ভারতের আজন্ম বন্ধুরাষ্ট্র,কূটনৈতিক অভিধানে যাহাকে বলা হইবে স্ট্র্যাটিজিক পার্টনার সেই রাশিয়া সম্প্রতি পাকিস্তানের সহিত মউ স্বাক্ষর করিয়া ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তার কথা বলিল। একটি বন্ধ হইয়া যাওয়া ইস্পাত প্রকল্প ফের চালু করিয়া দিতে রাজি হইয়াছে মস্কো।বন্ধ অবস্থায় এতোদিন প্রয়োজনীয় ইস্পাতের জন্য ভারতের মুখাপেক্ষী ছিল পাকিস্তান।আমরা দেখিয়াছি, ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ডে অপারেশন সিন্দুর শুরু করিবার পর মস্কো একবারের জন্যও ভারতের পাশে থাকিবার কথা বলে নাই। বরং ‘যুদ্ধ বিরতি’ ঘোষণা হইবার পর মস্কো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে ডাকিয়া মউ স্বাক্ষর করিল। অন্যদিকে মোদি সরকার ঘোষণা মতন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠাইলো ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করিতে। সরকার ও ক্ষমতাসীন শিবির যখন পাকিস্তানকে যুদ্ধে পরাজিত করিবার বিজয়োল্লাসে মাতোয়ারা সেই সময়ে দেশের পররাষ্ট্র নীতি লইয়া দেশের বাহিরে এই ধরনের দৌত্য কেন?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ‘অপারেশন সিন্দুর’ কে ভারতের নিরাপত্তানীতিতে এই বাঁকবদল বলিয়া ঘোষণা করিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দৃঢ় নেতৃত্ব প্রদানের কৃতিত্ব প্রদান করিতেছেন। মোদি সরকারের দাবি, পাকিস্তানের চিন-নির্মিত আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে বোকা বানাইয়া সফলভাবে আঘাত হানিয়াছে। এতো কিছুর পরেও মোদি সরকার বিদেশে নিজের ভাবমূর্তি তুলিয়া ধরিবার জন্য এমন দল পাঠাইবার প্রয়োজন পড়িল? মহাশক্তিশালী সরকারকে আজ বিরোধী দলকেও পাশে টানিতে হইলো কেন?এই সব প্রশ্ন প্রথম হইতেই উঠিতে শুরু করে। প্রতিনিধি দল এই সময়ে বিশ্ব ভ্রমণে রহিয়াছে, কিন্তু কোনও মূলুকে তেমন সাড়া তাহারা পাইয়াছেন এমন সংবাদ বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া যাইতেছে না। ফলে প্রশ্নগুলি আবার মাথাচাড়া দিতেছে। সর্বমোট ৫৯ জন সংসদ সদস্যকে ৩২টি দেশে পাঠানো হইয়াছে। এই দলগুলি বিদেশি সংসদ সদস্য, গবেষক, সাংবাদিক ও থিঙ্কট্যাঙ্কের সহিত দেখা করিয়া সরকারের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান ব্যাখ্যা করিতেছে।
আগের প্রধানমন্ত্রীদিগের সময়ে এমন উদ্যোগ সকল দলের সহিত আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণের রেওয়াজ থাকিলেও এইবার তাহা হয় নাই।সরকার নিজেই বিরোধী কোন দলের কোন ব্যক্তি প্রতিনিধি দলে থাকিবেন তাহা বাছিয়া লয়।ভারতের ইতিহাস প্রমাণ, সংকটকালে সকল দল একসঙ্গে দাঁড়াইয়াছে।১৯৭১ সালের যুদ্ধের পর আইপিইউ সম্মেলনে লোকসভা স্পিকার জিএস ধিলনের নেতৃত্বে প্রণব মুখার্জি, জ্যোতি বসু ও শঙ্কর দয়াল শর্মার মতন নেতারা ভারতীয় প্রতিনিধিদলে ছিলেন। মে মাসে চারদিনব্যাপী অভিযানের পর ভারতের বৈদেশিক নীতির জাঁকজমকের আভ্যন্তরীণ দুর্বলতা স্পষ্ট হইয়া গিয়াছে।ভারত ঐতিহ্যবাহী ও ভারসাম্যপূর্ণ বৈদেশিক নীতি মানিয় চলিত।অটলবিহারী বাজপেয়ীর সময়েও এই নীতি অব্যাহত থাকিতে দেখা গিয়াছে।কিন্তু ২০১৪ সালে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসিবার পর হইতে এক ঝটকায় সেই নীতি পাল্টাইয়া গেল। ভারতের বৈদেশিক নীতিও হইয়া উঠিল মোদিকেন্দ্রিক।
দেশের অভ্যন্তরের ব্যক্তিপূজার সংস্কৃতি যেন বিদেশেও রপ্তানির চেষ্টা হইলো। বিদেশি নেতাদিগকে আমন্ত্রণ জানাইয়া মোদির ব্যক্তিত্বকেন্দ্রিক নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন হইলো, যেমন ২০২০ সালে ‘নমস্তে ট্রাম্প’ শো। যেই মঞ্চে অনুষ্ঠান হইবে তাহার নামাকরণ হইলো ‘নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম’। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসিয়া মোদি প্রথম আমন্ত্রণ জানাইলেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-কে। এরপর আসিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। দেশে ‘আবকি বার মোদি সরকার’ এর অনুকরণে মার্কিন মুলুকে’ আবকি বার ট্রাম্প সরকার’-এর হাস্যকর ইতিহাস আজিকেও কালের গর্ভে হারাইয়া যায় নাই। সময় আগাইয়া চলিবার সঙ্গে সঙ্গে বোঝা গেল মোদির ব্যক্তিত্বনির্ভর কূটনীতির সীমাবদ্ধতা। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলিয়াছেন, মোদি এখন অবধি ১১ বৎসরে ৭২ খানা দেশে ১৫১ বার সফর করিয়াছেন। ১০ বার কেবল আমেরিকাতেই গিয়াছেন। অথচ এই সকল দেশের কেহই অপারেশন সিন্দুর কিংবা ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানকে স্পষ্ট করিয়া সমর্থন করিল না।
প্রাক্তন বিদেশ সচিব নিরুপমা রাও লিখিয়াছেন, এই সকল দেশ ‘উভয় পক্ষের সংযম’ চায় বলিয়া বিবৃতি দিয়াছে।ইহাতে পাকিস্তান ভারতের ‘সমকক্ষ’ হিসাবে দেখা হইতেছে।এই ঘটনাটি কূটনৈতিকভাবে ভারতের ক্ষতি করিয়াছে।অতঃপর ভারতীয় মিডিয়ায় অতিরঞ্জন ও জাতীয়তাবাদী প্রচারণার ফাঁক খুঁজিয়া পাকিস্তান নিজেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ‘ভারতের ভিকটিম’ হিসাবে তুলিয়া ধরিয়া আন্তর্জাতিক প্রশ্নবাণ এড়াইয়া যাইতে পারিয়াছে। ২০২৩ সালে দেশের অভ্যন্তরে নির্বাচনের ডামাডোল বাজিতেছিল। বছরভর প্রচারে মোদিকে ‘দৃঢ় নেতা’ হিসাবে তুলিয়া ধরিবার বিশাল প্রচারযজ্ঞের একটি পরিণতি ছিল জি-২০ সম্মেলন। প্রচারের বেগে প্রধানমন্ত্রী মোদি বিশ্বগুরু হইলেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, সংকটকালে সেই ২০ দেশের কেহই ভারতের পক্ষে সরাসরি দাঁড়াইতেছে না। সার্ক আজ অস্তিত্বহীন, বিমসটেকের মতন জোটের সদস্যদেশগুলিও নীরবতা পালন করিতেছে।
সম্প্রতি বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের নিকট তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রাখিলেন কেন ভারতকে পাকিস্তানের সহিত এক পাল্লায় তোলা হইতেছে? কেন কোনও দেশ সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করিতেছে না? ভারত যখন অপারেশন সিন্দুরে আগাইয়া ছিল, তখন ট্রাম্পের ভূমিকা কী ছিল? জয়শঙ্কর নিরুত্তর রহিলেন। উল্টে ১৭ মে একটি ভিডিওতে জয়শঙ্কর বলিলেন, পাকিস্তানকে আগেই জানানো হইয়াছিল আক্রমণের কথা। এর প্রেক্ষিতে রাহুল গান্ধী আবার প্রশ্ন তুলিলেন, এই ঘটনায় ভারতের কয়টি রাফাল বিমান শত্রুরা নষ্ট করিল? এইবারও নিরুত্তর রহিলেন জয়শঙ্কর। তবে শাসক দল বিজেপি বরাবরের মতন রাহুলকে ‘পাকিস্তানের ভাষায় কথা বলিতেছেন, ‘নিশান-এ পাকিস্তান’ বলিয়া খোঁচা দিয়াছে। এই সকল কটূক্তিতে ঘরের অভ্যন্তরে বাহবা মিলিলেও বিশ্বমঞ্চে প্রশ্নগুলির উত্তর অমীমাংসিতই থাকিয়া যাইতেছে। তবে বিদেশে বসিয়া সেনাপ্রধান এইবার স্বীকার করিলেন, পাকিস্তান ভারতের একাধিক রাফাল ভূপাতিত করিয়াছে। প্রধানমন্ত্রী মোদির শাসনে ‘যুদ্ধবিরতি’র কথা জানিতে হইতেছে দূর দেশের শাসন প্রধান ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণায়, আবার অপারেশন সিন্দুরে আমাদিগের রাফাল ভূপাতিত হইবার সংবাদও জানিতে হয় বিদেশের সাংবাদিক সম্মেলনে।
অনলাইন প্রতিনিধি :-উত্তর সিকিমের বিভিন্ন জায়গায় আটকে থাকা পর্যটকদের এয়ারলিফ্ট দিয়ে উদ্ধারকাজ শুরু করল সেনা…
অনলাইন প্রতিনিধি :-পাকিস্তানের করাচিতে মালির কারাগার থেকে ২১৬ জন কারাবন্দি কয়েদি পালিয়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটে…
অনলাইন প্রতিনিধি :-গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলায় একদিনে ৫২জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত পাঁচ শতাধিক। অবরুদ্ধ…
অনলাইন প্রতিনিধি:-চলতি মাসের ১৫ থেকে ১৭ জুন কানাডাতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন। এই…
অনলাইন প্রতিনিধি :-তুরস্কের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মারমারিস এলাকায় মঙ্গলবার ভোরে ৫ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে মৃত্যু…
অনলাইন প্রতিনিধি :- ইতালির সবচেয়ে সক্রিয় দক্ষিণ-পূর্বের মাউন্ট এটনার আগ্নেয়গিরির একটি বড় অংশ ধসে পড়ে।…