ভাঙনের পথে।।

 ভাঙনের পথে।।
এই খবর শেয়ার করুন (Share this news)

২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে আরও সংখ্যা বাড়িয়ে,তিনশোর বেশি আসন নিয়ে বিজেপির ক্ষমতায় ফেরার পরে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, জোট রাজনীতির যুগ আপাতত শেষ।সেখান থেকে মাত্র চার বছর।এর মধ্যেই ফের প্রমাণ হয়ে গেল রাজনীতি অসীম সম্ভাবনাময়।চব্বিশের নির্বাচনের এক বছর আগে ‘দেশ বাঁচাও’ ডাক দিয়ে গজিয়ে তৈরি হলো নতুন বিরোধী জোট, যার নাম ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স (ইন্ডিয়া)।এই নামটি অর্মত্য সেনের ‘আইডেন্টিটি পলিটিক্স’ আলোচনার ‘মাল্টিপল আইডেন্টিটি’ তত্ত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়েছিল অনেককে।
‘ইন্ডি’ জোটের সশব্দ পদধ্বনি নরেন্দ্র মোদিকে নতুন করে এনডিএর শরীরে প্রাণসঞ্চার করতে বাধ্য করেছিল। ‘অব কি বার, চারশো পার’- এর লক্ষ্য নিয়ে ভোটের ময়দানে নেমেও বিজেপি আটকে যায় ২৪০এ।শরিক দলের দাক্ষিণ্যে গঠিত হয় তৃতীয় মোদি সরকার। এরপর আগষ্টে প্রত্যাশা জাগিয়েও হরিয়ানা বিধানসভা ভোটে বিজেপির কাছে ধরাশায়ী হয় কংগ্রেস।এই জয়ের রেশ থাকতেই মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচন ফের বাজিমাত করে বিজেপি। শুধু তাই নয়,এই প্রথম মহারাষ্ট্রে বিজেপি একক বৃহত্তম দলের মর্যাদা পায়।বিরোধী শিবির ‘ইন্ডিয়া’র প্রাণে বায়ুচলাচল যে ক্রমশ কমে আসছে, তখনই বোঝা যায়।আর নতুন বছর পড়তেই তা আরও স্পষ্টতর হয়।মহারাষ্ট্রে শিবসেনা-কংগ্রেস-এনসিপির ‘মহাবিকাশ আঘাড়ি জোট’ ধাক্কা খাওয়ার পরেই ইন্ডিয়া মঞ্চের নেতৃত্বের ভার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দিতে হবে দাবি করে বসে তৃণমূল।
আগামী মাসে দিল্লী বিধানসভার ভোট। ইতিমধ্যে ‘ইন্ডি’ জোট কার্যত ছত্রখান। প্রথমে, আম আদমি পার্টি বিরুদ্ধে কংগ্রেস ভোটের ময়দানে নামার পরে ইন্ডিয়া মঞ্চ থেকে কংগ্রেসকেই বার করে দেওয়ার জন্য অরবিন্দ কেজরিওয়ালের হুঁশিয়ারি। তারপরেই দিল্লীর নির্বাচনে তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টি উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার আম আদমি পার্টিকে সমর্থন।শেষে তেজস্বী যাদব, ওমর আবদুল্লাদের ইন্ডিয়া মঞ্চের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন। দিল্লী প্রশ্নে বিরোধী মঞ্চের সমস্ত আঞ্চলিক দলের বক্তব্যের নির্যাস, ইন্ডিয়া মঞ্চে কংগ্রেস ও আপ দুই দলই রয়েছে। তবে দিল্লীতে আপ বড় দল। তাই বিজেপিকে হারাতে আপ-কেই সমর্থনের সিদ্ধান্ত।
কেজরিওয়াল তার সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতার ছবি এক্স হ্যান্ডেলে তুলে ধরে সমর্থনকারী দলগুলিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কংগ্রেসকে পাল্টা বার্তা দিয়ে বলেছেন, দিল্লীতে লড়াইটা আম আদমি পার্টির সঙ্গে বিজেপির, ইন্ডিয়া মঞ্চের সঙ্গে নয়।পরিস্থিতি এতটাই তিক্ততায় পর্যবসিত যে নয়াদিল্লী বিধানসভা কেন্দ্রে তার বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী সন্দীপ দীক্ষিতকে (দিল্লীর প্রাক্তন কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতের পুত্র) বিজেপির ঘুঁটি বলে নিশানা করেছেন কেজরিওয়াল। এ-হেন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে কংগ্রেসও পাল্টা বলে দিয়েছে, ইন্ডিয়া মঞ্চ তৈরি হয়েছিল লোকসভা নির্বাচনের জন্য, বিধানসভার ভোটে লড়াইয়ের জন্য নয়। আঞ্চলিক দলকে কংগ্রেস কোন্ কালেই বা প্রাপ্য গুরুত্ব দিয়েছে। দিল্লীর জোট-ছবি দেখে কংগ্রেস ঝেড়েকেশে বলে দিয়েছে, রাজ্যে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনকে কোথায় জোট বেঁধে লড়বে, তা সেই রাজ্যের পরিস্থিতি অনুযায়ী কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দলের নেতৃত্ব ঠিক করছেন। অতএব, দিল্লীর নির্বাচনে আপ বা বিজেপি, যে- ই জিতুক, ইন্ডিয়া মঞ্চে ভাঙন প্রায় নিশ্চিত। হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রে জয়ের কথা মাথায় রাখলেও বিজেপি, বিশেষত নরেন্দ্র মোদি কিন্তু পাঁচ বছর আগেকার সেই অপ্রতিরোধ্য কিংবা ক্যারিশমাটিক ভূমিকা নেই। প্রথমত, হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্রে বিজেপির বিপুল সাফল্য প্রমাণ করেছে, নরেন্দ্র মোদির জনসভার উপর দলের সাফল্য সর্বাংশে নির্ভর করে না। দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শক্তি বলে দাবি করার পরেও বাংলাদেশে যে অভিসন্ধিমূলক একটা রাজনৈতিক পরিবর্তন সূচিত হতে চলেছে, নয়াদিল্লী তার আন্দাজ পায়নি। এ অবশ্যই কূটনৈতিক ব্যর্থতা।তৃতীয়ত, প্রতিবেশী বলয়ের দেশগুলির সঙ্গে সাম্প্রতিক-অতীতে ভারতের সম্পর্ক ক্রমে খারাপ হয়েছে। চতুর্থত, মোদি সরকারের তথাকথিত ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ কায়েমের অভিলাষ যে শুধু ভারতেরই ক্ষতি করছে না, একই সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ায় তার সর্বনাশা প্রভাব পড়ছে, সেটিও কমে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হচ্ছে।
বিরোধীদের সামনে এ-সব ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ‘সুযোগ’। গত সেপ্টেম্বরে রাহুল গান্ধীর আমেরিকা সফর ইঙ্গিত দিয়েছে যে, লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে ওয়াশিংটন কেবল মোদির সঙ্গেই কথা বলছে না, অন্য মুখও খুঁজছে। মোদির সঙ্গে মোহন ভাগবতের সম্পর্ক অতীব মসৃণ, অন্ধভক্তরাও আর বুক ঠুকে এমন দাবি করতে পারছেন না। আর সংসদের শেষ অধিবেশনে অমিত শাহ কথিত ‘আম্বেদকর’ মন্তব্যটি বিরোধীদের হাতে অযাচিত অস্ত্র তুলে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। কিন্তু তা হতোস্মি, ইন্ডি জোটের কুশীলবেরা জোট ভাঙায় ব্যস্ত!

Dainik Digital

Dainik Digital

Leave a Reply

Your email address will not be published.