ভারতের ভিসা ঢাকার আয় বন্ধে ছয় মাসে কমেছে ১২০ কোটি।।

অনলাইন প্রতিনিধি :- বাংলাদেশীদের জন্য গত কিছুদিন ধরে পর্যটন ভিসা দিচ্ছে না ভারত। ফলে বাংলাদেশ থেকে ভারতে লোকজনের যাতায়াত কমে গেছে।এ কারণে গত ৬ মাসে বাংলাদেশের রাজস্ব আয় কমেছে ১২০ কোটি টাকা। রাজস্ব কমে যাওয়ায় দেশের অর্থনীতি খাতের কর্মকর্তাদের কপালে চিন্তার ছায়া পড়েছে। এভাবে চললে বছর শেষে কয়েকশ কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে বাংলাদেশ। গত ৫ আগষ্ট গণ আন্দোলনের কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর বাংলাদেশে সৃষ্ট অরাজক পরিস্থিতির কারণে সারাদেশে নিরাপত্তাহীনতা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে ভারত সরকার বাংলাদেশ ভিসা কেন্দ্রগুলোতে কর্মী সংখ্যা কমিয়ে দেয়। ফলে বাংলাদেশীদের ভিসা দেওয়া অনেক কমে যায়। এক পর্যায়ের মেডিকেল ভিসা ও জরুরী ভিসা দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু পর্যটন ভিসা দেওয়া একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন যে কয়েক হাজার লোক ভারতে যাওয়া-আসা করতো তাদের সংখ্যা একেবারে কমে যায়। আর এ কারণে ভ্রমণ কর হিসেবে প্রাপ্ত বাংলাদেশের রাজস্ব আয়ও কমে যেতে থাকে। সরকারের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) ভ্রমণ করের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২০ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। এমনকী গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়েও ১১২ কোটি টাকা কম ভ্রমণ কর আদায় হয়েছে। গত জুলাই-ডিসেম্বরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভ্রমণ কর আদায় করেছে ৯২২ কোটি টাকা। এনবিআর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতীয় পর্যটক ভিসা বন্ধ থাকায় বাংলাদেশি পর্যটকদের ভারত ভ্রমণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। তবে যাঁদের আগে ভিসা নেওয়া আছে, তাঁরা যেতে পারছেন। ার্বিকভাবে সড়কপথে ভারতে পর্যটক যাওয়া কমেছে। আকাশপথে কলকাতা ও চন্নাইয়ের ফ্লাইট কমিয়েছে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো। সার্বিকভাবে অর্থনীতি কছুটা চাপে থাকায় এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশে-বিদেশে ভ্রমণ কমে গছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ভ্রমণ কর আদায়ের ক্ষ্য ছিল ১ হাজার ৪২ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৯২২ কোটি টাকা। গত র্থবছরের একই সময়ে ১ হাজার ৩৪ কোটি টাকা আদায় হয়েছিল। এনবিআরের প্রশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, ভারত ভিসা প্রদানে কঠোর নীতি অবলম্বন করায় এরতে যাত্রী যাওয়া আসা কমেছে। তাই ভ্রমণ করে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ভসেম্বর মাসে ভ্রমণপ্রেমীরা ভারত ভ্রমণে যান। কিন্তু গত ডিসেম্বরে ভ্রমণ করের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। ডিসেম্বর মাসে ২২৮ কোটি টাকার ভ্রমণ কর আদায়ের ক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ১৩১ কোটি টাকা।আকাশপথ থেকে মুলত বেশি ভ্রমণ কর আদায় হয়।বিমান টিকিট বিক্রির সময় বিমান সংস্থাগুলো এ বিষয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন,
এই ভ্রমণ করের টাকা কেটে রাখে। বিভিন্ন এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে,যাত্রী না পাওয়ায় ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে তারা। গত আগষ্ট মাসে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ভারতের পর্যটক ভিসা বন্ধ থাকায় কাইট সংখ্যা কমানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বিমান পরিবহণ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ ভারতের কলকাতা ও চেন্নাই পথে তাদের উড্ডয়ন বা ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেকে আামিয়েছে। বেসরকারী বিমান সংস্থা ইউএস বাংলা আগে সপ্তাহে কলকাতা ও চন্নাইয়ে ৩২টি ফ্লাইট পরিচালনা করত। এখন তা কমিয়ে ৯টিতে নামিয়ে এনেছে।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভিসা জটিলতার কারণে ভারতে ভ্রমণ কমে গছে। তাই এয়ারলাইনস শিল্পকে রক্ষা করতে এবং রাজস্ব আদায় বাড়াতে ভারতে পর্যটক ভিসা চালু ও চিকিৎসা ভিসা সহজ করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত সরকারের।দ্রুত জানুয়ারী মাসে ভ্রমণ কর বা আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। তাতে অভ্যন্তরীণ পথে বিমানযাত্রায় আবগারি শুল্কের পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করা হয়েছে। সার্কভুক্ত দেশ ভ্রমণে আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক ভাজার টাকা এবং সার্কভুক্ত দেশের বাইরে (এশিয়ার মধ্যে) ২ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে।এভাবে ভ্রমণ কর বাড়িয়েও সরকারের রাজস্ব আয় আগের পর্যায়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।