে ৯ করা হবে। আর ছেলেদের বিয়ের বয়স হবে ১৫।যদিও এতদিন পর্যন্ত ইরাকে আইনসম্মতভাবে বিয়ে করতে হলে বয়সের সর্বনিম্ন সীমা ছিল ১৮ বছর।কিন্তু দেশের সংসদে নতুন বিয়ের বয়সের প্রস্তাব করে যে সংশোধনী আনা হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে দেশের বাসিন্দারা এখন থেকে নিজেরাই বেছে নিতে পারবেন তারা কী ধর্মীয় রীতি মেনে বিয়ে করবেন নাকি সিভিল কোর্টে বিয়ে করবেন।আসলে ইরাকের বিচার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রবর্তিত এই বিতর্কিত আইনটি দেশের ব্যক্তিগত স্থিতি আইন সংশোধন করার লক্ষ্যেই আনা হয়েছে। বর্তমানে যেখানে মেয়েদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়েস ধরা হয়েছে ১৮ বছর।তা পরিবর্তন করে মেয়েদের বিয়ের বৈধ বয়স কমিয়ে ৯ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আর ছেলেদের বেলায় তা কমে দাঁড়াচ্ছে ১৫। বিলটি পাস হয়ে গেছে, ৯ বছরের কম বয়সি মেয়েদের আর ১৫ বছরের কম বয়সি ছেলেদের বিয়ে করার ক্ষেত্রে আর বাধা থাকবে না।
ইরাকে ১৯৫৯ সালের ব্যক্তিগত আইনের ১৮৮ নম্বর ধারায় মেয়েদের বিয়ের বয়স হিসেবে ১৮ বছরের মাপকাঠি চিহ্নিত হয়েছিল।যদিও এই আইনে একথাও বলা হয়েছিল যে, যদি বিচারক এবং পাত্রপাত্রীর অভিভাবক সম্মতি দেন তবে ১৫ বছরেরও তাদের বিয়ে হতে পারবে। এবার এই আইনই বদলে দিতে চাইছে কট্টরপন্থী শিয়া দলগুলি।সংসদে পেশ করা বিলের খসড়া প্রস্তাবে একথাও বলা হয়েছে। দম্পত্তির মধ্যে কোনও সমস্যা হলে স্বামীর মতামতই মানতে হবে স্ত্রীকে।শুধু তাই নয় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনও বিভেদ হলে সেক্ষেত্রে আদালত নয়, শেষ কথা বলবে শিয়া ও সুন্নি ধর্মের দপ্তর।ইরাকের সংসদে এই প্রস্তাব আসার পরই দেশজুড়ে প্রবল বিক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সেদেশের নারীরা। গত জুলাই মাসে শেষ দিকেই এই প্রস্তাবটি পেশ হয়েছিল সংসদে।সাংসদের আপত্তিতে সেবার প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করা হলেও এবার নতুনভাবে ফের একবার সংসদে এই বিতর্কিত প্রস্তাব এনে প্রভাবশালী শিয়া ধর্মগুরুরা চাপ বাড়াচ্ছেন আইন পরিবর্তনের জন্য।ঘটনা হলো, এই নতুন প্রস্তাবটি সংসদে একবার পাস হয়ে গেলে ইরাকে বাল্যবিবাহ ও শিশু শোষণের পরিমাণ আরও বহুগণ বেড়ে যাবে।এক্ষেত্রে ইরাক শুধুমাত্র একটা দেশ নয়, সমাজের একটি অংশ। এই বিল পিছিয়ে পড়া নারীরা অধিকার সুরক্ষার লড়াই এবং লিঙ্গ সমতার প্রচারের কয়েক দশকের অগ্রগতিকেও ক্ষুন্ন করবে। বাল্যবিবাহের ফলে স্কুলগুলোতে ড্রপ আউটের হার যেমন বেড়ে যাবে,তেমনি অল্পবয়সি মেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার উপর বড়বড় আঘাত আসবে। প্রাথমিক গর্ভধারণের জন্য পারিবারিক সহিংসতাও শুরু হয়ে যাবে। বিলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, বিভিন্ন মহিলা কল্যাণ গোষ্ঠী এবং সামাজিক বিকাশের লক্ষ্যে কাজ করা বিভিন্ন কর্মীরা তীব্র বিরোধিতায় নেমেছেন।যদিও জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফা একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছে। ইউনিসেফ বলছে এই বিল পাস হোক, কিংবা পাস না হোক, বর্তমানে চালু থাকা আইনের মধ্যেই ইরাকের ২৮ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ১৫ বছরের বয়সের আগেই।নতুন বিলের সমর্থকরা বলছেন,এই বিল পাস হলে ইসলামি আইনকে মানসম্মত রূপ দেওয়া যাবে এবং অল্পবয়সি মেয়েদের অনৈতিক সম্পর্ক থেকে দূরে রাখা যাবে।কিন্তু বাল্যবিবাহের কঠোর বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে, তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামগ্রিক বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে সমস্যাকে এড়িয়ে গিয়ে যেভাবে শুধুই ধর্মীয় কট্টরতাকে প্রাধান্য দিয়ে সমাজে পশ্চাৎমুখী প্রবণতায় শরিক হওয়ার যাত্রায় ইরাকের সংসদ পথে নেমেছে তা শুধু সভ্য সমাজকেই পথভ্রষ্ট করবে না,একই সাথে অগণিত মেয়ের ভবিষ্যতকেও চুরি করবে।এই বিল ক্রমান্বয়ে উত্তরাধিকার, বিবাহ বিচ্ছেদ, সন্তানের হেফাজতের বিষয়ের অধিকারকেও হ্রাস করতে প্রভাব ফেলবে। ভুলে গেলে চলবে না, শিশুদেরকে স্কুলের মাঠেই বেশি মানায়। বিয়ের পোশাকে নয়। অথচ ধর্মান্ধ দেশ ও তাদের ধর্মগুরুদের বুজরুকিতেই এগিয়ে চলা সমাজ যখন পুনরায় পশ্চাৎমুখী হয়, তখন তা বড় বিপর্যয়ের সংকেত বহন করে মাত্র।

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.